শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১ আশ্বিন ১৪৩২

জাতিসংঘের ভাষণে এবার যা বললেন ট্রাম্প

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫, ০৬:০৫ পিএম

জাতিসংঘের ভাষণে এবার যা বললেন ট্রাম্প

এবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া ভাষণটি ব্যাপক সমালোচনা তুলেছে। ভাষণের অর্ধেকজুড়ে ছিল নিজের বা তার প্রশাসনের প্রশংসা। বক্তব্যে বৈদেশিক নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রশংসা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সবখানেই নিজের কৃতিত্ব দাবি করেন তিনি। বিপরীত দিকে জাতিসংঘ, জলবায়ু নীতি ও বিশ্বব্যাপী অভিবাসন প্রচেষ্টার বিষয়গুলোকে তীব্র সমালোচনা করেন। বক্তৃতাটির মাত্র ১৭ শতাংশে ন্যাটো,যুদ্ধ বা বাণিজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ট্রাম্প মনোনিবেশ করেছিলেন।   
ভাষণটিতে ছিল ৪২৪টি বাক্য। ভাষণ দেওয়ার পর এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তাৎক্ষণিক খবরের শিরোনামে পরিণত হয় ট্রাম্পের ভাষণ। 
ডাটা বিশ্লেষণ করা ওয়েবসাইট ভিজুয়াল ক্যাপিটালিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প তার বক্তব্যটিতে ১৯৮ বাক্যে নিজেকে উল্লেখ করেছেন। বিদেশ নীতি, যুদ্ধ, ন্যাটো কিংবা বাণিজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ৭২টি বাক্যে। ৪৬টি বাক্যে অভিবাসন নীতি নিয়ে কথা ছিল। ৩৪টি বাক্যে জাতিসংঘকে সমালোচনার শিকার করেন তিনি। অন্যান্য মার্কিন অভ্যন্তরীণ বিষয়ের উল্লেখ ছিল ১২টি বাক্যে। ট্রেলিপ্রম্পটার বা একসেলেটর নিয়ে মন্তব্য করেন সাতবার।   
ট্রাম্প দীর্ঘদিন পর সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিয়েছেন। অভিবাসন নিয়ে তার আক্রমণাত্মক বক্তব্য ইঙ্গিত করে তিনি কেমন আমেরিকা বা বিশ্ব দেখতে চান। এই ভাষণের সুর ছিল সংঘাতমূলক। 
জাতিসংঘে ট্রাম্পের ভাষণটি কেবল তার বিষয়বস্তুর জন্যই নয়, বরং এর সংঘাতমূলক সুরের কারণে বিশ্বনেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ট্রাম্প আবারও জাতিসংঘকে ’মাথামোটা’ ও ’অকার্যকর’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রচেষ্টাকে বৈশ্বিক প্রতারণা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জলবায়ু নিয়ে আগের আমলেও তিনি একই ধরনের মনোভাব ব্যক্ত করে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে দ্ব›দ্ব সৃষ্টি করেছিলেন। 
অভিবাসন সম্পর্কে ট্রাম্প চরম বিভ্রান্তিমূলক মন্তব্যটি করেন। তিনি বলেন, ‘যদি তোমার সীমান্ত না থাকে, তাহলে তোমার দেশও নেই।’ এই কথা বলার পর অধিবেশনে কিছু মহল থেকে তুমুল করতালি আসে। আবার অনেক বিশ্বনেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো ট্রাম্পের সবক ভালোভাবে নেয়নি।   
ভাষণে ট্রাম্পের যে কথাগুলো নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় সেগুলো হলো- এক. ‘আমরা কখনই আমাদের সার্বভৌমত্বকে একটি অনির্বাচিত বৈশ্বিক আমলাতন্ত্রের কাছে সমর্পণ করব না।’ দুই. ‘আমেরিকা সমৃদ্ধ হচ্ছে কারণ আমরা আমেরিকাকে প্রথমে রাখি। অন্যান্য জাতিরও একই কাজ করা উচিত।’ তিন. ‘জাতিসংঘ শান্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কিন্তু প্রায়শই এটি ভন্ডামির একটি প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়িযেছে।’ 
চার. ‘আপনার নিজের সমস্যাগুলো সমাধান না করলে আপনার দেশ নরকে যাবে।’ 
