মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের নির্বাচন

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৪, ১০:৪৪ পিএম

ভারতের নির্বাচন


বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতে বইছে লোকসভা নির্বাচনের হাওয়া। আগামী ১৯ এপ্রিল শুরু হবে ভোটগ্রহণ। গত মার্চে দেশটির নির্বাচন কমিশন জানায়, মোট সাত দফায় এবারের লোকসভা নির্বাচন হবে। সপ্তম দফার ভোট হবে ১ জুন। ৪ জুন ফল প্রকাশ। ১৬ জুন শেষ হবে বর্তমান লোকসভার মেয়াদ।
লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোট হবে ২৬ এপ্রিল। তৃতীয় দফা ৭ মে, চতুর্থ দফা ১৩ মে, পঞ্চম দফা ২০ মে ও ষষ্ঠ দফার ভোট হবে ২৫ মে। ৪৪ দিনের এই নির্বাচনে জয়ীদের নিয়ে গঠিত হবে ১৮তম লোকসভা। 
এ ছাড়া সিকিম, ওডিশা, অরুণাচল প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ এই চার রাজ্যে লোকসভার সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনও হবে। লোকসভার এই নির্বাচনের সঙ্গেই হবে বিহার, গুজরাট, হরিয়ানা, ঝাড়খন্ড, মহারাষ্ট্র, ত্রিপুরা,উত্তরপ্রদেশ,পশ্চিমবঙ্গ,তেলেঙ্গানা,হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান, কর্ণাটক, তামিলনাড়– বিধানসভার কিছু আসনের উপনির্বাচন।
ভারতের নির্বাচনে খরচ কত, কোত্থেকে আসছে?
প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজিব কুমার বলেন, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৯৬ কোটি ৮০ লাখ, যার মধ্যে ৪৯ কোটি ৭০ লাখ পুরুষ এবং ৪৭ কোটি ১০ লাখ নারী। ১ কোটি ৮২ লাখ নতুন ভোটার রয়েছে। নির্বাচনে ৫৫ লাখ ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হবে। পোলিং স্টেশন রয়েছে ১০ লাখ ৫০ হাজার। নির্বাচনী কর্মী হিসেবে যুক্ত থাকবেন দেড় কোটি মানুষ। 
ভারতের শাসনব্যবস্থা: ভারতের শাসনব্যবস্থা ব্রিটিশ ও মার্কিন শাসন পদ্ধতির সংমিশ্রণ। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ২৮টি অঙ্গরাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের একটি ইউনিয়ন হলো ভারতের সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারকে বলা হয় ইউনিয়ন গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া। ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি, যিনি সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ দেন ও শপথবাক্য পাঠ করান।
ভারতের সংসদের দুটি কক্ষ। উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা। এই কক্ষের সদস্যরা অঙ্গরাজ্যগুলোর বিধানসভা ও লোকসভার সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। তাঁদের মেয়াদ ছয় বছর। নিম্নকক্ষের নাম লোকসভা। এর সদস্যেরা জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। সংসদের উভয় কক্ষের সদস্যদের সাংসদ (এমপি) বলা হয়। 
রাজ্যসভা পরিচালনা করেন উপরাষ্ট্রপতি। লোকসভা পরিচালনার দায়িত্ব স্পিকারের, যিনি নির্বাচিত সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোট সরকার গঠন করে, এর নেতা হন প্রধানমন্ত্রী। এই সরকারই কেন্দ্রীয় সরকার।
কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার: মোদিবিরোধীরা কি এক হতে পারবে?
