মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২

প্রচুর অপকর্ম ও অন্তর্কোন্দলের জেরে খুলনায় এনসিপি নেতাকে গুলি-কেএমপি পুলিশ

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২৫, ১২:০১ এএম

প্রচুর অপকর্ম ও অন্তর্কোন্দলের জেরে খুলনায় এনসিপি নেতাকে গুলি-কেএমপি পুলিশ

জেলা প্রতিনিধি: এবার খুলনায় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক মো. মোতালেব শিকদার (৪২) গুলিবিদ্ধের ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশ। এরই মধ্যে ঘটনাস্থল থেকে একটি গুলির খোসা, ইয়াবা, মদের বোতল, রক্তমাখা কাপড় এবং বাসার কাছাকাছি এলাকা থেকে একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। তবে গুলির ঘটনার পর লাপাত্তা হয়ে যাওয়া তন্বী নামে এক তরুণীকে খুঁজছে পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রচুর অপকর্ম ও অন্তর্কোন্দলের জেরে মোতালেব শিকদারকে গুলি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া আলামতের মধ্যে গুলির খোসাও উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেই বাসাতে ভাড়া থাকতেন তন্বী নামে এক তরুণী। ঘটনার পর থেকে তন্বীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, রোববার রাতে তন্বীর বাসায় জাতীয় শ্রমিক শক্তির বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক মোতালেব শিকদার অবস্থান করেন। সেখানে তিনি সহযোগীদের নিয়ে ইয়াবা সেবন, মদপান ও অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়েছিলেন। পুলিশের ধারণা, গতকাল সোমবার সকাল ১১টার দিকে অন্তর্কোন্দলের ও চাঁদাবাজির ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার মাথা লক্ষ্য গুলি করা হয়। তবে গুলিটি তার বাম কানের লতিতে লাগে।
উদ্ধার হওয়া সিসিটিভির কিছু ফুটেজের বরাতে ওই সূত্রটি আরও জানায়, ফুটেজে দেখা যায় মোতালেব শিকদার ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে দু হাত দিয়ে কান চেপে ধরে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছেন। এরপর তন্বী ঘরে তালা লাগিয়ে সেখান থেকে চলে যান।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশে (কেএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মাদ তাজুল ইসলাম বলেন,গুলির ঘটনাটি বেলা ১১টার দিকে ঘটলেও প্রথমে ঘটনাস্থল খুঁজে পেতে দেরি হয়েছে। পরে এনসিপির স্টিকার লাগানো একটি প্রাইভেটকার পড়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয়। তখন একটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করি। যেখানে দেখা যায়, রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে ভিকটিমসহ আরও দুইজন ওই বাসায় আসে। এখানে বাইরের লোকজনে আনাগোনা ছিল। তন্বীর বাসার কক্ষ থেকে মাদকের বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রোববার রাতে মোতালেব শিকদার ওই বাসায় এসেছিল। তাদের নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণে এ গুলির ঘটনা ঘটেছে। যেটা আমরা প্রাথমিক তদন্তে পেয়েছি। এর সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত রয়েছে। জড়িতদের খুব শিগগিরই আইনের আওতায় আনতে পারবো।
মজিদ স্মরণীর রোডের মুক্তা হাউজের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার বলেন,তন্বী নামে এক তরুণী তারা স্বামী-স্ত্রী একটি বেসরকারি সংস্থায় (এনজিও) চাকরি করে এই পরিচয়ে মাসিক ৮ হাজার টাকায় বাড়ির নিচ তলার দুই কক্ষের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। পরে তার স্বামী আমিনুল ইসলাম কচি জানতে পারেন, ওই ফ্ল্যাটে নিয়মিত বাইরের লোকজন যাতায়াত করে। এরপর তিনি আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে বাসা ছাড়ার জন্য তন্বীকে নোটিশ দেন। কিন্তু বাড়ির ছাড়ার আগেই গুলির ঘটনা ঘটেছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, গুলিটি মোতালেবের বাম কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। খুলনা সিটি ইমেজিং সেন্টার তার মাথার স্ক্যান করা হয়েছে। আহত মোতালেব এখন সম্পূর্ণ আশঙ্কা মুক্ত।
এদিকে, ছেলের ওপর গুলির ঘটনা জানতে পেরে হাসপাতালে ছুটে যান মোতালেবের মা রাবেয়া বেগম ও তার স্ত্রী ফাহিমা আক্তার। তারা বলেন, রোববার সন্ধ্যায় মোতালেবের সঙ্গে সর্বশেষ মোবাইল ফোনে কথা হয়। মোতালেব তাদের জানায়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের একজন কর্মী আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার সার্বিক খোঁজখবর নেওয়ার জন্য সে হাসপাতালে রয়েছে। এরপর সে বলে, ডাকবাংলোর মোড়ে স্যান্ডেল কেনার জন্য যাবো; এ কথা বলে সে ফোন কেটে দেয়। রাতে আর কোনো কথা হয়নি তার সঙ্গে। বেলা ১১ টার দিকে একজন ফোন করে জানায় মোতালেবকে গুলি করা হয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগ দেওয়ার কারণে প্রতিপক্ষ তাকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ করেন তারা।
এনসিপির খুলনা মহানগর সংগঠক আহম্মেদ হামীম রাহাত বলেন, খুলনা এখন সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। বিগত দিনে খুলনায় অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এই সন্ত্রাসী গ্রæপই আওয়ামী নেতাদের আশীর্বাদপুষ্ট। নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী নেতাদের মদদেই সন্ত্রাসীরা খুলনাকে অশান্ত করার মিশনে নেমেছে। অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি। সোনাডাঙ্গা থানার পুলিশ পরিদর্শক  (তদন্ত) অনিমেষ মন্ডল বলেন, ওই ঘটনায় গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। এ ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করাও সম্ভব হয়নি। সংগৃহীত ছবি

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!