এবার মাদাগাস্কারের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনার অপশাসনের বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের বিক্ষোভকারীরা নতুন করে কর্মসূচি দেওয়ায় দেশটির রাজধানী আন্তানানারিভোর কেন্দ্রস্থল প্রায় অবরুদ্ধ করে রেখেছে দাঙ্গা পুলিশের সদস্যরা।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া প্রতিদিনের বিক্ষোভ সমাবেশ এবং তাতে জনতার স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণকে এখন প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০২৩ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর এখন ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপদেশটিতে এ ধরনের আন্দোলন আগে আর হয়নি। খবর এএফপির।
আন্দোলন শুরু হওয়ার পর তা থামাতে গত সোমবার ৫১ বছর বয়সী রাজোয়েলিনা তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের বরখাস্ত করেছিলেন। তবে তাতে বিক্ষোভের মাত্রা কমেনি, বরং তা রাজধানী আন্তানানারিভো থেকে ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য শহরে। আর এর মধ্যে রয়েছে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎস ও বিশ্বের ভ্যানিলা ক্যাপিটাল হিসেবে পরিচিত সামভাবা শহরও।
আজ শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা। তবে তার আগেই ওই এলাকাটি নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে।শহরটির ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাভেনিউয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব দোকানপাট। সেখানে টহল দিচ্ছে পুলিশের পিকআপগুলো।
পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের মতো মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থতার জন্য বিক্ষোভকারীরা রাজোয়েলিনার পদত্যাগ দাবি করে আসছে। নতুন প্রজন্মের ‘জেন-জি’ বিক্ষোভকারীরা এই আন্দোলনে রয়েছে সামনের সারিতে। তারা ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের প্রতি তাদের সমর্থন দিতে আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির বেশকিছু শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে, এরমধ্যে রয়েছে পানি ও বিদ্যুৎ শ্রমিকরা। এমনকি দেশটির বিরোধী দলও নতুন প্রজন্মের এই বিক্ষোভ কর্মসূচির প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছে।
গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে বিক্ষোভ সহিংস হয়ে উঠলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে জনতার সংঘাতে এ পর্যন্ত ২২ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরও কয়েকশ মানুষ। তবে রাজোয়েলিনার সরকার এই সংখ্যাকে গুজব ও অপতথ্য হিসেবে অভিহিত করেছে।
‘মিডিয়া মোঘল’ হিসেবে পরিচিত রাজোয়েলিনা প্রথম ক্ষমতায় আসেন ২০০৯ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক চাপের কারণে ২০১৩ সালে তিনি নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেননি। তবে ২০১৮ সালে ভোটের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতায় আসেন এবং ২০২৩ সালের নির্বাচনে পুনর্র্নিবাচিত হন। যদিও সেই নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিরোধী দলগুলো। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও তিন কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার এই দেশটি বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশের কাতারেই রয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, মাদাগাস্কারের তিন-চতুর্থাংশ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে।
আপনার মতামত লিখুন :