প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে একটি করে নির্বাচিত সরকার আছে, যা রাজ্য সরকার নামে পরিচিত। প্রতিটি রাজ্যে বিধানসভা থাকে। সেখানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি থাকেন, যাকে রাজ্যপাল বলা হয়। রাজ্য সরকার গঠিত হয় জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত বিধানসভার সদস্যদের নিয়ে। বিধানসভার সদস্যদের বিধায়ক বলা হয়। এই সরকারের প্রধান হলেন মুখ্যমন্ত্রী। 
ভারতে কয়েক ধরনের নির্বাচন হয়। এগুলো হলো: রাষ্ট্রপতি নির্বাচন: এতে জনগণ ভোট দেন না। রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সাংসদ ও বিধায়কদের ভোটের মাধ্যমে।
লোকসভা নির্বাচন: কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের জন্য যে নির্বাচন হয় তা লোকসভা নির্বাচন নামে পরিচিত। এই ভোটে নির্বাচিত সাংসদদের মধ্য থেকেই একজন প্রধানমন্ত্রী হন। এই নির্বাচনে জনগণ ভোট দেন।
বিধানসভা নির্বাচন: রাজ্য সরকার গঠনের জন্য এই নির্বাচন হয়। এই ভোটে নির্বাচিত বিধায়কদের মধ্য থেকেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন। এতেও জনগণ ভোট দেন।
এ ছাড়া গ্রামীণ এলাকায় ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা রয়েছে। নির্বাচনও হয় সেখানে। যার মাধ্যমে জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও অঞ্চল পঞ্চায়েত গঠিত হয়। এই তিনটি নির্বাচন একসঙ্গে হয়। শহরাঞ্চলে পৌরসভা নির্বাচন হয়, যা পৌর নির্বাচন নামে পরিচিত। এতেও জনগণ ভোট দেন।
রাষ্ট্রপতি, লোকসভা, বিধানসভা, পঞ্চায়েত সবকিছুই পাঁচ বছরের জন্য হয়। তবে বিশেষ কারণে তার আগেও ভেঙে যেতে পারে। যেমন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারালে বা রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলে ভেঙে যেতে পারে। বিশেষ কারণে রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় সরকার মেয়াদ ফুরানোর আগে ভেঙে দিতে পারেন।
লোকসভা নির্বাচন: ভারতের লোকসভায় মোট ৫৪৩টি আসন রয়েছে। আরও দুজনকে মনোনীত করার মাধ্যমে তৈরি হয় ৫৪৫ সদস্যের সংসদ। অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সম্প্রদায় থেকে বাকি দুজন সদস্যকে মনোনীত করেন রাষ্ট্রপতি। তফসিলি গোষ্ঠী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য বরাদ্দ আছে কিছু আসন। নারীদের জন্য আলাদা করে আসন বরাদ্দ নেই।
লোকসভা আসনগুলোর মধ্যে ২৮ রাজ্যে আছে ৫২৪টি আসন। আর কেন্দ্রশাসিত ৮টি অঞ্চলে আছে ১৯টি আসন। সবচেয়ে বেশি ৮০টি আসন রয়েছে উত্তর প্রদেশে। আসনসংখ্যা বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হিসেবে লোকসভা নির্বাচনে চোখ থাকবে মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও তামিলনাড়ুর দিকে। এ রাজ্যগুলোতে আসন রয়েছে যথাক্রমে ৪৮, ৪২, ৪০ ও ৩৯টি। এ ছাড়া আসনসংখ্যার বিচারে মধ্যপ্রদেশ (২৯), কর্ণাটক (২৮), গুজরাট (২৬), অন্ধ্রপ্রদেশ (২৫), রাজস্থান (২৫), ওডিশা (২১), কেরালা (২০), তেলেঙ্গানা (১৭), আসাম (১৪), ঝাড়খন্ড (১৪) ও পাঞ্জাব (১৩) বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
৫৪৩টি আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেতে লড়বে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) ও সম্প্রতি গঠিত জোট ইন্ডিয়া। এনডিএর নেতৃত্ব দিচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। আর ইন্ডিয়াতে আছে কংগ্রেস।
