ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে গাজায় আরও কমপক্ষে ১৪ ফিলিস্তিনি মারা গেছেন।এর মধ্যে আছে দুটি শিশু। সেখানে খাদ্যের সংকট নিয়ে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যখন বিশ্ববাসীর সামনে বেহায়ার মতো মস্করা করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেছেন। বলেছেন,অবরুদ্ধ এ ভূখন্ডে ‘বাস্তব দুর্ভিক্ষের’ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে ডকুমেন্টেড আকারে দেখা যাচ্ছে, গাজার অনাহারী মানুষ খাদ্যের জন্য পাগলের মতো এখান থেকে ওখানে ছুটছে। অনাহারে থেকে মৃতপ্রায় হাড্ডিসার মানুষে হাসপাতাল ভরে যাচ্ছে। বিবিসি, গার্ডিয়ান, সিএনএন, হারেৎজ সহ বিশ্বের সব মিডিয়ায় এসব দৃশ্য ও খবর প্রচারিত হচ্ছে সারাক্ষণ। তখন দম্ভ দেখিয়ে নেতানিয়াহু বলছেন, গাজায় খাদ্যের কোনো সঙ্কট নেই। গাজাবাসী অভুক্ত নেই। তার এই নির্লজ্জ মিথ্যাচারের নিন্দা উঠেছে তার দেশ থেকেই। তার দেশের দুটি মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা প্রকাশ্যে রিপোর্ট করেছে। তারা বলেছে, গাজায় যুদ্ধাপরাধ করছে ইসরাইল। মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ইসরাইল গাজায় যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ১৪৭-এ পৌঁছেছে। এর মধ্যে ৮৮ জন শিশু। সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করায় এসব মৃত্যু ঘটেছে। ইসরাইল মার্চ মাসে গাজার ওপর পূর্ণ অবরোধ জারি করে, যা আংশিকভাবে মে মাসে শিথিল করা হয়। তবে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থার গণদুর্ভিক্ষের সতর্কবার্তা সত্ত্বেও এরপরও সামান্য পরিমাণ মানবিক সাহায্য ঢুকতে দেয়া হয়েছে।
হাঁটতে থাকা লাশ-ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিপ লাজারিনি সোমবার বলেন, গাজায় থাকা তার কর্মীরা ক্ষুধায় কাতর মানুষদের ‘না মৃত, না জীবিত অবস্থায় হাঁটতে থাকা লাশ’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে জাতিসংঘের এক সম্মেলনে তিনি বলেন, শুধু ক্ষোভ ও নিন্দা জানানো যথেষ্ট নয়। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, খাদ্য সংকট নিরসন এবং সকল বন্দীর মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে, ইউএনআরডবিøউএর বিশাল কর্মী বাহিনীর মাধ্যমে বৃহৎ আকারে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হবে।
সোমবার স্কটল্যান্ড সফরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, গাজায় বহু মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে এবং এ পরিস্থিতির জন্য ইসরাইলের বড় দায়িত্ব রয়েছে। তিনি ক্ষুধার অবস্থাকে বাস্তব বলে উল্লেখ করেন, যা ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বক্তব্যের বিপরীত। নেতানিয়াহু রোববার দাবি করেন ‘গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ নেই।’ তবে সোমবার এক্সে পোস্ট করে নেতানিয়াহু স্বীকার করেন, গাজার অবস্থা কঠিন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে মিলে গাজায় ত্রাণ পাঠাতে কাজ চালিয়ে যাবে ইসরাইল। ওদিকে ট্রাম্প বলেন, আমরা কোনো বেড়া বা সীমারেখা ছাড়া খাদ্যকেন্দ্র স্থাপন করব, যাতে সহজে সাহায্য পৌঁছানো যায়। যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিলে গাজার মানুষের জন্য খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা বাড়াবে।
ত্রাণ প্রবাহ ও সমালোচনা-ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা গাজার কিছু এলাকায় হামলা সাময়িক স্থগিত রাখবে এবং নতুন করিডোর চালু করবে যাতে জরুরি সহায়তা প্রবাহ বাড়ানো যায়। জাতিসংঘ এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও তাদের মানবিক বিষয়ক প্রধান বলেছেন,সরবরাহের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি-জেনারেল টম ফ্লেচার আল জাজিরাকে বলেন, এটি সঠিক দিকের একটি পদক্ষেপ হলেও এখন পর্যন্ত আমরা যা করতে পেরেছি, তা প্রয়োজনের তুলনায় সমুদ্রের একফোঁটা মাত্র। তিনি উল্লেখ করেন, চলমান নিরাপত্তা ঝুঁকি, সীমান্ত বন্ধ, ভিসা প্রত্যাখ্যান ও কাস্টমস বিলম্বের কারণে ত্রাণ সরবরাহ এখনও মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্থ।
শিশুদের জন্য দুধের সংকট-গাজায় ভয়াবহ পরিস্থিতি ইসরাইলের যুদ্ধনীতির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমালোচনা বাড়িয়ে তুলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ১৪ জন অপুষ্টি ও ক্ষুধায় মারা গেছেন। গাজার আল-শিফা হাসপাতালের এক চিকিৎসক আল জাজিরাকে জানান,শিশু মুহাম্মদ ইব্রাহিম আদাস দুধের অভাবে অপুষ্টিজনিত কারণে মারা গেছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলেছে,শিশুদের দুধের মারাত্মক সংকটের কারণে মুহাম্মদ ইব্রাহিমের মতো হাজার হাজার শিশুর ধীরে ধীরে মৃত্যু হতে পারে। বর্তমানে গাজায় এক বছরের কম বয়সী ৪০,০০০-এর বেশি শিশু এ নৃশংস অবরোধের কারণে ধীরে ধীরে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে।
গুলি খাওয়া ত্রাণপ্রত্যাশীরা-এদিকে গাজায় মানবিক সাহায্য নিতে গিয়ে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে সোমবার কমপক্ষে ৮৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৪০ জন সরাসরি ত্রাণের অপেক্ষায় ছিলেন। চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)-এর বিতরণকেন্দ্রের কাছে এক হাজারের বেশি ত্রাণপ্রত্যাশী নিহত হয়েছেন। জিএইচএফকে জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থা কঠোর সমালোচনা করেছে- পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহে ব্যর্থতা এবং ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তাহীনতার কারণে।
আপনার মতামত লিখুন :