জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আপ্যায়ন বাবদ ৮৩ কোটি টাকা ব্যয় করেছে মর্মে অতিসম্প্রতি একটি মহল থেকে সংগঠিত অপপ্রচারের দাবি ও বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যাচার এবং পরিকল্পিত প্রোপাগান্ডা বলে দাবি করেছে কমিশন।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাতে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ঐকমত্য কমিশনের বরাতে বলেন, স্পষ্টতই যেহেতু এটি একটি উদ্দেশ্যমূলক প্রচেষ্টা, স্বাভাবিকভাবেই অপপ্রচারকারীরা কমিশনের কোনো ভাষ্য সংগ্রহ করেননি এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যের যথার্থতা যাচাইয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করেননি।
তিনি বলেন, অপপ্রচারকারীদের মিথ্যাচারের ফলে জনমনে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয় সেই লক্ষ্যে কমিশনের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো যাচ্ছে যে, চলতি বছরের ১৫ ফেব্রæয়ারি কার্যক্রম শুরু করার পর ২০২৪-২৫ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সর্বমোট বাজেট ছিল ৭ কোটি ২৩ লাখ ৩১ হাজার ২৬ টাকা। এর বিপরীতে ৩১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত কমিশনের ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৩১ হাজার ১২৬ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। কমিশনের মোট বরাদ্দের মধ্যে আপ্যায়ন খাতে বরাদ্দ ছিল ৬৩ লাখ টাকা, যার মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৪৫ লাখ ৭৭ হাজার ৬৮৫ টাকা।
এই আপ্যায়ন ব্যয়ের সিংহভাগ হয়েছে রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে আলোচনার সময় এবং কমিশনের বিভিন্ন বৈঠকে।
প্রথম পর্যায়ে (২০ মার্চ–১৯ মে ২০২৫) রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ৪৪টি বৈঠকে আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় হয়েছে ৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ২৩টি সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ব্যয় হয়েছে ২৮ লাখ ৮৩ হাজার ১০০ টাকা। প্রতিদিনের গড় ব্যয় ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কম। তৃতীয় পর্যায়ে ৭টি বৈঠকে ৩০টি দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন, এবং এই পর্বের মোট ব্যয় ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার ৬০০ টাকা।
এর বাইরে কমিশনের ৫০টি অভ্যন্তরীণ সভায় ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৫২০টাকা।রাজনৈতিক দল,নাগরিক সমাজ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক এবং তিনটি সাংবাদিক সম্মেলনসহ ১৩টি সভায় ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৩৪০ টাকা। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ১৩টি বৈঠকে আপ্যায়ন বাবদ ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৯৬০ টাকা। বিশেষজ্ঞগণ কোনো ভাতা বা সম্মানী গ্রহণ করেননি।
এছাড়া ৯ মাসে অতিথি আপ্যায়নের জন্য ব্যয় হয়েছে ২ লাখ টাকা, যার মধ্যে বিদেশি কূটনীতিক, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সম্পাদক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন অতিথি ছিলেন।
ওপরের বিস্তারিত হিসাব থেকে স্পষ্ট যে, ৮৩ কোটি টাকার ব্যয়ের দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এটি কেবল মিথ্যাচারই নয়, বরং ঐকমত্য কমিশন ও তার কাজকে হেয় করার এক সংগঠিত ও পরিকল্পিত অপপ্রয়াস।
কমিশন তার দায়িত্বকালীন সময়ে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা বজায় রেখেছে। গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা সহজেই কমিশন কার্যালয়ে উপস্থিত হতে পেরেছেন; সহসভাপতি ও সদস্যরা নিয়মিতভাবে সংবাদ সম্মেলন ও ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে তথ্য প্রদান করেছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা সরাসরি টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে।
কমিশন আশা করে যে, যেসব অসাধু মহল অসৎ উদ্দেশ্যে এই প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, তারা অবিলম্বে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। একই সঙ্গে কমিশন বিশ্বাস করে, দায়িত্বশীল গণমাধ্যমসমূহ সঠিক তথ্য প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্তির হাত থেকে রক্ষা করবে।

ডেইলি খবরের সর্বশেষ নিউজ পেতে Google News অনুসরণ করুন।
আপনার মতামত লিখুন :