উৎসবমুখর পরিবেশ আর ভোটারের ব্যাপক উপস্থিতির মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের ৩৮তম নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলছে। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে আটটি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ভোট চলবে বিকেল চারটা পর্যন্ত।
ভোট শুরুর আগে সবার উপস্থিতিতে ব্যালট বাক্স সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। এ সময় গণমাধ্যমকর্মী এবং প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টরা উপস্থিত ছিলেন।
নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী কেন্দ্রীয় এবং হল সংসদের দুইটি বাক্স সিলগালা করেন। এ সময় তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন ব্যালট বাক্স সম্পূর্ণ ফাঁকা রেখে সিলগালা করা হয়েছে। এর মধ্যে বড় বাক্সটি কেন্দ্রীয় সংসদ এবং ছোটটি হল সংসদের জন্য। ভোট গ্রহণ শেষে যখন ভোট গণনা হবে, তখন সবাইকে নিয়ে বাক্সটি খোলা হবে।সিনেট ভবন কেন্দ্রে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, বিজয় একাত্তর হল, স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন।
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন যার মধ্যে ছাত্রী ১৮ হাজার ৯৫৯ জন এবং ছাত্র ২০ হাজার ৯১৫ জন।কেন্দ্রীয় সংসদে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থীর সংখ্যা ৪৭১ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ প্রার্থী ৪০৯ জন, নারী প্রার্থী ৬২ জন। এছাড়া হল সংসদ নির্বাচনে ১৮টি হলে মোট পদের সংখ্যা ২৩৪টি। এসব পদে লড়ছেন ১ হাজার ৩৫ জন প্রার্থী।
ভোট গ্রহণ হচ্ছে অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) শিটে। ডাকসু ও হল সংসদ মিলিয়ে নির্বাচনে একজন ভোটারকে মোট ৪১টি ভোট দিতে হবে। ডাকসুতে ৪৭১ প্রার্থীর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে (জিএস) ১৯ জন এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।
এবারের ডাকসু ভোটে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলিয়ে অন্তত ১০টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। শীর্ষ তিন পদে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট,গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ-সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ, উমামা ফাতেমার নেতৃত্বাধীন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য এবং বামপন্থী সাত ছাত্রসংগঠনের সমর্থিত প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেলের প্রার্থীদের মধ্যে মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবার ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এবারই প্রথমবারের মতো আবাসিক হলের বাইরে ডাকসু ও হল সংসদের ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসের নির্ধারিত আটটি কেন্দ্রের ৮১০টি বুথে শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন। এর মধ্যে কার্জন হল কেন্দ্রে ভোট দেবেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল ও অমর একুশে হলের শিক্ষার্থীরা। এই কেন্দ্রে ৫ হাজার ৭৭ জন ভোটার ভোট দেবেন।
শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রটি নির্ধারণ করা হয়েছে জগন্নাথ হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থীদের জন্য (মোট ভোট ৪ হাজার ৮৫৩ ভোট)। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ভোট দেবেন রোকেয়া হলের ছাত্রীরা (৫ হাজার ৬৬৫ ভোট)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব কেন্দ্রে ভোট দেবেন বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থীরা (মোট ভোট ৪ হাজার ৭৫৫)। স্যার এ এফ রহমান হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন সিনেট ভবন কেন্দ্রে (মোট ভোট ৪ হাজার ৮৩০)।
সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভোট দেবেন উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রে মাস্টারদা’ সূর্যসেন হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কবি জসীমউদ্দীন হলের মোট ৬ হাজার ১৫৫ শিক্ষার্থী ভোট দেবেন। ভূতত্ত্ব বিভাগ কেন্দ্রে ভোট দেবেন কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রীরা (৪ হাজার ৪৪৩ ভোট)। আর ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে শামসুন নাহার হলের ৪ হাজার ৯৬ জন ছাত্রীর ভোটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত (আট ঘণ্টা) ভোট দিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।
তবে চারটার মধ্যে যারা ভোটকেন্দ্রের আঙিনায় প্রবেশ করবেন, যত সময় লাগুক তারা ভোট দেওয়ার সুযোগ দেয়া হবে বলে ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানিয়েছেন।
রাত পোহালেই ভোট, নিরাপত্তার চাদরে উৎসবমুখর ক্যাম্পাসরাত পোহালেই ভোট, নিরাপত্তার চাদরে উৎসবমুখর ক্যাম্পাসনির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, যেসব শিক্ষার্থীর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা রয়েছে এবং যারা ব্রেইল পড়তে পারেন, তাদের জন্য প্রথমবারের মতো ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোটদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে যেসব শিক্ষার্থী ব্রেইল পড়তে পারে না তাঁরা আরেক জনের সহযোগিতা নিয়ে সবার মতোই ভোট দিতে পারবেন।
আপনার মতামত লিখুন :