বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

বসুন্ধরা গ্রæপের চেয়ারম্যান ও পরিবারের শেয়ার-ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২৫, ১০:৫২ পিএম

বসুন্ধরা গ্রæপের চেয়ারম্যান ও পরিবারের শেয়ার-ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ

বসুন্ধরা গ্রæপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান (শাহ আলম) ও তার পরিবারের সদস্যদের কোম্পানির ১ হাজার ৪৭৭ কোটি ৮৯ লাখ ৩১ হাজার ৭৮৬ টাকা ও ১০ হাজার ৫৩৮ মার্কিন ডলারের ব্যাংক হিসাব এবং শেয়ার জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতমঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল এ আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব। বিষয়টি ৩০ এপ্রিল বুধবার জানা যায়।
মানিলন্ডারিং, রাজস্ব ফাঁকি,ভূমি দখল, ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থাকায় ব্যাংক হিসাব এবং শেয়ার অবরুদ্ধের এ আদেশ আদালত দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম।ব্যাংক হিসাব এবং শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ হওয়া পরিবারের অন্যরা হলেন আহমেদ আকবর সোবহানের ছেলে ও বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর, তার স্ত্রী সাবরিনা সোবহান, কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহান, সাদাতের স্ত্রী সোনিয়া ফেরদৌসী সোবহান,ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান (সানভীর) ও সাফওয়ান সোবহান,সাফওয়ানের স্ত্রী ইয়াশা সোবহান।
আকতারুল ইসলাম বলেন, ‘আহমেদ আকবর সোবহান এবং তার পরিবারের আরও সাত সদস্যের ৭০ ব্যাংক হিসাবের ১৯ কোটি ৮১ লাখ ৭৪ হাজার ২৬৬ টাকা ও ১০ হাজার ৫৩৮ মার্কিন ডলার এবং ৭৫ কোটি ৮৬ লাখ ৯০ হাজার ৩০২ টি শেয়ারের ১ হাজার ৪৫৮ কোটি ৭৫ লাখ ৭ হাজার ৫২০ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত।দুদকের অনুসন্ধানকারী টিমের সদস্য সহকারী পরিচালক সাজিদ উর রহমান আদালতে এ আবেদন করেন। 
আবেদনে বলা হয়, বসুন্ধরা গ্রæপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং, সরকারের রাজস্ব ফাঁকি, ভূমি জবর দখল, ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানকালে আহমেদ আকবর সোবহান এবং তার ছেলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর,তার স্ত্রী সাবরিনা সোবহান, কো-চেয়ারম্যান সাদাত সোবহান, সাদাতের স্ত্রী সোনিয়া ফেরদৌসী সোবহান, ভাইস চেয়ারম্যান সাফিয়াত সোবহান (সানভীর) ও সাফওয়ান সোবহান, সাফওয়ানের স্ত্রী ইয়াশা সোবহানের নামে ও অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে ¯েøাভাকিয়া ও সাইপ্রাসে বিপুল অর্থ বিনিয়োগপূর্বক নাগরিকত্ব গ্রহণের জন্য অর্থ বিনিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোন অনুমতি গ্রহণ ছাড়াই, বাংলাদেশের আইন না মেনেই বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে বিদেশী পাসপোর্ট গ্রহণ, ¯েøাভাকিয়া, সেন্ট কিটস এন্ড নেডিস, সুইজারল্যান্ড,ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড,যুক্তরাজা, সিঙ্গাপুরে একাধিক কোম্পানী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ, সংযুক্ত আরব আমিরাতের হাবিব ব্যাংক লি. এ অর্থ জমা,সাইপ্রাস এর ইউরোব্যাংকে বিপুল অর্থ লেনদেন করার এবং সাইপ্রাসে বাড়ি ক্রয় করার তথ্য পাওয়া যায়। এসব সম্পত্তি বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি ব্যতীত বহিঃ বাংলাদেশে ক্রয় করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশি নাগরিক হয়ে বিদেশী পাসপোর্ট ও নাগরিকত্ব গ্রহণে তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। বাংলাদেশের আইন মোতাবেক বাংলাদেশ হতে ক্যাপিটাল বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেয়া প্রয়োজন। তারা বাংলাদেশ থেকে বিদেশে ক্যাপিটাল স্থানান্তরের পূর্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করেনি মর্মে জানা যায়। এমনকি তারা বিদেশে যে সম্পত্তি অর্জন করেছেন ভার তথ্য/রেকর্ডপত্র, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর কাছে সংশ্লিষ্ট আয়কর বিবরণীতে প্রকাশ না করে তথ্য গোপন করেছেন। অর্থাৎ,অভিযোগসংশ্লিষ্টরা অবৈধ উপায়ে সরকারি অনুমতি ছাড়াই বিদেশে অর্থ নিয়ে গিয়েছেন। সুতরাং তারা অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করতে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে লেয়ারিংয়ের আশ্রয়ে শ্লোভাকিয়া, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সুইজারল্যান্ড, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, সাইপ্রাস এ এসব সম্পদ ক্রয়ের মাধ্যমে ইন্টিগ্রেশন সম্পন করেন। মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ গত বছর বিদেশের সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেন। যা গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্টরা বিদেশে বিভিন্ন ব্যাংকে ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নামে হিসাব খুলে হিসাবসমূহের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ লেনদেন করেছেন। এছাড়া অনুসন্ধানকালে জানা যায়, তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ দিয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন।বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট থেকে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক, অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকসমূহে ব্যাংক হিসাব পরিচালনার তথ্য পাওয়া যায়।
আবেদনে আরও বলা হয়,আহমেদ আকবর সোবহান ও তার পরিবারের মালিকানাধীন মোট শেয়ারের মূল্য ১৫ লাখ ৬ হাজার টাকা এবং বসুন্ধরা হটিকালচারের মোট শেয়ার এর মূল্য সাড়ে ১৪ লাখ টাকা। ২২ টি প্রতিষ্ঠান ব্যতীত আরজেএসসিতে নিবন্ধিত বসুন্ধরা গ্রæেেপর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আরো অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে মর্মে অনুসন্ধানকালে জানা যায়। অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বসুন্ধরা গ্রæপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ৭০টি ব্যাংক হিসাবে রাখা  ১৯ কোটি ৮১ লাখ ৭৪ হাজার ২৬৬ টাকা এবং ইউএসডলার ১০ হাজার ৫৩৮ দশমিক ৯৭ এবং মালিকানাধীন ৩১টি কোম্পানীর ৭৫ কোটটি ৪৬ লাখ ৯০ হাজার ৩০২ টি শেয়ার যার অভিহিতমূল্য ১৪৫৮ কোটি ৭৫ লাখ ৭ হাজার ৫২০ টাকা সহ ২২টি কোম্পানি ব্যতীত আরজেএসসিতে নিবন্ধিত আরো অনেক প্রতিষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রæপের স্বার্থ রয়েছে এমন শেয়ার হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। যা করতে পারলে মামলার অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় মামলা দায়ের, আদালতে চার্জশীট দাখিল, আদালত কর্তৃক বিচার শেষে সাজার অংশ হিসেবে অপরাধলব্ধ আয় হতে অর্জিত সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্তকরণসহ সকল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। তাই তা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!