দেশে গেলো কয়েক দিন ধরেই চাপা উত্তেজনা রাজনীতিতে, তৈরি হয়েছে গুমোট পরিস্থিতি। ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত বলে সেনাপ্রধানের বক্তব্য গণমাধ্যমে আসার পর পাল্টাচ্ছে দৃশ্যপটও। অতীত ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা। আর ফ্যাসিবাদবিরোধী সব পক্ষকে মান-অভিমান ভুলে এক হওয়ার আহ্বান, জামায়াত আমীরের।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গেল বৃহস্পতিবার থেকে নগরভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
একই জায়গায় টানা বিক্ষোভের পর, গত বুধবার সকাল থেকে কাকড়াইল মোড়ে অবস্থান নেয় ইশরাকের কর্মী-সমর্থকরা। এ ইস্যুতে দলটির বড় নেতাদের বক্তব্য পাল্টা-বক্তব্যে ইঙ্গিত মেলে সরকার-বিএনপির মুখোমুখি অবস্থানের। শহর স্থবির করে দেয়া এ আন্দোলনে দাবি ওঠে দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগের।
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতি আরো তীব্র হয় বিএনপি নিয়ে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লার বক্তব্যে। আগুনে ঘি ঢালে বিএনপির সিনিয়র নেতা শামসুজ্জামান দুদুর পাল্টা বক্তব্যে। মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ায় বিএনপি-এনসিপি।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে পেরেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে ডোনার,আওয়ামী লীগের যে ফাইন্যান্স, আওয়ামী লীগের যে অর্থ ব্যবস্থা কিন্তু এখন পর্যন্ত ইনট্যাক্টট। আমি যেহেতু কুমিল্লাতে আছি, এখানের অনেক উপজেলা আছে, সে উপজেলার আওয়ামী লীগের রাজনীতিও এখন আওয়ামী লীগের টাকায় চলে, বিএনপির রাজনীতিও এখন আওয়ামী লীগের টাকায় চলে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ছয় বছর যে জেলের মধ্যে সাজা খাটছে তুমি কই ছিলা বাপধন। বল যে, বিএনপি চলে আওয়ামী লীগের টাকায়। যদি বিএনপির লোকরা প্রস্রাব করে একমাত্র তাহলে প্রস্রাবের তোড়ে ভেসে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়বা। সবকিছুর একটা সীমা থাকতে হবে। এতকিছুর মধ্যেও সবার দৃষ্টি ছিলো সেনানিবাসে এক সভা ঘিরে সেনাপ্রধানের দিকে। সভায় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্য নজর কাড়ে সবার।বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের রায় ইশরাকের পক্ষে গেলে, বিকেলে উপদেষ্টাদের পদত্যাগে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেধে দিয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথ ছাড়েন তিনি।
বিদ্বেষপূর্ণ এমন পরিবেশে বিকেলে ফেসবুক স্ট্যাটাসে অতীতের যে কোন বিভাজনমূলক বক্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। জুলাইয়ের স্পিরিট ধারণ করে ডাক দেন বৃহত্তর ঐক্যের। দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানান জামায়াত আমিরও। মান-অভিমান ভুলে দূরদর্শী আচরণের অনুরোধ তার। তবে সরকারসহ বিভিন্ন দলের মুখোমুখি অবস্থানে রাজনীতিতে যে গুমোট হাওয়া বইছে তা কিভাবে কাটবে সেদিকে এখন নজর সবার। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী প্রভাবশালী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেছেনঐক্য ভেঙে গেছে গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই। তিনি দেশ বর্তমানে কোনো ধরনের রাজনৈতিক ঐক্যের পথে নেই বলে মন্তব্য করেছেন। বৃহস্পতিবার ২২ মেদিবাগত রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক ঐক্য ভেঙে গেছে গত সেপ্টেম্বর, অক্টোবরের দিকেই। খোলসটা ছিল একরকমভাবে। বর্তমানে খোলসটাও খুলে পড়েছে তাই অনেকে অবাক হচ্ছে।’উমামা ফাতেমা আরও লিখেন, ‘সব পক্ষ যদি কিছুটা পরিপক্কতা দেখাত,শহিদদের জীবনের কথা ভেবে কিছুটা ছাড় দিত তাহলে অন্তত ইলেকশনের আগ পর্যন্ত দেশটা স্ট্যাবল থাকত। দেশটা স্ট্যাবল না হতে দেয়ার জন্য অনেক ধরনের ফোর্স ভিতরে সক্রিয় আছে।’
তিনি আরও লিখেন ‘জুলাই এর সকল লড়াকু শক্তিই ক্ষমতার প্রশ্নে অস্থির হয়ে গেছে। যেন গোটা দেশটাই একটা খেলামাত্র।’উমামা লিখেন, ‘রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, ধৈর্য ও টেবিলে ঐক্যমতের রাজনীতিই দেশকে একটা গণতান্ত্রিক উত্তরণের দিকে নিতে পারে। কিন্তু হায়! এখন প্রতিটি শক্তিই পরস্পরকে বেইমান, গাদ্দার মনে করে। আর এখন এসে ড. ইউনুসের জন্য হা হুতাশ একটু হালকা লাগে বৈকি। যখন ঐক্যমতের রাজনীতি করতে হয় ঐ সময় ভাঙনের রাজনীতি করছেন। আর এখন এসে হা-হুতাশ দেখতে হাস্যকর লাগে।’
আপনার মতামত লিখুন :