রবিবার, ০১ জুন, ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

টানা চতুর্থ দিনেও বন্ধ চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৫, ১২:৩৩ পিএম

টানা চতুর্থ দিনেও বন্ধ চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা

রাজধানী ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে টানা চতুর্থ দিনের মতো অচলাবস্থা বিরাজ করছে। চিকিৎসক ও কর্মচারীদের সঙ্গে সম্প্রতি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতের মারামারি ও সংঘর্ষের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার সকাল থেকেই বন্ধ রয়েছে চিকিৎসাসেবা। এতে করে প্রতিদিনই চিকিৎসা নিতে আসা শত শত রোগীকে ফিরে যেতে হচ্ছে।আজ শনিবারও ৩১ মে হাসপাতালটিতে কোনো চিকিৎসাসেবা চালু করা যায়নি। রোগী ও তাদের স্বজনরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। অনেকে আজ সকাল থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও চিকিৎসা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চোখের সমস্যা নিয়ে গড়ে দেড় হাজার চক্ষু রোগী এখানে সেবা নিতে আসেন, কিন্তু টানা চারদিন বন্ধ থাকায় বিপাকে চক্ষু রোগীরা। সরকার থেকে কেনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। সাধারণ জনগণ চিকিৎসাসেবা নিবে কোথা থেকে।অর্থসংকটে বেসরকারি হাসপাতালেও সেবা নিতে পারবো না। এখন আমরা কী করবো।’ অচলাবস্থা কাটাতে গতকাল শুক্রবার হাসপাতালের কয়েকজন সচিব, হাসপাতাল প্রতিনিধি, ছাত্র প্রতিনিধিসহ বৈঠক হলেও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তারা। হাসপাতালটির চিকিৎসাধীন জুলাই যোদ্ধা রোহান আহমেদ বলেন, আমি হাসপাতালেই আছি। সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ আছে। আমাদের খাবার ও ওষুধ বাইরে থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। দুপুরে চিকিৎসা চালুর বিষয়ে বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। গত বুধবারও আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক হয়। বৈঠকে বেশ কয়েকজন উপদেষ্টাসহ এনসিপির নেতা নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও আবু বকর উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আহত ৮-১০ জন জুলাই যোদ্ধাকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করার বিষয়ে তারা সম্মত হয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়,পুরো সেবা কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ করছেন। তাদের ভাষ্য, হাসপাতালের ভেতর জুলাই যোদ্ধাদের কিছু অংশ সহিংস আচরণ করেছে। ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটেছে বারবার। এতে আতঙ্কে রয়েছেন চিকিৎসক ও স্টাফরা।হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসক ও কর্মীরা কাজে ফিরতে অনিচ্ছুক।’চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয় উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তবে এখনও কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি।তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছে দ্রæত চিকিৎসাসেবা চালু করার, তবে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি যেন আবার না ঘটে, সে বিষয়েও সজাগ থাকতে হচ্ছে। 
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়,বর্তমানে ৫০ জন জুলাই যোদ্ধা হাসপাতালে ভর্তি। আত্মহত্যার চেষ্টা করা চারজন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজন সিএমএইচে ভর্তি আছেন। এ ছাড়া প্রায় ১৫০ জন সাধারণ রোগী ছিলেন, যারা নিরাপত্তার অভাবে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন।যে ঘটনার জেরে অচলাবস্থা-হাসপাতালের একাধিক সূত্র জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত চার রোগী সঠিক চিকিৎসা না পাওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত ২৫ মে বিষপান করলে উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটে। এরপর ২৭ মে পরিচালকের কক্ষে গিয়ে আরেক আহত শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এতে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়; তৈরি হয় অবিশ্বাসের আবহ। এরপর গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে পরিস্থিতি ভয়াবহ অবস্থায় যায়। হাসপাতালে ভর্তি জুলাই যোদ্ধা, কর্মচারী এবং রোগীদের সঙ্গে থাকা স্বজনদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়।উল্লেখ্য,হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় এসব রোগীকে এখন অন্যান্য হাসপাতালে ছুটতে হচ্ছে।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!