সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

উপজেলা নির্বাচনে ভোটারের ‘আকাল’: মেজর হাফিজ

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ৮, ২০২৪, ০৭:১৭ পিএম

উপজেলা নির্বাচনে ভোটারের ‘আকাল’: মেজর হাফিজ

নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত বলেই উপজেলা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারের ‘আকাল’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম।

বুধবার (৮ মে) দুপুরে রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির চিত্র তুলে ধরে এ মন্তব্য করেন তিনি।

হাফিজ বলেন, ‘বাঙালিরা ১৯৩৭ সাল থেকে ভোট দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচিত করে এসেছে। আজকে দেশে গণতন্ত্র নির্বাসনে ভোট ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আজকে দেশে উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে, টেলিভিশনগুলোতে দেখাচ্ছে। কেন্দ্রগুলো খাঁ খাঁ করছে, কোনো ভোটার সেখানে যায় নাই। কেন এই অবস্থা হলো? কেন মানুষ ভোট দিতে পারে না? কেন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার বিলুপ্ত হলো? কেন দেশে আইনের শাসন নাই? কেন মানুষের মৌলিক অধিকার নাই। কারণ ভোট ব্যবস্থাকে ওরা ধ্বংস করে দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যে লক্ষ্য অর্জনের জন্য ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ আমরা যুদ্ধ করেছিলাম কোথায় গেল সেই সামাজিক মূল্যবোধ? মানবিক মর্যাদা-সাম্য, সামাজিক সুবিচার বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ থেকে বর্তমান বাংলাদেশ ক্ষমতাসীন সরকারের ‍দুঃশাসনের কারণে।’

বিশিষ্ট এ মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ‘আজকে প্রয়োজন আবার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো ব্যক্তিদের। অত্যন্ত দুঃখ লাগে এ লোককে আমরা ভুলে যেতে বসেছি, তরুণসমাজ হয়তো তার নামও জানে না। অথচ আজকে বাংলাদেশের তরুণসমাজ যদি একজন রোল মডেল খুঁজে বের করে সেটি হবেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি এ দরিদ্র সন্ত্রাসকবলিত, দুর্নীতিগ্রস্ত এ রাষ্ট্রব্যবস্থাকে গণতন্ত্রে উত্তরণ করতে পারে আজকে যদি দেশে এরকম আরও শত শত ডা. জাফরুল্লাহ সৃষ্টি হয়। যেহেতু এদেশে আমাদের সমাজ আর ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো ব্যক্তিদের ধারণ করতে পারে না যেই কারণে আজকে বাংলাদেশের এ দুর্দশা।’

প্যালেস্টাইনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী নৃশংস বর্বর হামলার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কোথায় আজকে আমাদের ছাত্রসমাজ, কোথায় আমাদের তরুণেরা, কোথায় কোনো প্রতিবাদ তো দেখি না। খোদ আমেরিকাতে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে, আমরা মুসলমান বলে দাবি করি, আমাদের মধ্যে কোনো প্রতিবাদ দেখি না।’

তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের বিষয় বাংলাদেশের সব প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গুম-খুন-দুর্নীতির ফলে আমরা একটা নির্জীব জাতিতে পরিণত হয়েছি। এখন আর একাত্তরের মতো অগ্নি স্ফূলিঙ্গ দেখা যায় না। একাত্তরের ছাত্র-তরুণদের কথা ভাবলে এখনও আবেগ তাড়িত হয়ে পড়ি। আমি ৬০০ ছাত্রকে রিক্রুট করেছিলাম আমার ব্যাটালিয়ানে। আমি একমাত্র অফিসার ছিলাম এ ৬০০ সৈনিকের মধ্যে চারমাস ওদের নিয়ে যুদ্ধ করেছিলাম, এ ৬০০ সৈনিকের মধ্যে ১০০ রণাঙ্গনে জীবন দিয়েছে, দেশ তাদের কাছে কত প্রিয় ছিল।’

বিএনপির নেতা বলেন, ‘আজকে ছাত্রদের সামনে, তরুণ যুবকদের সামনে কোনো রোল মডেল আছে, নাই।  ‍হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পরে একজন উপন্যাসিক বাংলাদেশে আছেন, নাই। একজন ভালো কবির নাম আপনারা বলতে পারবেন, সাহিত্যিকের নাম বলতে পারবেন, নাই। বাংলাদেশের সমাজ একটা মন্দা সমাজ, নষ্ট সমাজ, রাজনৈতিক অঙ্গনে তো অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে দেশ ও সাধারণ মানুষের চিন্তা আমাদের ছাত্রসমাজের মধ্যে নাই, যুবকদের মধ্যে নাই। সবাই আছে হালুয়া-রুটির লোভে আর রাজনৈতিক দলগুলো আছে শুধু ক্ষমতার চিন্তায়, কীভাবে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে কিংবা কীভাবে ক্ষমতায় থাকা যাবে। এখানে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী স্থান কোথায়, এখানে মুক্তিকামী তরুণদের স্থান কোথায় যেজন্য  আমরা যুদ্ধ করেছি। মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের সেই যুদ্ধ কি ব্যর্থ হয়ে গেল? ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ছিল গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ।’

সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে ‘রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধারা’ ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মরণসভার আয়োজন করে।

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ফজলুর রহমান, সাবেক সাংসদ রুমিন ফারহানা, সহপ্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, নাসির উল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা সভায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সহধর্মিণী শিরিন হক ও ছেলে বারিশ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!