শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১ আশ্বিন ১৪৩২

হোয়াইট হাউসে পাকিাস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের সঙ্গে ট্রাম্পের রুদ্ধদ্বার বৈঠক

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫, ১২:৪৭ পিএম

হোয়াইট হাউসে পাকিাস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের সঙ্গে ট্রাম্পের রুদ্ধদ্বার বৈঠক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটনের ওভাল অফিসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং চিফ অব আর্মি স্টাফ (সিওএএস) ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকের পর প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ ও ফিল্ড মার্শাল মুনির ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। একটি গ্রুপ ফটোসেশনে ট্রাম্পকে তাঁর স্বভাবসুলভ বুড়ো আঙুল তুলে হাসিমুখে পোজ দিতে দেখা যায়।
রুদ্ধদ্বার এ বৈঠক ওয়াশিংটন সময় বিকেল ৪টা ৩০ মিনিটে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলায় প্রায় ৩০ মিনিট বিলম্বিত হয়। বৈঠকটি প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট স্থায়ী হয়।
হোয়াইট হাউসের প্রেস পুল থেকে বৈঠকের আগে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ এবং ফিল্ড মার্শাল মুনির ওভাল অফিসে সোনার গিল্টি করা চেয়ারে বসে অপেক্ষা করছেন। ওই সময় ট্রাম্প ব্রিফিংয়ে ব্যস্ত। এ সময় পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে হোয়াইট হাউসের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতেও দেখা যায়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও কক্ষে প্রবেশ করে দুই নেতাকে স্বাগত জানান।
এটিই যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তান সরকারের প্রধানের মধ্যে প্রথম আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। ছয় বছর আগে ২০১৯ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন।
বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘একজন মহান নেতা’ হোয়াইট হাউসে আসছেন। তিনি আরও বলেন,আমাদের কাছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং ফিল্ড মার্শাল আসছেন..তিনিএকজন মহান, মহান ব্যক্তি এবং প্রধানমন্ত্রীও তা-ই!
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বৈঠকে যোগ দিতে বিলম্ব হওয়ার বিষয়েও সচেতন ছিলেন বলে মনে হয়। কারণ নির্বাহী আদেশের ব্রিফিংয়ের সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাঁরা আসছেন এবং তাঁরা হয়তো এই মুহূর্তে এই কক্ষেই আছেন। আমি জানি না, কারণ আমাদের দেরি হয়ে গেছে।’
তবে, বৈঠকটিতে সাংবাদিকদের প্রবশ নিষেধ ছিল। ট্রাম্প সাধারণত এটি করেন না। কারণ তিনি সাধারণত নির্বাচিত সাংবাদিক এবং ক্যামেরাম্যানকে ওভাল অফিসে ছবি তোলার জন্য আমন্ত্রণ জানান। এই বৈঠক সম্পর্কে রেডিও পাকিস্তানের আগের প্রতিবেদন অনুসারে, দুই নেতার মধ্যে ‘পারস্পরিক স্বার্থ এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি’ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।
এ বৈঠকট এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হলো, যখন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে রয়েছেন।এর আগে, নিউইয়র্কে একটি মিডিয়া ব্রিফিংয়ে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পাকিস্তানি দৈনিক ডনের সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জানান,ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের মধ্যে সম্পর্ক ‘ধীরে ধীরে উষ্ণ হচ্ছে’।
বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে মোকাবিলার জন্য ভারতকে মিত্র হিসেবে দেখে আসছে। অন্যদিকে পাকিস্তানকে চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচনা করেছে।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারতের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্ক শীতল হতে শুরু করেছে। ভারতীয়দের জন্য ভিসা কঠিন করে তোলা, ভারতীয় পণ্যের ওপর ওয়াশিংটনের আরোপিত উচ্চ শুল্ক এবং গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত উত্তেজনা বন্ধে যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছেন প্রেসিডেন্টের বারবার এমন দাবি ভারতের প্রত্যাখ্যান করা এসব বিষয় সম্পর্ক ক্রমেই জটিল করে তুলেছে।
ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তা-ই নয়, রাশিয়া থেকে ভারত যদি তেল কেনা বন্ধ না-করে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প। কিন্তু পাকিস্তানের পণ্যে মাত্র ১৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। সেই শুল্কের হারও কমানোর চেষ্টায় আছে পাকিস্তান সরকার। বৃহস্পতিবারে বৈঠকে শুল্ক নিয়ে আলোচনা হয়েও থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ মঙ্গলবার ট্রাম্পের সঙ্গে গাজায় ইসরায়েলের হামলার বিষয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কয়েকটি দেশের নেতাদের এক বৈঠকে যোগ দেন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ নিউইয়র্কে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও দেখা করেন। এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস এবং আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধির ভাগ করা আকাঙ্খার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের সঙ্গে ‘গঠনমূলক ও দূরদর্শী সম্পর্ক’ জোরদার করার জন্য পাকিস্তানের প্রতিশ্রæতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
মুহাম্মদ ইউনূস দুই দেশের সম্পর্ক গভীর করার জন্য পাকিস্তানের উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক সংযোগ বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরেন।

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!