মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের চাবাহার বন্দরের ওপর থেকে ২০১৮ সালে দেয়া বিশেষ ছাড় প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে এই বন্দর ব্যবহারকারী দেশগুলিকে জরিমানার মুখে পড়তে হবে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ দিল্লির জন্য এক নতুন মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুক্রবার সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, আমরা চাবাহার বন্দরের জন্য নিষেধাজ্ঞায় দেয়া ছাড় প্রত্যাহারের বিষয় মার্কিন প্রেস বিবৃতি দেখেছি। বর্তমানে আমরা ভারতের উপর এর কী প্রভাব পড়তে পারে তা পরীক্ষা করছি। গত ১৬ সেপ্টেম্বর মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট বিবৃতি জারি করে জানায়, ইরানকে একঘরে করতে সর্বাধিক চাপ সৃষ্টি করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এবার থেকে যারা চাবাহার বন্দর নিয়ন্ত্রণ করবে কিংবা এই বন্দরে কাজ করবে, তাদের মার্কিনি নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে। কিন্তু এই বন্দর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর নিয়ন্ত্রণ ভার রয়েছে ভারতের উপর।
ভারতের কাছে চাবাহার বন্দর কেবল একটি বাণিজ্যিক পথ নয়, এটি একটি কৌশলগত লাইফলাইনও। পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরের ঠিক ১৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বন্দরটি ভারতের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। চাবাহার পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে আফগানিস্তান এবং পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে স্থলপথে বাণিজ্যিক সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে। এটি ভারত থেকে রাশিয়া ও ইউরোপ পর্যন্ত সংযোগকারী আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডোরের সঙ্গেও যুক্ত।
বন্দরটি ইতিমধ্যে আফগানিস্তানে গম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠানোর জন্যও ব্যবহৃত হয়েছে। তাছাড়া চাবাহার বন্দরের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে ভারত আরব সাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য মোকাবিলা করার পথ খোলা রেখেছিল ।
চাবাহারে প্রথম ভারত কোনও বিদেশি বন্দরে দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চুক্তি করেছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন মার্কিন সিদ্ধান্ত চুক্তির ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। একদিকে, দীর্ঘদিনের বন্ধু ইরানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক,অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব। একই সময়ে, ইসরাইল এবং উপসাগরীয় দেশগুলির সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছে নয়া দিল্লি। এখন ভারতকে যেমন তার বিনিয়োগ রক্ষা করতে হবে, একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতেও ভারসাম্যও বজায় রাখতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :