মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর, ২০২৫, ১৯ কার্তিক ১৪৩২

জনমনে জিজ্ঞাসা বাড়ছে যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে? তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২৫, ০৮:৪৭ এএম

জনমনে জিজ্ঞাসা বাড়ছে যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে? তারেক রহমান

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে দেশে সংঘাত, অপপ্রচার ও অপকৌশল চলছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, ঠিক সময়ে নির্বাচন হবে কি না। বর্তমান পরিস্থিতির ফলে কোনো অপশক্তির কাছে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় কি না, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আগামী নির্বাচনে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে দেশে সংঘাত, অপপ্রচার ও অপকৌশল চলছে। কৌশল ও অপকৌশলের পার্থক্য না বুঝলে,অপশক্তির কাছে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বাংলাদেশের এ মুহূর্তে মাঠে থাকা সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এমন বিপদের কথাও স্মরণ রাখার জন্য আমি বিনীত অনুরোধ জানাই।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, যারা নিজ নিজ এলাকায় জনগণের সমর্থন পেতে গণসংযোগ করছেন, সবাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত শহীদ জিয়ার অনুসারী। খালেদা জিয়ার সৈনিক। বিএনপির কর্মী ও ধানের শীষের সমর্থক। মনে রাখবেন, ধানের শীষ জিতলে আপনি জিতেছেন। 
তারেক রহমান বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করছেন। চাকরি কিংবা পেশাগত কারণে অনেকে যেমন প্রবাসী হয়েছেন, একইভাবে বিগত ১৫-১৬ বছরে কেউ কেউ ফ্যাসিস্টের রোষানলে পড়েও প্রবাসী হতে বাধ্য হয়েছেন। দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিরলস ভূমিকার জন্য প্রবাসীদের অভিনন্দন জানান তিনি। 
তারেক রহমান আরও বলেন, লাখো প্রবাসী দূর থেকে কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠান। জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান এই মুহূর্তে ৬ থেকে ৭ শতাংশ। সুতরাং দেশে প্রবাসীদের পরিবার ও তাদের অর্থসম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম বিশেষ দায়িত্ব। প্রবাসী বাংলাদেশিরা দীর্ঘদিন থেকেই জাতীয় নির্বাচনে ভোট প্রদানের অধিকার ও সুযোগ চেয়ে আসছিলেন। আসন্ন নির্বাচনে তাদের সেই আশা অনেকাংশেই পূরণ হতে যাচ্ছে। এবারই প্রথমবারের মতো বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫০ লাখের মতো প্রবাসী ভোটদানের সুযোগ পাচ্ছেন। আমি প্রবাসী ভাইবোনদের ভোট প্রদানের এই সুযোগকে একটি সম্মানজনক স্বীকৃতি হিসাবে বিবেচনা করি। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ভবিষ্যতে প্রবাসীদের ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া আরও কীভাবে সহজ করা সম্ভব হয়, সে পদক্ষেপ আমরা অবশ্যই নেব। 
উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে ও বিদেশে আমাদের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। অথচ নারীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে রাষ্ট্র ও সমাজের উদাসীনতা ইদানীং মনে হয় একটু প্রকট হয়ে উঠছে। শনিবারের একটি পত্রিকার রিপোর্টে দেখলাম আগস্ট মাসে সারা দেশে ৯৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১৪টি। এর মধ্যে সাতজনকে ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে। আর এই সময়ের মধ্যে ৯৮ জন নারী হত্যার শিকার হয়েছেন। নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসাবে গণ্য হতে পারে না। নারী এবং শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষায় সামাজিক উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আমলের বর্ণনা দিয়ে তারেক রহমান বলেন, শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছিল। দেশের নির্বাচনিব্যবস্থাকে বিগত ১৫ বছরে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিল। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে-ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ও কৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকেন, তাহলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না। 
তারেক রহমান আরও বলেন,অন্তর্র্বতী সরকারের সময়ও জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে। যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে? নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে। একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অন্তর্র্বতী সরকারকেও যতটুকু সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে সহযোগিতা করে আসছি। অথচ আমরা দেখছি, প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্যনতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। এর পরিণতি সম্পর্কেও আমাদের সতর্ক থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

লন্ডনে ডেকে নেওয়া হল সালাহউদ্দিন আহমদকে: দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদকে জরুরি ভিত্তিতে লন্ডনে ডেকে নিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল সকালে তিনি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।তবে,কী কারণে সালাহউদ্দিন আহমদকে লন্ডনে ডেকে নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। দলের কেউ কেউ মনে করছেন, জুলাই জাতীয় সনদ এবং নির্বাচনী জোট বিষয়ে সালাহউদ্দিনের সঙ্গে তারেক রহমানের বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচন একই দিনে চায় বিএনপি।

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!