বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ বাধিয়ে লাগাম টানার চেষ্টায় ট্রাম্প

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২৫, ১১:৩১ পিএম

ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ বাধিয়ে লাগাম টানার চেষ্টায় ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরও পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। শেষ মুহূর্তের এসব হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে। এসব হামলা নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। এরপর দুই পক্ষকে রীতিমতো অনুরোধ জানিয়েছেন হামলা না চালাতে।
এদিকে ইরান-ইসরায়েল একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি ভাঙার অভিযোগ এনেছে। ইরান ঘোষণা দিয়েছে, ইসরায়েল হামলা চালানো বন্ধ করলেই এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এরমধ্যেই ইসরায়েলি দম্ভচ’র্ণ হয়েছে। গাজার অবস্থায় প্রায় ইসরায়েলিদের।
১২ জুন ইরানে ইসরায়েলের হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হয় যুদ্ধ। এরপর যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী। সর্বশেষ গত সোমবার রাতে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে বদলা নেয় ইরান। তবে এই হামলার পরপরই ট্রাম্প একটি ট্রুথ বার্তায় (নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) ইরানকে এই হামলার জন্য ধন্যবাদ জানান। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ইরান জানিয়ে এই হামলা চালিয়েছে। এর কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। যদিও তখন পর্যন্ত ইরান বা ইসরায়েল কোনো দেশই ঘোষণা দেয়নি,তারা যুদ্ধবিরতিতে সম্মত।
নিজের ঘোষণার পর দুই পক্ষই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করায় উষ্মা প্রকাশ করেন ট্রাম্প। গতকাল মঙ্গলবার এয়ারফোর্স ওয়ান বিমানে চড়ে পশ্চিমা বিশ্বের সামরিক জোট ন্যাটো সম্মেলনের উদ্দেশে যাত্রা করার ঠিক পরেই ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে একটি পোস্ট দিয়ে লেখেন, ‘ইসরায়েল ইরানকে আক্রমণ করবে না। সব যুদ্ধবিমান ঘুরে দাঁড়িয়ে ঘরে ফিরবে এবং আকাশে বন্ধুত্বসূচক ওয়েভ করবে ইরানের দিকে। কেউ আহত হবে না, যুদ্ধবিরতি কার্যকর!
এই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ!’-এদিকে সোমবার মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পর ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে যাবে। ইসরায়েল আনুষ্ঠানিক সম্মতি জানালেও পরে ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া এবং ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়ায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ট্রাম্প একপর্যায়ে বলেন,‘আমি পছন্দ করিনি যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলের সরাসরি হামলা চালানো।’ তিনি ইসরায়েলকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘ইসরায়েল, বোমা ফেলো না। এটা করলে তা হবে একটি বড় লঙ্ঘন।’
এদিকে ন্যাটো সম্মেলনে অংশ নিতে নেদারল্যান্ডস যাওয়ার পথে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এয়ারফোর্স ওয়ান বিমানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তিনি কি ইরানে ক্ষমতার পরিবর্তন দেখতে চান? জবাবে ট্রাম্প বলেন,‘ক্ষমতার পালাবদল মানেই বিশৃঙ্খলা, আর আদর্শ পরিস্থিতিতে আমরা অত বিশৃঙ্খলা দেখতে চাই না।’হামলায় বড় ক্ষতি-এদিকে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরও ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল। রাজধানী তেহরানে এমন হামলায় সেদিঘ সাবের নামে দেশটির আরেকজন পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হন। আল জাজিরার খবরে বলা হয়, তেহরানের শহরতলির ফেরদৌসি ও ভালি আসর এলাকার প্রধান সড়কের পাশেই বিজ্ঞানী সাবেরের ওপর হামলা হয়েছে। এ ছাড়া ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর বাবলসারে হামলা চালায় আইডিএফ। গণমাধ্যমটির খবরে আরও বলা হয়,যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আগে ইরানের বিভিন্ন জায়গায় ইসরায়েলি হামলায় ১০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ৩৩ জন। এরপর তেহরান জানায়, ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাতে ইরানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৬১০ জন নিহত হয়েছে।
এদিকে এসব হামলার জবাবে ইরান হামলা চালালে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে ইসরায়েল। বিবিসির খবরে বলা হয়, আইডিএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, কিছুক্ষণ আগে আইডিএফ ইরান থেকে ইসরায়েলের ভূখন্ডের দিকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে। এ হুমকি প্রতিহত করার জন্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাগুলো সক্রিয় রয়েছে।
গতকাল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হানার আশঙ্কায় ইসরায়েলে সতর্কতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাসিন্দাদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আশপাশের সুরক্ষিত এলাকায় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়েছে, হামলার আশঙ্কায় দেশটির উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় সাইরেন বেজেছে।আল জাজিরা জানায়, ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের বিরসেবা শহরে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে নিহত হয়েছে চারজন।তবে গতকাল হামলার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান। দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইরান যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে,যতক্ষণ ইসরায়েল তা মেনে চলে। তিনি আরও বলেন, ইরান সংলাপের জন্য প্রস্তুত। তেহরান আলোচনার টেবিলে বসেই ইরানি জনগণের স্বার্থ রক্ষা করবে।
যুদ্ধবিরতির প্রতিক্রিয়া-এদিকে যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দাবি, ইরানে পরিচালিত সামরিক অভিযানের সব লক্ষ্য ইতিমধ্যে পূরণ হয়েছে। এ কারণেই মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন তিনি।
যদিও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে,সোমবার রাতে নেতানিয়াহু তাঁর মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধানও উপস্থিত ছিলেন। তিনি সেখানে বলেন, অপারেশন রাইজিং লায়ন প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে এবং সব লক্ষ্য পূরণ করেছে। মন্ত্রিসভা বৈঠকে নেতানিয়াহু এই অভিযানে কোন কোন লক্ষ্য পূরণ হয়েছে, তার বিস্তারিত জানান।তবে ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়, একতরফাভাবে পরাজয় মেনে নিয়েছে এবং যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে।
এই যুদ্ধবিরতির আগে কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান। তবে কাতার অবশ্য এই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে। একই সঙ্গে আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কাতারের আমির শেভ তামিম বিন হামাদ আল থানি।
এদিকে যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ইরানের প্রতিবেশী লেবানন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম বলেন, যুদ্ধবিরতির কারণে তার দেশ যুদ্ধ মধ্যে আটকে পড়া থেকে রক্ষা পেয়েছে।যুদ্ধবিরতি স্বস্তি প্রকাশ করেছে মিসর ও জর্ডান। সৌদি আরব বলেছে, তারা ট্রাম্পের ঘোষণাকে স্বাগত জানায়। রাশিয়াও যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। এ ছাড়া একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির আশা প্রকাশ করেছে মস্কো। এ ছাড়া যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তে স্বাগত জানিয়েছে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন।ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির আগমুহূর্তে যা যা ঘটল-বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পকে প্রভাবিত করতে ওই বার্তায় প্রশংসা বা তোষামোদের কোনো কমতি রাখেননি রুটে। বার্তায় বেশ করেই রুটের এই আচরণ প্রকাশ পেয়েছে। বলা যায়—এতটা খোলাখুলি প্রশংসা সচরাচর দেখা যায় না।সংগৃহীত

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!