ফোনালাপ ফাঁসের জেরে বরখাস্ত হলেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা।দেশটির সাংবিধানিক আদালত আজ মঙ্গলবার তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ও বিক্ষোভের মুখে তিনি পদত্যাগের চাপের মধ্যে রয়েছেন।ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপে পেতংতার্ন কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনকে ‘চাচা’ বলে সম্বোধন করেন এবং এক থাই সামরিক কর্মকর্তার সমালোচনা করেন। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং তাঁর বরখাস্তের দাবিতে একটি আবেদনও করা হয়, যা এখন আদালতে বিবেচনাধীন।
পেতংতার্ন চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত হলে তিনি হবেন ক্ষমতাধর সিনাওয়াত্রা পরিবারের তৃতীয় সদস্য, যিনি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমতা হারাবেন। দুই দশক ধরে থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে এই পরিবার ব্যাপক প্রভাবশালী। তাঁর নেতৃত্বাধীন জোট সরকার এমনিতেই টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে এক গুরুত্বপূর্ণ রক্ষণশীল মিত্র জোট থেকে সরে দাঁড়ানোর পর পার্লামেন্টে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
সাংবিধানিক আদালত ৭-২ ভোটে পেতংতার্নকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁকে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন উপ প্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুংরুনগ্রæয়াংকিত।গত বছর পেতংতার্নের পূর্বসূরি স্রেত্তা থাভাইসিন বরখাস্ত হন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ,তিনি তাঁর মন্ত্রিসভায় কারাভোগ করা এক সাবেক আইনজীবীকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। স্রেত্তা বরখাস্ত হওয়ার কয়েক দিন পরই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে পেতংতার্ন।৩৮ বছর বয়সী পেতংতার্ন থাইল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর ফুপু ইংলাক সিনাওয়াত্রার পর দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী।দুর্বল অর্থনীতি চাঙা করার চেষ্টার মধ্যেই তিনি জনপ্রিয়তায় বড় ধাক্কা খেয়েছেন। গত সপ্তাহের এক জরিপে দেখা যায়, তাঁর জনপ্রিয়তা নেমে এসেছে মাত্র ৯ দশমিক ২ শতাংশে, যেখানে মার্চে ছিল ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ।
এদিকে,ফাঁস হওয়া ফোনালাপের জন্য পেতংতার্ন দুঃখ প্রকাশ করে দাবি করেছেন,এটি সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আলোচনার কৌশলের অংশ ছিল। তবে রক্ষণশীল এমপিরা তাঁকে কম্বোডিয়ার কাছে মাথানত করা এবং থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনীকে অপমান করার অভিযোগ এনেছেন।আদালতের এই সিদ্ধান্ত এসেছে এমন এক দিনে, যেদিন পেতংতার্নের বাবা থাকসিন সিনাওয়াত্রাও নিজ রাজনৈতিক সমস্যার মুখে পড়েছেন। থাকসিনের বিরুদ্ধে রাজতন্ত্রকে অবমাননার অভিযোগে মামলা চলছে। ৯ বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সংবাদপত্রে দেওয়া সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে এই মামলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার তাঁর বিচার শুরু হয়েছে।থাকসিন সিনাওয়াত্রা থাইল্যান্ডের সবচেয়ে আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি ১৫ বছর নির্বাসনে থাকার পর ২০২৩ সালে দেশে ফেরেন। দেশে ফিরে বিতর্কিত রাজতন্ত্র অবমাননা আইনের অধীনে মামলায় জড়িয়ে পড়েন। থাকসিনের ফেরার পেছনে ছিল ফেউ থাই পার্টি ও পুরোনো রক্ষণশীল প্রতিপক্ষদের মধ্যে একটি বড় রাজনৈতিক সমঝোতা।এই রক্ষণশীল গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে রয়েছে থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনী, যারা অতীতে দুইবার সিনাওয়াত্রা পরিবারের সরকারকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন রাজতন্ত্রপন্থী গ্রæপ।
আপনার মতামত লিখুন :