বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ মানেই তর্ক-বিতর্ক, উত্তেজনার রেণু ছড়াবে। আজ সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলে টিভি আম্পায়ার সৌম্য সরকারকে নট আউট দিলে আবারও ফিরে আসে দুই দলের উত্তেজনা। শেষ পর্যন্ত বিতর্ক চাপিয়ে মাঠে জয় পেল বাংলাদেশ দল। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে লঙ্কানদের ৮ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে ১-১ সমতায় ফিরেছে স্বাগতিকেরা।
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ফিফটিতে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ১৬৬ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ১১ বল হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। দলের জয়ের জন্য যখন ২ রান প্রয়োজন, দাসুন শানাকার করা বলে ব্যাকওয়ার্ড স্কায়ার লেগে ছক্কা মেরে দলের জয় ও ফিফটির ঘরে পৌঁছান শান্ত। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে এই বাঁহাতি ব্যাটারের এটি চতুর্থ ফিফটি।
নিজেদের মাঠে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান তাড়া করা জয়। ২০১৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ তাড়া করেছিল ১৬৪ রান।
ওপেনিং জুটিতেই ৪১ বলে ৬৮ রান তুলে জয়ের ভিড় গড়ে দেন লিটন দাস ও সৌম্য সরকার। ৭ম ওভারে মাতিশা পাতিরানার বলে সৌম্য আউট হলে ভাঙে এ জুটি। তাঁর আগে মাঠে ফেরে উত্তেজনা। বিনুরা ফার্নান্দোর করা চতুর্থ ওভারের ভেতরে ঢোকা প্রথম বলটা পুল করেছিলেন সৌম্য। ব্যাটের নিচ দিয়ে বল পেরিয়ে উইকেটকিপার কুশল মেন্ডিসের হাতে জমা পড়ে।
সঙ্গে সঙ্গে লঙ্কানদের আবেদনে সাড়া দিয়ে আম্পায়ার গাজী সোহেলও দেন আউট। সৌম্য নেন রিভিউ। রিভিউয়ে স্পাইক দেখা গেলেও সেটা ব্যাটের সঙ্গে বলের কি না, এটা নিয়েই ছিল প্রশ্ন। টিভি আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুল দিয়েছেন নট আউট। মূলত স্পাইক দেখা গেলেও ব্যাট ও বলের মধ্যে ব্যবধানও (ফাঁকা) দেখা যায়। শব্দটা এসেছে বল ব্যাট অতিক্রম করার পর, এ যুক্তিতে হয়তো টিভি আম্পায়ার সিদ্ধান্ত বদলান। বড় পর্দায় স্পাইক দেখে সৌম্যও গ্লাভস খুলে হাঁটছিলেন ড্রেসিংরুমের দিকে। যদিও আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলে আবারও ফিরেছেন উইকেটে।
টিভি আম্পায়ারের নট আউট সংকেত দেখে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন লঙ্কান ক্রিকেটাররা। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, মেন্ডিস, দাসুন শানাকাদের দেখে মনে হলো, আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে বেশ হতাশই তাঁরা। জুড়ে দেন তর্ক। ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে শ্রীলঙ্কার কোচ ক্রিস সিলভারউড এগিয়ে যান রিজার্ভ আম্পায়ার তানভীর আহমেদের কাছে।
বাংলাদেশ ম্যানেজার নাফীস ইকবালকেও কথা বলতে দেখা যায় তানভীরের সঙ্গে। লঙ্কান খেলোয়াড়দের ভালোভাবে সামলান অন-ফিল্ড আম্পায়ার সৈকত। যদিও সপ্তম ওভারে আউট হয়ে ফেরেন সৌম্য। নতুন জীবন পেয়েও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ২২ বলে ২৬ রান আসে সৌম্যর ব্যাট থেকে। ৯ম ওভারে ২৪ বলে ৩৬ রানে ফেরেন লিটনও।
তার পর আর বিপর্যয় গড়তে দেননি শান্ত ও তাওহীদ হৃদয়। তৃতীয় উইকেটে ৫৫ বলে ৮৭ রানের জুটি গড়েন দুজনে। শান্ত ৩৮ বলে ৫৩ ও হৃদয় ২৫ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন।
নিদহাস ট্রফি, ২০২২ এশিয়া কাপ, ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ—বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে ম্যাচ মানেই যেন রোমাঞ্চের পারদ উঠবে উঁচুতে। সিলেটে এই সিরিজ সেখানে ব্যতিক্রম হবে কেন!
এই ম্যাচে টস জিতে লঙ্কানদের ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ। সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে শরীফুল ইসলাম প্রথম ওভারে নিয়েছেন মেডেন। দ্বিতীয় ওভারে আভিষ্কা ফার্নান্দোকে ফিরিয়ে তাসকিন আহমেদ দারুণ শুরু এনে দেন বাংলাদেশ দলকে। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ২ রান করা আভিষ্কা এই ম্যাচে ৭ বল মোকাবিলায় কোনো রানই নিতে পারেননি।
দ্বিতীয় উইকেটে আরেক ওপেনার কুশল মেন্ডিস ও কামিন্দু মেন্ডিসের ৪২ বলে ৬৬ রানের দুর্দান্ত জুটিতে সেই বিপর্যয় ভালোভাবে সামলে ওঠে শ্রীলঙ্কা। তবে ৯ম ওভারে বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় ব্রেক-থ্রু এনে দেন সৌম্য সরকার। আগের ম্যাচে ফিফটি করা কুশল এই ম্যাচেও এগোচ্ছিলেন সে পথে, কিন্তু সৌম্যর বলে উইকেটকিপার লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়ে আজ ফিরেছেন ২২ বলে ৩৬ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে। মেরেছেন ৩টি ছক্কা ও ২টি চার।
থিতু হওয়া কামিন্দু মেন্ডিসকে ১০ম ওভারে রানআউটে ফেরান রিশাদ হোসেন। ২৭ বলে ৩৭ রান এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। তার পর সাদিরা সামারাবিক্রমাকে (৭) ফিরিয়ে লঙ্কানদের ওপর চাপ তৈরি করেন মোস্তাফিজুর রহমান।
কিন্তু পাঁচ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে আজও ছোটখাটো ঝড় তোলেন চরিত আসালাঙ্কা। বাংলাদেশের বোলারদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে ৩টি ছক্কা ও ১টি চারে ১৪ বলে করেছেন ২৮ রান। ১৪ তম ওভারে এই তাঁর ঝড় থামান শেখ মেহেদী হাসান।
ষষ্ঠ উইকেটে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও দাসুন শানাকার বলে ৩৭ বলে ৫৩ রানের জুটির সৌজন্যে স্কোরটা ১৬০ পেরোয় শ্রীলঙ্কার। ম্যাথুস ৩২ ও শানাকা ২০ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ, তাসকিন, মেহেদী ও শরীফুল।
আপনার মতামত লিখুন :