বেড়ায় ক্ষেত খেয়ে মোটাতাজা হয়েছে। চাকরি করে ঘুষ-দুর্নীতির টাকা (কালো টাকা) সাদা করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সহকারী কর কমিশনার মো.আমিনুল ইসলাম। তদন্তে প্রমানে তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। ৮ অক্টোবর বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) কর-১ শাখা থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে সই করেছেন আইআরডি সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো.আবদুর রহমান খান।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, যেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সংযুক্ত সহকারী কর কমিশনার মো. আমিনুল ইসলামের (৭০০৩১৮) চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে এবং যেহেতু সরকার জনস্বার্থে তাঁকে সরকারি চাকরি হতে অবসর দেওয়া প্রয়োজন মর্মে বিবেচনা করে, সেহেতু সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তাঁকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হলো। তিনি বিধি অনুযায়ী অবসরকালীন সুবিধাদি পাবেন।
প্রজ্ঞাপনে সরাসরি কোনো কারণ উল্লেখ না থাকলেও এনবিআর সূত্রে জানা যায়, কর ফাঁকি ও কালোটাকা সাদা করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করায় এনবিআর কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১০ শতাংশ কর দেওয়ার মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার অনুমতি দেয়। ওই সময়ে ব্যবসায়ী এস আলমের দুই ছেলে আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির ৫০০ কোটি টাকা অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার মাধ্যমে ৭৫ কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন। কর ফাঁকি দিতে ব্যাংকের দুটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে অনিয়মের আশ্রয় নেন তাঁরা।
একাধিক কর কর্মকর্তা জানান,ব্যক্তিগত পর্যায়ে ২৫ শতাংশ করহার বিবেচনায় ৫০০ কোটি টাকার বিপরীতে ১২৫ কোটি টাকা কর দিতে হতো। অথচ তাঁরা দিয়েছেন মাত্র ৫০ কোটি টাকা। এই বিশেষ সুযোগ তৈরি করে দেওয়ার ক্ষেত্রে এনবিআরের তিন কর্মকর্তার নাম উঠে আসে। তাঁরা হলেন অতিরিক্ত কর কমিশনার সাইফুল আলম, যুগ্ম কর কমিশনার এ কে এম শামসুজ্জামান ও সহকারী কর কমিশনার মো. আমিনুল ইসলাম। গত বছরের ১৭ অক্টোবর এ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এক বছর পর গত মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) আমিনুল ইসলামের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এর এক দিন পরই তাঁকেও বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হলো।
জানা গেছে, ৭৫ কোটি টাকার কর ফাঁকির অভিযোগে গত ৩ সেপ্টেম্বর ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই মামলায় এস আলমের দুই ছেলে, ইসলামী ব্যাংকের সাত কর্মকর্তা ও এনবিআর কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামকে আসামি করা হয়। অর্থাৎ কর ফাঁকি ও কালোটাকা সাদা করায় সহযোগিতার ক্ষেত্রে আমিনুল ইসলামের সম্পৃক্ততা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
কিছু কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, এনবিআরের মধ্যে দুর্নীতির যে ছাপ ছিল, এর বিরুদ্ধে নির্বিচারে শুদ্ধি অভিযান চালানোর প্রয়াস দেখা যাচ্ছে।এ বিষয়ে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দুষ্টদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না নিলে গোটা প্রতিষ্ঠানের নাম খারাপ হবে।
এ বিষয়ে সরকারের সাবেক আমলা ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, এ ব্যবস্থা যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ হয়, তাহলে এটি দুর্নীতিবিরোধী বার্তা হিসেবে কাজ করতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি ফেঁসে না যান।
এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের গবেষণা ফেলো ও অর্থনীতিবিদ হেলাল আহমেদ জনি বলেন, এ ধরনের দুর্নীতি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, রাজস্ব প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর প্রশ্ন তোলে। কর কর্মকর্তাদের অযৌক্তিক ক্ষমতা হ্রাস করতে হবে। নজরদারি ও তদন্তব্যবস্থাকে শক্তিশালী এবং স্বচ্ছ করতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে বিগত স্বৈরাচারের আমলে দুর্নীতিবাজরা অনায়াসেই লুটপাট চালিয়ে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। বরং পালিয়ে যেতে সহযোগীতা করেছে পতিত শেখ হাসিনার সরকার।
আপনার মতামত লিখুন :