শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

বিজেপির উপহাসের জবাব দিলেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ৫, ২০২৪, ০৯:১৮ এএম

বিজেপির উপহাসের জবাব দিলেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা


ভারতের রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী গান্ধী পরিবারের মশাল এখন দেশটির প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর দুই সন্তান প্রিয়াঙ্কা ও রাহুল গান্ধী বহন করছেন। এ কারণে গত দশ বছর ধরে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল বিজেপির লাগাতার কটাক্ষ, অবহেলা আর যন্ত্রণার শিকার হয়ে আসছিলেন এই দুই ভাই-বোন।
ভারতীয় জাতীয়তাবাদের নামে দেশজুড়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদ ছড়িয়ে দেয়া বিজেপি নেতারা রাহুলকে হেলা করে সম্ভোধন করতো ‘পাপ্পু’ হিসাবে। আর প্রিয়াঙ্কাকে ডাকতেন ‘শাহজাদী’ হিসাবে। এছাড়াও বছরের পর বছর ধরে বিজেপির উপহাসের শিকার হয়ে আসছিলেন কংগ্রেসের এই দুই তরুণ নেতা।
গত এক দশক ধরে প্রতিটি নির্বাচনেই প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের এই দুই ‘গান্ধী’ পরিবারের সদস্য ছিলেন বিজেপির আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু সময় হঠাৎ করেই পাল্টে গেলো। দুদিন আগে বুথ ফেরত জরিপ সংস্থাগুলো বিজেপি ও এনডিএর জয় নিয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলে, তা সম্ভবত ফলছে না। বুথ ফেরত জরিপ সংস্থাগুলো সমীক্ষকেরা জানিয়েছিলেন, বিজেপি ও এনডিএ গতবারের চেয়েও ভাল ফল করে ৪০০ আসনের কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। কিন্তু বেলা এগারোটার চিত্র দেখাচ্ছে, শাসক দল তার খুব কাছাকাছিও পৌঁছাতে পারছে না। বরং বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ আশাতীত ভালো করছে।এবারের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ১০০ আসনের মার্ক ছুঁতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। যা গেলো দশ বছরের মধ্যে কংগ্রেসের সেরা পারফর্মেন্স। এমনকি এবারের বুথ ফেরত জরিপকে ভুলও প্রমাণ করেছে ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনীতিক দলটি। আর এর পেছনে বড় ভূমিকা রাখছেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা।মিস্টার গান্ধী কার্যত ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র মাধ্যমে সারাদেশে তার ভোটের প্রচার শুরু করেছিলেন। যদিও লোকসভা আসন জয়ে এই যাত্রা কতটুকু প্রভাব ফেলেছে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, পথচলায় জনগনের মন বুঝতে পেরেছিলেন রাহুল। রাহুল টেলিভিশনের পর্দা থেকে নিজেকে বের করে এনে জনসাধারণের কাছে এসেছেন, তাদের সঙ্গে এক হয়ে যেতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। সেই সঙ্গে বিজেপির চরিত্র ভোটারদের কাছে পরিস্কার করতে সচেষ্ট ছিলেন এবং বিজেপির ‘হিন্দুত্ববাদ’  ধারণাকে ভেঙে দিতে অবদান রেখেছেন। রাহুল গান্ধী বুঝতে পেরেছিলেন মাঠের ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে না পারলে বিজেপিকে ঠেকানো যাবে না। তাই মিস্টার গান্ধীর কুকুরছানা পোষার দৃশ্য, মানুষকে আলিঙ্গন করা, সমাজের সব স্তরের লোকেদের সাথে কথা বলা, শিক্ষার্থী থেকে থেকে ট্রাকচালক-মেকানিক সবার সমস্যা শুনেছেন তিনি। কংগ্রেসের পূর্বসূরী নেতার মধ্যে যে চরিত্রকে ভারতের তৃণমূল মানুষরা কখনও দেখতে পাননি, ঠিক সেই চরিত্র রাহুলের মধ্যে দেখতে পেয়েছেন ভারতের ভোটাররা। জননেতা হয়ে উঠার ক্ষেত্রে রাহুল সফলতা দেখিয়েছেন, যা লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে অবিষ্মরণীয় পুনরুত্থানকে নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী এবার যখন নির্বাচনে প্রার্থী হলেন না, তখন এনিয়ে তারা ভক্তরা হতাশ হলেও দলের জন্য দারুণ ম্যাজিক হিসাবে কাজ করেছে। প্রার্থী না হবার কারণে তিনি কংগ্রেসের হয়ে দেশজুড়ে প্রচারণা চালিয়ে যেতে পেরেছেন। তাই এই পদক্ষেপ স্পষ্টতই ফল দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এবার নির্বাচনে প্রিয়াঙ্কা একজন বক্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তিনি জনগণকে মোহিত করতে পারেন এবং তাদের সাথে সংযোগ স্থাপন করেন। মোদীর সব অভিযোগের বিরুদ্ধে পাল্টা আঘাত হেনেছেন। সেই সঙ্গে আমেথি ও রায়বরেলিতে কংগ্রেসের প্রচারে মূল কারিগর হিসাবে কাজ করেছেন প্রিয়াঙ্কা।
কংগ্রেস ক্ষমতায় গেলে হিন্দু নারীদের মঙ্গলসূত্র ও স্বর্ণালঙ্কার কেড়ে নেবে, বিজেপির এমন প্রচারণার মোক্ষম জবাব দিতেও সফলতা দেখিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। তিনি ভারতের জনগণকে মনে করিয়ে দেন, তার দাদী ইন্দিরা গান্ধী তার সব স্বর্ণালঙ্কার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেন এবং মা সোনিয়া মঙ্গলসূত্র উৎসর্গ করেছেন।এবারের নির্বাচনে কংগ্রেস ৫৪৩টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩২৮টি আসনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে, যা ছিল সর্বকালের সর্বনিম্ন, বাকি ২১৫টি আসন মিত্রদের জন্য ছেড়ে দেয়। মল্লিকার্জুন খার্গের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের এমন বড় সিদ্ধান্তের পেছনেও বড় ভূমিকা রাখেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা। এই সিদ্ধান্তেও উপকার পেয়েছে কংগ্রেস।লোকসভা নিবৃআচনে কংগ্রেস এখনও বিজেপির তুলনায় অর্ধেক আসন নিয়ে শেষ করতে পারে, কিন্তু গান্ধী ভাই-বোনরা তাদের দুর্দান্ত পারফর্মেন্সে বেশ উজ্জ্বল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কংগ্রেসের সংবাদ সম্মেলনে মিস্টার গান্ধী দলের পারফরম্যান্সে বোন প্রিয়াঙ্কার অবদানের কথা তুলেও ধরেন।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!