রাফায়েল বিশ্বে প্রথম শ্রেণির অত্যাধুনিক এবং মূল্যবান যুদ্ধবিমান। ফ্রান্সের তৈরি এই মাল্টিরোল ফাইটার জেট ভারতীয় বিমানবাহিনীতে যুক্ত হওয়ার পর এটি দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত ভারসাম্যে নতুন মাত্রা যোগ করে। কিন্তু সম্প্রতি সীমান্ত সংঘর্ষে পাকিস্তান একটি ভারতীয় রাফায়েল ভূপাতিত করেছে বলে ফ্রান্সের গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে, যা এই ফাইটার জেটটির গৌরবময় ইতিহাসে প্রথমবার যুদ্ধক্ষেত্রে ধ্বংসের ঘটনা।রাফায়েল বিশ্বের অন্যতম উন্নত মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি ১০ টন ওজনের এবং দুটি শক্তিশালী ইঞ্জিন দিয়ে চালিত। এটি ৩০ মিমি অভ্যন্তরীণ কামান,আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, লেজার-নির্দেশিত বোমা এবং দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত থাকে।
এই সাম্প্রতিক সংঘর্ষ শুরু হওয়ার আগে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হাতে ৩৬টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান ছিল, যা ফ্রান্স থেকে একটি বড় প্রতিরক্ষা চুক্তির আওতায় সংগ্রহ করা হয়।৬ মে মধ্যরাতে পাল্টাপাল্টি হামলায় পাক-ভারত সীমান্তে ফের উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। পাকিস্তান এও দাবি করে যে, তারা পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে তিনটিই হচ্ছে ফোর পয়েন্ট ফাইভ প্রজন্মের অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে ঠাসা রাফায়েল। ভারত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে কিছু না বললেও, ফরাসি গোয়েন্দা সূত্র সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে জানিয়েছে, যে অন্তত একটি রাফায়েল ধ্বংস হয়েছে-যা ইতিহাসে নজিরবিহীন।
পাকিস্তান আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একাধিক উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র এবং রাডার দিয়ে সজ্জিত যা উচ্চ আকাশে এবং দূরপাল্লায় প্রতিপক্ষের বিমানের গতিবিধি শনাক্ত এবং ধ্বংস করতে সক্ষম।রাফায়েলে অতি উচ্চ গতি, কৌশল এবং প্রতিরক্ষামূলক প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও যদি তা ভূপাতিত করা হয় তাহলে তা পাকিস্তানের প্রযুক্তিগত সক্ষমতার নিদর্শন।এদিকে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে এটি কী তবে ভারতের দুর্বলতা, যুদ্ধবিমানটির প্রযুক্তিগত ত্রুটি নাকি পাইলটের ভুল কৌশল। সেই সঙ্গে নয়াদিল্লির যুদ্ধকৌশলে কি তথ্যগত ঘাটতি ছিল তাও অনেকের মনে প্রশ্ন হয়ে দেখা গেছে।
ফরাসি কর্মকর্তারা রাফায়েল ধ্বংসের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এবং এরপরই নির্মাতা প্রতিষ্ঠান দাসো অ্যাভিয়েশনের শেয়ারের দাম হঠাৎ করেই ৬ শতাংশ কমে যায়। তারা খতিয়ে দেখছেন যুদ্ধবিমানটির প্রকৃত ধ্বংসের কারণ এবং এর প্রভাব।
এদিকে,প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের কেউ বলছেন,এটি পাকিস্তানের ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারের জয়ের নমুনা। আবার কেউ মনে করেন, রাফায়েল ব্যবহারে ভারত যথাযথ কৌশল প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও ভারত-নিন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে পাওয়ংা কিছু আলোকচিত্রে ফরাসি প্রস্তুতকারকের লেবেলযুক্ত ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে,তবুও বিমান বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন,এগুলো আসলেই রাফায়েলের অংশ কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এখনও পর্যাপ্ত সময় প্রয়োজন। এই ঘটনার সূত্রপাত পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর পাল্টা আঘাতে পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান, যার মধ্যে তিনটি রাফায়েল,ভূপাতিত হওয়ার প্রেক্ষিতে। ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের সীমান্ত রেখা বা লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর ক্রমবর্ধমান সামরিক উত্তেজনার জেরেই এ ঘটনা ঘটেছে।