ভাষণে জাতিসংঘের মিশনের প্রতি আগের মতোই একটি পরিচিত বিরোধিতা তুলে ধরা হয়। প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প জাতিসংঘকে ‘কেবল একটি ক্লাব’ বলে সমালোচনা করেছিলেন। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় বসে ক্রমাগত তিনি জাতিসংঘের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা কমিয়ে দিয়েছেন। মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছেন। ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা ইউএনআরডব্লিউ এর মতো সংস্থার তহবিল প্রত্যাহার করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা করেছে, তারা মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে জাতিসংঘের পর্যালোচনায় অংশ নেবে না। 
ভাষণের সমালোচিত বিষয় -বক্তব্য শুরু করার সময় ট্রাম্প বলেন, টেলিপ্রম্পটারটি কাজ করছে না। যারা এটি পরিচালনা করছে তারা নিজেরাই বড় সমস্যায় পড়েছে। পরে তিনি ’খারাপ এসকেলেটর’ নিয়ে জাতিসংঘকে উপহাস করেন। 
ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরষ্কারের জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন জানিয়ে বলেন, তিনি শুধু জাতিসংঘ নয়, বিশ্বব্যাপী সংঘাত নিরসনে একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। অথচ তিনি অতীতের যেসব সংঘাতের কথা উল্লেখ করেছেন, সেখানে শান্তি ফেরেনি। কোথাও এখনও যুদ্ধ চলছে।
ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোকে সমালোচনা করেন ট্রাম্প। যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পর্তুগাল ও ফ্রান্সের মতো দেশ সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ট্রাম্পের বক্তব্য, ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনের এই উত্থান সংঘাতকে ক্রমাগত উৎসাহিত করবে। স্বীকৃতি হামাসের জন্য পুরস্কারস্বরূপ হবে।  
অভিবাসন নীতির কড়া সমালোচনা করেন ট্রাম্প। তিনি দেশগুলোর প্রতিনিধিদের তিরস্কার করেন। তার দাবি, অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসনের সংকট মোকাবেলার সর্বোত্তম উপায় গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তা হলো অভিবাসীদের গণনির্বাসন এজেন্ডা। তিনি নিজেকে এই বিষয়ে দক্ষ দাবি করেন। আর অন্য দেশগুলো ‘নরকে যাচ্ছে’ বলে অভিহিত করেন। 
মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেন, জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর বৈজ্ঞানিক ভবিষ্যদ্বাণী ভুল ছিল। ফলে বায়ু খামারসহ অন্যান্য পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রকল্পগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। পরিবর্তে তিনি দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি কিনতে উৎসাহিত করেন। 
ট্রাম্পের মিথ্যা দাবি-ডিডবিøউর ফ্যাক্ট চেকে ট্রাম্পের মিথ্যা দাবি ধরা পড়েছে। ট্রাম্প জাতিসংঘ সদর দপ্তর পুনর্র্নিমাণের জন্য ৫০ কোটি ডলার ব্যয় করার বিষয়টি বক্তব্যে তুলে ধরেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আসলে ২.১৫ বিলিয়ন থেকে ২.৩১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। ট্রাম্প দাবি করেন, ‘আমি সাতটি যুদ্ধ বন্ধ করেছি’। তিনি বলেন, ‘কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড, কসোভো ও সার্বিয়া, কঙ্গো ও রুয়ান্ডা, পাকিস্তান ও ভারত, ইসরায়েল ও ইরান, মিশর ও ইথিওপিয়া এবং আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে যুদ্ধ আমার হাতে বন্ধ হয়েছে।’ কিন্তু তিনি যে বিরোধগুলো তালিকাভুক্ত করেছেন, অনেকগুলো এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে।  এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে ট্রাম্পের দাবিও বিভ্রান্তিকর প্রমাণিত হয়েছে। চীন সবেমাত্র বায়ুশক্তি ব্যবহার শুরু করেছে, ট্রাম্পের এমন দাবিও মিথ্যা। সূত্র: বিবিসি,ডিডবিøউ ও ভিজুয়াল ক্যাপিটালিস্ট    

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!