জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পক্ষের সকল শক্তিকে গণমুখী লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন লড়াই এখনো শেষ হয়নি। সোমবার (১২ মে) রাতে নিজের ফেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে এ আহ্বান জানান তিনি। পোস্টে মাহফুজ আলম লেখেন, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলো। কিন্তু, লড়াই এখনো বাকি। মুজিববাদের সাংস্কৃতিক রাজনীতি ও রাজনৈতিক অর্থনীতিকে পরাস্ত করতে হবে। ফ্যাসিবাদের ফলে সৃষ্ট সামাজিক ফ্যাসিবাদ দূরীভূত করতে হবে। মজলুম জনগোষ্ঠীকে জালিম হয়ে উঠতে দেওয়া যাবে না। বরং, সকলের অধিকার ও ন্যায়বিচারের পক্ষে থাকতে হবে।তিনি লেখেন, রাষ্ট্রকে নূতন করে গড়ে তুলতে অভ্যুত্থানের পক্ষের সকল শক্তিকে দূরদর্শী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। আদর্শিক বিরোধ, নির্বাচনী প্রতিযোগিতা এবং নানবিধ টানাপোড়েন থাকবে, স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের স্বাধীনতা,অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, যুগপৎভাবে কিংবা আলাদা হয়ে হলেও সর্বাত্মক গণমুখী লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
তথ্য উপদেষ্টা আরও লেখেন, ১৯৭১ পরবর্তী আওয়ামী লীগ মুজিববাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রগঠনকে বাধাগ্রস্থ করেছিল এবং রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া করে তুলেছিল। লীগমুক্ত বাংলাদেশে রাষ্ট্রগঠন এবং শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার নূতন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না।
এদিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের আলোকে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। সোমবার (১২ মে) রাত সোয়া ৯টার দিকে এ তথ্য জানান তিনি।সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকার যুক্তিসঙ্গতভাবে মনে করে সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা-১৮(১) অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটি এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা দরকার।
এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের যেকোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেকোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল,সভা-সমাবেশ,সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
এতে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও এর সব অঙ্গসংগঠন,সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সদস্য ও ভিন্নমতের মানুষের ওপর হামলা, গুম, খুন, হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন নিপীড়নমূলক ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
এরপর দুপুরে আরেকটি প্রজ্ঞাপনে আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেকোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ ও সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি স্বাক্ষরিত এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন,সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক যে কোনো ধরনের প্রকাশনা,গণমাধ্যম,অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচারণা,মিছিল, সভা-সমাবেশ ও সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।’
আপনার মতামত লিখুন :