শনিবার, ২৮ জুন, ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

যুদ্ধ বিরতিতে এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২৫, ০৭:২৭ পিএম

যুদ্ধ বিরতিতে এক নতুন ইরান, জনগণের মতো বদলে গেছে সরকারও

ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ অবসানের পর ইরানি শাসকগোষ্ঠী ও রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম দেশজুড়ে একটি জাতীয় ঐক্যের বিরল প্রদর্শন উদ্যাপন করছে। তবে বিশ্লেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, এই শান্ত আবরণ শিগগির গভীর সামাজিক অস্থিরতায় রূপ নিতে পারে।ইরান ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,গতকাল বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান সারা দেশের মানুষ, এমনকি রাজনৈতিক বন্দীদেরও যুদ্ধকালীন সংযম প্রদর্শনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তুলনামূলকভাবে একজন মধ্যপন্থী নেতা হিসেবে তিনি জনগণের প্রশংসা করেছেন। কারণ, সরকার সাধারণ নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হলেও তারা রাস্তায় নামেনি, ক্ষোভ প্রকাশ করেনি।
তবে ইরান সমাজবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি সাঈদ মোইদফার সতর্ক করে বলেছেন,‘যদি সরকার জনগণের সঙ্গে বাড়তে থাকা দূরত্ব ঘোচাতে পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে যুদ্ধ শেষ হওয়াটা শান্তি নয়, বরং নতুন সামাজিক সংকটের সূচনা হতে পারে।’
আরেকটি বিষয় হলো যুদ্ধবিরতির পর ইরানের ইসলামিক মতাদর্শের ভাষা এক পাশে সরিয়ে এখন জাতীয় পরিচয়ের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। শিরোনামগুলো এখন ‘ইরান’ শব্দ দিয়ে শুরু হচ্ছে, ‘ইসলাম’ শব্দটি এর পেছনে পড়ে গেছে। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সাম্প্রতিক ভাষণে ‘ইসলামিক ইরান’ শব্দযুগলটি মাত্র একবার ব্যবহার করা হয়েছে, তাও সেটি প্রসঙ্গহীনভাবে।রাষ্ট্রীয় ও সংস্কারপন্থী সংবাদমাধ্যমগুলো এই পরিবর্তনকে প্রতিধ্বনিত করেছে। দৈনিক ‘এতেমাদ’ ও ‘আরমান মেল্লি’ তাদের প্রথম পাতায় জাতীয় সংহতির প্রশংসা করেছে এবং ঐক্যের আহ্বান জানানো বিশিষ্ট নাগরিকদের তুলে ধরেছে।
এক প্রতীকী আয়োজন হিসেবে তেহরান সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা ‘ও ইরান’ দেশাত্মবোধক সংগীত পরিবেশন করেছে তেহরানের আজাদি মনুমেন্টের নিচে। বেশ কিছু শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পূর্বনির্ধারিত সাক্ষাৎকারে দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রশংসা করেছেন। ‘এতেমাদ’ পুরো এক পৃষ্ঠাজুড়ে তাঁদের ছবি প্রকাশ করেছে।এই ঐক্যের আহ্বানের পেছনে সরকারের পক্ষ থেকে একধরনের দায়বোধও দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন সরকার এখন জনগণের কাছে ঋণী। সংস্কারপন্থী সমাজবিজ্ঞানী হামিদ রেজা জালাইপুর বলেন, ‘যুদ্ধ শেষে জনগণকে পুরস্কৃত করা সরকারের দায়িত্ব, যাতে জাতীয় ঐক্য শক্তিশালী হয়।’এমনকি কিছু রক্ষণশীলও একই সুরে কথা বলছেন। এক সাবেক সম্পাদক স্বীকার করেছেন, এখন সরকারের পালা—যুদ্ধের সময় জনগণের সহনশীলতার প্রতিদান দেওয়ার।
এদিকে সংসদ সদস্যরা এখন নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে তৎপর। তাঁরা সর্বসম্মতিক্রমে জাতিসংঘ পারমাণবিক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধের প্রস্তাব পাস করেছে, যেন ‘বিপ্লবী অবস্থান’ধরে রাখতে পারেন। জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সদস্য আহমদ বখশায়েশ বলেছেন, সরকারকে অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি নতুনভাবে সাজাতে হবে। কমিটির আরেক সদস্য বেনাম সাঈদিও সরকারবিরোধীদের সঙ্গে পুনর্মিলনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে প্রায় সব আলোচনা ও সমালোচনায় ‘সরকার’ শব্দটি এখন একটি ভদ্র ছদ্মবেশ। কেউই উচ্চারণ করে না সেই ব্যক্তির নাম, যিনি প্রকৃতপক্ষে দেশের সব নীতি নির্ধারণ করেন সর্বোচ্চ নেতা খামেনি। তিনিই যুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছেন, তিনিই নীতিগত পরিবর্তনের একমাত্র ক্ষমতাধারী।এখন আপাতত শাসকগোষ্ঠী ঐক্য ও জাতীয়তাবাদের ভাষা ব্যবহার করে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই ছাঁচ কত দিন টিকে থাকবে বা এটি আদৌ কোনো বাস্তব পরিবর্তন বয়ে আনবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!