ডেইলি খবর ডেস্ক: সারাদেশের বিভিন্ন খালে-বিলে সাকার ফিশ ধেখা মিলছে। এর ভয়ানক অবস্থা রাজধানী বুড়িগঙ্গা নদীতে উপস্থিতি দিনদিন ভয়ংরুপ নিচ্ছে। সাকার মাছ ছাড়া বুড়িগঙ্গায় জেলের জালে অন্য কোনো মাছ মিলছে না। বুড়িগঙ্গায় অতিরিক্ত দূষণের কারণে জলজ জীববৈচিত্র্য নষ্ট হয়ে গেছে অনেক আগেই। এর মধ্যে `মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা` হিসেবে বুড়িগঙ্গাসহ দেশের নদী-বিল তো বটেই, ডোবা-নালার ঘাড়েও চেপে বসেছে ভীনদেশি এক মাছ, যার নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ। জলজ বস্তু সংস্থান এবং দেশি মাছের অস্তিত্বের জন্য এটি বর্তমানে ভয়ানক হুমকি হয়ে উঠেছে। তবে যথাযথ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিকল্প ব্যবহারের মাধ্যমে এই সাকার ফিশই দেশের অর্থনীতির নতুন দিগন্ত হয়ে উঠতে পারে।
এক সময় অ্যাকুরিয়ামের শোভা বাড়াতে এবং এর কাচে জন্মানো শ্যাওলা পরিষ্কার করার উদ্দেশ্যে এই মাছ আমদানি করা হয়েছিল। শ্যাওলা খেয়ে কাচকে পরিষ্কারও রাখে সাকার ফিশ। কিন্তু অ্যাকুরিয়ামের এই মাছ এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিভিন্ন নদ-নদী এবং জলাশয়ে। বর্তমানে বুড়িগঙ্গায় জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে উঠে আসে এই রাক্ষুসে মাছটি।
প্রায় একইভাবে সাকার ফিশের বিস্তার ঘটেছিল ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে। সাকারের উৎপত্তিস্থল অ্যামাজনের গহীন বনে হলেও বর্তমানে মাছটি দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় সব দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ব্যাপক বিস্তারের ফলে কিছুদিন ভোগান্তি পোহালেও বর্তমানে মাছটি থেকে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখছে মেক্সিকোর জেলেরা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইনসাইডার নিউজের একটি প্রতিবেদনের বরাতে জানা যায়, মেক্সিকোতে এক সময় `ডেভিল ফিশ` হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সাকার মাউথ ক্যাটফিশকে প্রক্রিয়াজাত করে শুঁটকি বানিয়ে পোষা প্রাণী, যেমন কুকুর-বিড়ালের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সেই খাদ্য রপ্তানি করে দেশটি বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে।বর্তমানে মেক্সিকোতে সাকার মাছকে ঘিরে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। প্রতিবেদনে এমনই দুই উদ্যোক্তা ভাই জুযান কার্লস ও ফ্রান্সিসকোর গল্প তুলে ধরা হয়েছে।
পেশায় জেলে ফ্রান্সিসকো বলেন, এক সময় নদীতে জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে উঠত সাকার মাছ, যার বাজারে কোনো দাম ছিল না। বিষাক্ত ভেবে কেউ এই মাছ খেত না। সেই সময়ে তাদের মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এরপর ২০১৪ সালে কয়েকজন গবেষকের সহযোগিতায় মাছটির পুষ্টিগুণ এবং উচ্চ প্রোটিনের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রাণীখাদ্য হিসেবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপরই তাদের আর পেছনে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে সাকার মাছ বিক্রি করেই এই দুই ভাই আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি লাভ করছেন।
সাকার মাছ প্রক্রিয়াজাত করার জন্য দেশটিতে ইতোমধ্যে একাধিক প্রসেসিং ফার্ম তৈরি হয়েছে। এসব ফার্মে জেলেদের কাছ থেকে মাছ সংগ্রহ করে মাছের ছাল ছাড়িয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে কাটা হয়। এরপর সেটি ফ্রিজিং করে শক্ত হয়ে আসলে আলাদা আলাদা টুকরোগুলোয় কেটে নিয়ে ড্রাই মেশিনে শুকানো হয়।পরবর্তীতে মাছের টুকরোগুলো শুকিয়ে এলে মোড়কজাত করা হয় সাকার ফিশের শুঁটকি। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফর্নিয়াসহ অন্যান্য অঙ্গরাজ্যে সাকার ফিশের এই শুঁটকি পশুখাদ্য হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বর্তমানে মেক্সিকো থেকে বিপুল পরিমাণে সাকার ফিশ শুঁটকি বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে নদীগুলোতে সাকার ফিশের আধিক্যতা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তাই এটিকে কেবল গলার কাঁটা হিসেবে বিবেচনা না করে, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় উপযুক্ত গবেষণা এবং একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই রাক্ষুসে মাছটিকে কাজে লাগিয়ে নতুন শিল্পখাত তৈরির বিষয়টি আমলে নিতে পাওে, লাভবান হতে পারে দেশের মৎস্য ব্যবসায়ীরা। সংগৃহীত

ডেইলি খবরের সর্বশেষ নিউজ পেতে Google News অনুসরণ করুন।
আপনার মতামত লিখুন :