ভারতের হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান দ্রæত ও কৌশলগতভাবে জবাব দিয়েছে। পাকিস্তান জানিয়েছে, ভারতের ৫টি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে আধুনিক ফোর পয়েন্ট ফাইভ জেনারেশনের ফ্রান্সের তৈরি ‘রাফায়েল’ যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেছেন, পাকিস্তান চাইলে ১০টি ভারতীয় ফাইটার জেট গুলি করে ভূপাতিত করতে পারত, কিন্তু তারা সংযম দেখিয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে এই ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি ‘দ্য হিন্দু’ প্রথমে তিনটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার খবর দিলেও পরে তা সরিয়ে ফেলে। এক মার্কিন বিশ্লেষক সিএনএনকে বলেন, যদি রাফায়েল যুদ্ধবিমান গুলি করে নামানো হয়ে থাকে, তবে তা ভারতের জন্য বড় ধাক্কা এবং সামরিক সক্ষমতার প্রতি লজ্জা।
পাকিস্তান বিমান বাহিনী বলছে, তারা এই কৃতিত্ব অর্জন করেছে তাদের অত্যাধুনিক জে-টেন সি এবং জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান খোয়ানা ছাড়াই। অর্থাৎ ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংসের সময় চীনের তৈরি বিশেষ প্রযুক্তির এই পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি।কোন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সংঘাত ছিল এক অর্থে চীনা ও পশ্চিমা প্রযুক্তির মধ্যে এক সরাসরি পরীক্ষামূলক লড়াই। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনী সম্প্রতি চীনের জে-১০সি যুদ্ধবিমান যুক্ত করেছে,যা ভারতের রাফায়েলের প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে বিবেচিত। এক ফরাসি গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, এটি ছিল প্রথমবার কোনো রাফায়েলে যুদ্ধবিমান যুদ্ধক্ষেত্রে ভূপাতিত হওয়া।মার্কিন বিশ্লেষকের ভাষায়, ‘এটি বড় ধরনের অগ্রগতি এবং প্রমাণ করে চীনের প্রযুক্তি এখন বিশ্বমানের।’
এর আগে, ২০১৯ সালের বালাকোট হামলার সময় পাকিস্তান বিস্মিত হয়েছিল এবং প্রতিক্রিয়া জানাতে একদিন সময় নিয়েছিল। কিন্তু এবার পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ছিল তাৎক্ষণিক ও সুসংগঠিত। সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে আগে থেকেই সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছিল—যদি ভারত আঘাত হানে, তবে প্রতিশোধ হবে সমানতালে নয়, বরং অতিরিক্তভাবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন,ভারত-পাকিস্তান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সরাসরি যোগাযোগ এবং পাকিস্তানের রাফায়েল ভূপাতিত করার দাবি দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত স্থিতিশীলতার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। একইসঙ্গে চীনা সামরিক প্রযুক্তির বিকাশ এই অঞ্চলে সামরিক ভারসাম্য বদলে দেয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এই ঘটনার পর ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন প্রতিরক্ষা ভারসাম্যের জন্ম দিচ্ছে এই ঘটনা।রাফায়েল ভূপাতিত হওয়ার ঘটনা শুধু একটি সাধারণ যুদ্ধবিমান ধ্বংস নয়, এটি একটি প্রতীক যা প্রযুক্তি, কৌশল এবং ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে নতুন করে ভাবনার সুযোগ করে দেয়। এটি কি পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কৃতিত্ব নাকি ভারতীয় কৌশলগত ব্যর্থতা তা নির্ধারণ করবে সময়, তদন্ত ও পরবর্তী বিশ্লেষণ।
আপনার মতামত লিখুন :