নিজস্ব প্রতিনিধি: অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি (ইলেকট্রোরাল ইনকোয়ারি কমিটি) গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের ৩০০ আসনে একটি করে কমিটি গঠন করা হবে।কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের ইতিহাসে এই প্রথম অনুসন্ধান কমিটিকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণভোট ও সংসদ নির্বাচন সংক্রান্তের সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
সভায় উপস্থিত ইসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) বিধান মতে বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের দিয়ে দেশের প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় একটি করে ৩০০টি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হবে। নির্বাচনে কোন প্রার্থী, তার কর্মী-সমর্থক নির্বাচনি আচরণ বিধি ভাঙলে এবং অপরাধ স্বীকার করলে সামারি ট্রায়ালের (সংক্ষিপ্ত বিচার) মাধ্যমে ওই কমিটি তাদের প্রদত্ত ক্ষমতাবলে শাস্তি বা ক্ষেত্রবিশেষে জেল-জরিমানা দিতে পারবে।
ইতোমধ্যে ইসি থেকে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ সংক্রান্তে গঠিত কমিটি তাদের কাজ শুরু করবে।
সভা সূত্র জানায়, তফসিল ঘোষণার পর প্রথম দিকে সীমিত সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে। ভোটের আগে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। প্রতিটি উপজেলার জন্য দুজন, প্রতি নয়টি ওয়ার্ডের জন্য দুজন, ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটির জন্য ১৫ জন এবং চট্টগ্রাম সিটির জন্য ১০জন থাকবে। তারা নির্বাচনি এলাকায় ঘুরে ঘুরে প্রার্থী বা কর্মী-সমর্থকদের আচরণবিধি তদারকি করবেন।
এদিকে, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দশম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোট গ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং ব্যালট পেপার আগের রাতেই কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হবে।
সভার একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশন আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ নির্বাচনি সামগ্রীসহ নির্বাচনের ব্যালট ভোটের দিন সকালে পাঠানোর জন্য প্রস্তব রেখেছিলেন। কিন্তু বৈঠকে এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত আসে। পরে নিরাপত্তা শঙ্কা অগ্রাধিকার বিবেচনায় এই কমিশনারের প্রস্তব নাকচ হয়।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৪৮টি বাদে সবগুলোতে সকালে ব্যালট পাঠানো হয়।
সভার সূত্র আরও জানায়, তফসিল ঘোষণার পর ওইদিন রাতেই নির্বাচনের কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে জুম মিটিং করবে ইসি কমিশন।
রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় সিইসির সভাপতিত্বে শুরু হওয়া কমিশন সভা দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত চলে। এর পর সভাটি দেড়টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। পরে দুপুরে আরেক দফা আলোচনার পর বিকেলে নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। এ সময় ইসির সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও এনআইডি উইংয়ের ডিজি উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল জানান, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিল পূর্ব আনুষ্ঠানিক কাজের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং সিইসির বক্তব্য রেকর্ড করতে বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভিকে আগামীকাল (সোমবার) পত্র পাঠানো হবে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হওয়ায় সময় ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এবার ভোট শুরু হবে সকাল সাড়ে ৭টায় এবং চলবে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।
মক ভোটিংয়ের অভিজ্ঞতা ও মাঠপর্যায়ের মতামতের ভিত্তিতে বুথ সংকট কাটাতে প্রতিটি কক্ষে একাধিক সিক্রেট বুথ স্থাপন করা হবে। কোথাও জায়গা না থাকলে অস্থায়ী বুথ করা হবে বলেও জানান সানাউল্লাহ।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে সানাউল্লাহ বলেন, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং সরকারি ব্যাংকের কর্মীদের তালিকায় নেওয়া হবে।তবে বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আপাতত রিজার্ভে রাখা হবে, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া তাদের নিয়োগ দেওয়া হবে না।
সানাউল্লহ জানান, তফসিল ঘোষণার দিন সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা এবং প্রশাসনিক প্রস্তুুতি নিয়ে জুম মিটিং করা হবে। অঞ্চলভিত্তিক নির্বাচনি তথ্য সংগ্রহ ও সমস্যা সমাধানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা ১০ থেকে বাড়িয়ে ১৪ জন করা হয়েছে। একজন অতিরিক্ত সচিব নেতৃত্বে থাকবেন। ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির কার্যক্ষমতা আরও বাড়ানো হয়েছে, প্রয়োজন হলে তারা বিচারও করতে পারবেন। তফসিলের পরদিন থেকেই প্রিিতটি উপজেলা/ থানায় দুজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবেন। শেষ পাঁচ দিনে এ সংখ্যা বাড়ানো হবে। তফসিল ঘোষণার পরই প্রচার সামগ্রী অপসারণে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হবে। এরপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সানাউল্লাহ বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে একটি পরিপত্র এই সপ্তাহের মধ্যে দেওয়া হবে। তার আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। নির্বাচন কমিশনে একটা সেন্ট্রাল মনিটরিং সেল স্থাপিত হবে। যেখানে সব বাহিনী এবং প্রতিষ্ঠানের সংস্থার প্রতিনিধিত্ব থাকবে এবং এই সেলের আমাদের একটা ক্যাপাসিটি থাকবে মিসইনফরমেশন,ডিসইনফরমেশন হ্যান্ডেল করা।ফাইলছবি

ডেইলি খবরের সর্বশেষ নিউজ পেতে Google News অনুসরণ করুন।
আপনার মতামত লিখুন :