মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের পরবর্তী ধাপ কী

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২৫, ০৯:১৪ এএম

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের পরবর্তী ধাপ কী

চুক্তি শেষে গাজা থেকে শেষ ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে সোমবার (১৩ অক্টােবর) মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আনন্দ-উল্লাসে তাদের পরিবারদের সঙ্গে পুনর্মিলনের মুহূর্তে মিসরে বিশ্বের শীর্ষ নেতারা একত্রিত হন গাজার ভবিষ্যৎ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরবর্তী ধাপ নিয়ে আলোচনা করতে।
দুই বছরেরও বেশি সময় পর গাজায় আর কোনো ইসরায়েলি জীবিত জিম্মি নেই হামাস ও তার মিত্রদের হাতে।
এদিকে, ইসরায়েল এক হাজার ৭১৮ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে যাদের অভিযোগ ছাড়াই আটক রাখা হয়েছিল, পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি সাজাপ্রাপ্ত আরও ২৫০ জন ফিলিস্তিনিকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে। খবর সিএনএনের। 
ট্রাম্পের ঘোষণা ও আনন্দের মুহূর্ত-মধ্যপ্রাচ্য সফরে ইসরায়েলি সংসদে (কেনেসেট) বক্তব্য দিতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “দীর্ঘ ও যন্ত্রণাময় দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটেছে। এটি নতুন মধ্যপ্রাচ্যের ঐতিহাসিক ভোর।”
ট্রাম্প আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করে বলেন,এই যুদ্ধবিরতি স্থায়ী হবে এবং গাজার যুদ্ধ শেষ হয়েছে।তবে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় প্রণীত ২০ দফা পরিকল্পনার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনো অনিষ্পন্ন রয়েছে।
জিম্মিদের মুক্তি ও আবেগঘন পুনর্মিলন-ইসরায়েলে সর্বত্র উল্লাসের ঢেউ বয়ে যায় যখন গাজা থেকে জিম্মিদের মুক্তির খবর আসে। তেলআবিবের "হোস্টেজেস স্কয়ার"-এ হাজারো মানুষ পতাকা হাতে চিৎকার করে বলে,“ধন্যবাদ ট্রাম্প!”দক্ষিণ ইসরায়েলের রেইম সামরিক ঘাঁটিতে মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মিরা দুই বছরেরও বেশি সময় পর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামাস সোমবার চারটি কফিন হস্তান্তর করেছে, যাতে নিহত চার জিম্মির মরদেহ রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। মরদেহগুলো পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিক শনাক্তকরণের জন্য তেলআবিবের জাতীয় ফরেনসিক ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।
ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি-ইসরায়েল যে এক হাজার ৭১৮ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে, তারা গাজায় প্রবেশের পর নাসের হাসপাতালে বিপুল জনতার অভ্যর্থনা পান।
এছাড়াও, দীর্ঘ সাজাপ্রাপ্ত ২৫০ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়, যাদের মধ্যে কয়েকজন পশ্চিম তীরে ফেরত যান এবং কয়েকজনকে মিসরে নির্বাসন দেওয়া হয়।
ইসরায়েল জানায়, যারা “সহিংস অপরাধে” দোষী সাব্যস্ত, তাদেরকে তৃতীয় দেশে পাঠানো হয়েছে, গাজা বা পশ্চিম তীরে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
ইসরায়েলি সংসদে ট্রাম্পের বার্তা-ট্রাম্প এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বক্তব্য রাখেন এবং স্পষ্টভাবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে বলেন যুদ্ধ পুনরায় শুরু না করতে।
ট্রাম্প বলেন, “ইসরায়েল যা অর্জন করতে পারত, তা অস্ত্রের মাধ্যমে অর্জন করেছে। এখন এই বিজয়কে শান্তি ও সমৃদ্ধিতে রূপান্তরিত করার সময়।”ট্রাম্প আরও বলেন, “আপনার উত্তরাধিকার যুদ্ধ নয়, শান্তির জন্য স্মরণীয় হবে।”
বিশ্বনেতাদের শার্ম আল-শেখে বৈঠক-মিসরের শার্ম আল-শেখে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে কাতার, জর্ডান, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের নেতারা ট্রাম্পের সঙ্গে যোগ দেন।
সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যদিও নেতানিয়াহু আমন্ত্রণ পেলেও উপস্থিত হননি।
যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপগুলোর মধ্যে প্রধান প্রশ্ন হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার শাসনব্যবস্থা কার হাতে থাকবে এবং হামাসের নিরস্ত্রীকরণ ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার কীভাবে সম্পন্ন হবে।
পরবর্তী ধাপ ও অনিশ্চয়তা-চুক্তি অনুযায়ী, হামাসের নিরস্ত্রীকরণের পরই ইসরায়েল সম্পূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহার করবে। তবে এই শর্তের কারণে নেতানিয়াহু চাইলে সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখার সুযোগ পাবেন।
হামাসের প্রধান আলোচক খালিল আল-হাইয়া বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে “এই চুক্তি মানে যুদ্ধ স্থায়ীভাবে শেষ হয়েছে।”তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন — হামাসের ভবিষ্যৎ কী হবে। ওয়েল ইউনাইটেড সার্ভিস ইনস্টিটিউটের (আরইউএসআই) গবেষক বুরচু ওজচেলিক বলেন, “এই চুক্তি একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের পথ দেখাচ্ছে, কিন্তু সেখানে হামাসের কোনো স্থান থাকবে কিনা তা এখনো অস্পষ্ট।”
ওজচেলিক আরও বলেন, “গাজায় নিরাপত্তা, প্রশাসন ও মানবিক সহায়তা বিতরণের জন্য একটি কার্যকর সরকার গঠন করতে হবে। এতে মিশর ও তুরস্কের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে।”ওজচেলিকের মতে, এখন সবাই চায় ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা যেন সফল হয় অন্তত আপাতত।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!