ইরানে ইসরায়েলের চলমান হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়াবে কি না, সে সিদ্ধান্ত এখনো নেননি বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন,‘একেবারে শেষ মুহূর্তে আমি সিদ্ধান্ত নেব।’হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেলেও সেখান থেকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের আলোচনা চলছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন,তাঁর সামনে সব ধরনের সম্ভাব্য সামরিক ও কূটনৈতিক ‘পদক্ষেপ’ তুলে ধরা হয়েছে। তবে, এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমরা ট্রাম্পকে বলতে শুনেছি, তিনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান। সেই সিদ্ধান্ত কী হবে বা কবে তা নেওয়া হবে, সে সম্পর্কে কিছুই অনুমান করা যাচ্ছে না।
ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে ইরানে নতুন করে হামলার ঘোষণা দেওয়ার পর পর দেশটির রাজধানী তেহরানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে তেহরানের পশ্চিমাঞ্চলে কারাজ শহরের পাশেও। লেবাননের সংবাদমাধ্যম আল মায়াদেনের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে,কারাজ শহর এবং এর উপকণ্ঠে আকাশে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তু ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে।
এদিকে বিবিসি জানিয়েছে, তেহরানসহ ইরানের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে অভিযান শুরুর কথা নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। এক এক্স পোস্টে এ তথ্য নিশ্চিত করা হলেও লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।ইরানে ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদ ও যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত না হওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে নিউইয়র্কেও। এর আগে হোয়াইট হাউসের সামনে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে।সামাজিক মাধ্যম এক্সে বিক্ষোভকারীরা তাঁদের বিক্ষোভের ভিডিও পোস্ট করছেন। এতে দেখা গেছে, শত শত মানুষ ম্যানহাটনে মিছিল করেছে। তারা ইরানে হামলার হুমকি এবং গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের নিন্দা জানান। তাঁদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘ইরানে নাক গলিও না’, ‘গণহত্যায় অর্থায়ন বন্ধ কর।’ইরানের দুটি গ্রামে অবস্থিত ‘সামরিক অবকাঠামো’ লক্ষ্য করে হামলা চালানোর আগেই বাসিন্দাদের সরে যেতে পরামর্শ দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে আরবি ও ফারসি ভাষায় এক টেলিগ্রাম বার্তায় এই পরামর্শ দেওয়া হয়। খবর এএফপির।
জরুরি সতর্কবার্তায় বলা হয়,ইরানি শাসকগোষ্ঠীর সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হামলা চালানোর আগেই ইরানের দুটি গ্রাম—আরাক ও খন্দাবের বাসিন্দা,প্রমিকসহ সেখানে অবস্থানরত সবাই যেন অবিলম্বে সরে যান।ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত আলোচনার মাধ্যমে নিরসনের প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে ফ্রান্স ও দেশটির ইউরোপীয় মিত্ররা। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর আল জাজিরার।
ফ্রান্সের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়ল বারোকে এ উদ্যোগের খসড়া তৈরির নির্দেশও দিয়েছেন মাখোঁ। খবরে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি আলোচনাভিত্তিক সমাধান প্রস্তাব করা হবে, যাতে দ্বন্দ্বের অবসান ঘটানো সম্ভব হয়। তবে এ পরিকল্পনার বিস্তারিত জানানো হয়নি।একই সঙ্গে মাখোঁ ইরানভিত্তিক এমন সব স্থাপনায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন,পারমাণবিক বা ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে যেগুলোর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এলিসি প্রাসাদ জানিয়েছে,ইরানের পারমাণবিক বা ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্কহীন লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়লি হামলা ক্রমশ বৃদ্ধি এবং ইরান ও ইসরায়েল উভয় দেশেই বেসামরিক প্রাণহানি বাড়তে থাকায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে,এ সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন, কারণ এগুলো গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি তৈরি করছে।এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েল ও ইরান থেকে ফরাসি নাগরিকদের স্বেচ্ছায় দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন মাখোঁ। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
হোয়াইট হাউসের সামনে একদল বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ করছেন। তাঁদের দাবি,ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র যেন আর জড়িত না হয়।বিক্ষোভকারীরা ইরানে ইসরায়েলি বোমা হামলা ও ইসরায়েলি বাহিনীকে কোটি কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষোভকারীরা যুদ্ধে সরাসরি জড়িত না হতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস বলেছে, ইসরায়েলের হামলায় ইরানে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৩৯ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে এক হাজার ৩২০ জনের বেশি। ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত সপ্তম দিনের মতো চলছে। খবর আল জাজিরার
হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস আরও বলেছে, নিহতদের মধ্যে ২৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১৫৪ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। বাকিদের পরিচয় দেয়নি সংস্থাটি। ২০২২ সালে মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে হতাহতের তথ্য জানিয়েছিল হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস।
সংস্থাটি বলেছে, হতাহতের তথ্য তারা ইরানের স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছে। ইরানে গড়ে তোলা নিজেদের নেটওয়ার্কের সহায়তায় তথ্য যাচাই করা হয়েছে।ইরান এখনও পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলা চলাকালে নিয়মিতভাবে হতাহতের তথ্য দেয়নি। ইরানের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ১ হাজার ২৭৭ জন আহত হয়েছে।যা অব্যাহত রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :