মন্জুর-ই এলাহী শাহীন: "তাকামূল এর স্কিল টেস্টের জন্য নির্ধারিত ফি ৫০ ডলার। ৫০ ডলারের বেশি কাউকে কোনো টাকা দিবেন না।"এ ধরনের তথ্যসম্বলিত বিশাল একটি ব্যানার টানানো আছে বাংলাদেশ কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ঢাকায়,প্রতিষ্ঠানটির সম্মুখ অংশের দেওয়ালে। কিন্তু ভিতরের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এক বুক আশা নিয়ে অসংখ্য বিদেশগামী কর্মী আসে বাংলাদেশ কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। কেউ আংশিক, কেউ পরিপূর্ণ আবার কেউবা খুবই অল্প পরিসরে নির্দিষ্ট ট্রেডের কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে এখানে আসে তাকামূল এর স্কিল টেস্টের জন্য। স্বভাবতই অযোগ্যদের বাদ দেওয়ার কথা এই স্কিল টেস্টে। কিন্তু এখানেই ঘটে ব্যতিক্রমী ঘটনা। সত্যতা যাচাই করতে আগত প্রার্থীদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের মধ্যে অনেককেই ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকামূল সার্টিফিকেট নিতে হয়েছে। এখানে নাকি টাকা ছাড়া তেমন সুবিধা হয় না। সেলুনের কাজে স্কিল টেস্ট দিতে আসা একজনের সাথে কথা বলে জানা যায় তার আত্মীয় এক সপ্তাহ আগে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকামূল স্কিল টেস্টে উত্তীর্ণ হয়ে সৌদি গমন করেছে। সে নিজেও এখন একই পথে হাঁটার চেষ্টা করছে। আরেকজনের সাথে কথা বলা জানা যায় সে দুইবার ফেল করার পর ২৫ হাজার টাকা দিয়ে এখন তৃতীয়বার এসেছে সার্বিকভাবে কন্টাক্ট করে। কাকে টাকা দিয়েছেন এ প্রশ্নের উত্তর সুকৌশলে এরিয়ে যান তিনি।
কথিত আছে এখানে টাকা ছাড়া তাকামূল পাওয়া কঠিন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় কতিপয় এজেন্সির লোকদের সাথে এই তাকামূল এর দুর্নীতির বিষয়ে একাধিক কর্মচারী কর্মকর্তা জড়িত, মূলত দালালদের মাধ্যমে এ বিষয়ে লেনদেন হলেও বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে থাকেন বলে গোপন সূত্রে জানা যায়।
ছদ্মবেশে তাকামূল প্রয়োজন এ বিষয়ে বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার এর একজন কর্মচারীর সাথে কথা হলে তিনি এই সাংবাদিককে ২০ হাজার টাকায় করে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তখন এ বিষয়ে জানতেসরাসরি বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের অধ্যক্ষ মোঃ লুৎফর রহমানের মুখোমুখি হলে তিনি বলেন তাকামূল স্কিল টেস্ট এর রুমগুলোতে সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা থাকে,যেখানে বাইরের দেশ থেকে সংযুক্ত থাকেন সংশ্লিষ্ট দেশের নিয়োগ কর্তা বা তাদের নিরীক্ষকগণ। তাহলে প্রশ্ন এত কিছুর মাঝে টাকা নিয়ে তাকামূল পাওয়া সম্ভব কিভাবে? তাহলে কি সরিষার ভেতরেই ভুতের অবস্থান? ইতিমধ্যেই অনেক এজেন্সির কাছে,দালালদের কাছে এক প্রকার মার্কেট রেট এর মতো, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা
তাকামূল এর খরচ হিসেবে গুঞ্জন উঠেছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
যেখানে স্বচ্ছতার জন্য এই তাকামূল এর আয়োজন, যার মাধ্যমে একজন বিদেশগামী কর্মী পরিপূর্ণ দক্ষতা অর্জন করে বিদেশ যাচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়ার কথা। সেখানে এভাবে টাকার বিনিময়ে তাকামূল নিয়ে একজন অদক্ষ কর্মী যখন বিদেশে যায়, তখন সেখানে গয়ে সে নিজে যেমন অসুবিধার সম্মুখীন হয়, তেমনি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে নিয়োগকর্তা ও দেশের সন্মান কে। একপর্যায়ে নিয়োগকর্তা বিরক্ত হয়ে যায় তার পরিপূর্ণ কাজ না জানার কারণে। এভাবে চলতে থাকলে সৌদি আরবের মত এত বড় একটি শ্রম বাজারে অশনি সংকেত নেমে আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সকলের অভিমত।
এ বিষয়ে এখনই যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে অদূর ভবিষ্যতে দেশের রেমিটেন্স খাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট সকলে। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত পরবর্তী পর্বে।

ডেইলি খবরের সর্বশেষ নিউজ পেতে Google News অনুসরণ করুন।
আপনার মতামত লিখুন :