এর আগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩ আসনের মধ্যে এনডিএ জিতেছিল ৩৫৩টি আসনে। এর মধ্যে বিজেপি একাই জিতেছে ৩০৩টি আসনে। লোকসভায় ২৭২ আসন পেলেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া যায়। এবারের নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোটে দল রয়েছে ২৬টি। এতে কংগ্রেস ছাড়াও আম আদমি পার্টি (এএপি), সমাজবাদী পার্টি (এসপি), তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি), রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি)। আর এনডিএ জোটে এবার বিজেপি ছাড়া রয়েছে শিব সেনা (একনাথ সিন্ধে), জনতা দল (ইউ) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি। ভারতে মোট ২ হাজার ৬০০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া দলগুলোর রয়েছে নিজস্ব প্রতীক। যেমন, কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন বিজেপির প্রতীক পদ্ম, প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের মার্কা হাত, আর অন্যান্য দলের হাতি থেকে শুরু করে বাইসাইকেল, চিরুনি বা তিরসহ নানা প্রতীক রয়েছে।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জন্য ৩৭০ আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছেন নরেন্দ্র মোদি। ২০১৯ সালের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এটি ৬৭টি বেশি। আর জোটগতভাবে লোকসভার ৪০০ আসনের দখল চান তিনি।
সর্বশেষ ১৯৮৪ সালে কোনো রাজনৈতিক দল ৩৭০টির বেশি আসন পেয়েছিল। আর সেটি ছিল কংগ্রেস। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকান্ডের পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কংগ্রেস ৪১৪ আসনে জয়লাভ করে।
মোদি এবারও জিতে পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকলে তিনিই হবেন ভারতের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী তৃতীয় রাজনৈতিক নেতা। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু প্রায় ১৬ বছর ৯ মাস দেশ শাসন করেন, আর তাঁর কন্যা ইন্দিরা গান্ধী দেশ পরিচালনা করেন ১৫ বছর ১১ মাস।
ভারতের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে চীন!
লোকসভা বনাম বিধানসভা আসন আগেই বলা হয়েছে, এবার লোকসভার সাথে চার রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনও হবে। রাজ্যগুলো হলো সিকিম, ওডিশা, অরুণাচল ও অন্ধ্রপ্রদেশ। যেমন সিকিমের ক্ষেত্রেই ধরা যাক। রাজ্যটিতে বিধানসভার আসন আছে ৩২টি। কিন্তু লোকসভা আসন আছে ১টি। একইভাবে অরুণাচল প্রদেশের ক্ষেত্রে বিধানসভা আসন আছে ৬০টি এবং লোকসভা আসন আছে ২টি। অর্থাৎ, এই রাজ্যগুলোর ক্ষেত্রে ভোটারদের বিধানসভার জন্য ভোট দেওয়ার পাশাপাশি লোকসভার ভোট আলাদাভাবে দিতে হবে।
জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা ভোট হচ্ছে না,লোকসভার ভোটের সঙ্গেই এবার সিকিম, ওড়িশা, অরুণাচল প্রদেশ ও অন্ধ্রপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন হবে। এর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গসহ ১৩টি রাজ্যের বিধানসভার ২৬টি আসনের উপনির্বাচনও হবে একই সঙ্গে।
তবে ভারতের কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে না। এ নিয়ে গত মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার বলেন, লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশন জম্মু ও কাশ্মীর সফরে গিয়েছিল। তারপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, লোকসভা আর বিধানসভার ভোট সেখানে একই সঙ্গে করানো সম্ভব হবে না। লোকসভার ভোট এবার হওয়ার পর বিধানসভার নির্বাচন করা হবে।
জম্মু-কাশ্মীরে পাঁচটি লোকসভা আসন রয়েছে। সেখানে প্রতিটি আসনে ভোট নেওয়া হবে একেক দফায়। অর্থাৎ, মোট পাঁচ দফায় লোকসভার ভোট হবে সেখানে।
সূত্র: বিবিসি, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও হিন্দুস্থান টাইমস

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!