নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রæয়ারি সারাদেশের ৩০০ আসনে একযোগে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।সাথে গণভোটও হবে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তার ভাষণটি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে সম্প্রচার করা হয়।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী,মনোনয়ন জমার শেষ তারিখ ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়ন যাচাই-বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ১১ জানুয়ারি। আপিল নিষ্পত্তি ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনী প্রচার শুরু ২২ জানুয়ারি। প্রচার চলবে ১০ ফেব্রæয়ারি সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত।
দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট সাদা-কালো এবং গণভোটের ব্যালট গোলাপি রঙের হবে।
গত বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টায় নির্বাচন ভবনে সিইসির তফসিল ঘোষণার ভাষণ রেকর্ড করে বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতার। তার আগে দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে কমিশন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে। সাক্ষাৎকালে তারা নির্বাচন ও গণভোটের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। রাষ্ট্রপতি এতে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
সৌজন্য সাক্ষাৎকালে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব খান মো. নূরুল আমীন এবং রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আদিল চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে ঘিরে সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা আলোচনা চলছিল। তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে সবকিছুর অবসান হয়েছে এবং এখন নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করছে দেশ।
এ নির্বাচনে প্রবাসীরাও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। সিইসি যখন তফসিল ঘোষণা করছেন তখন তিন লাখের বেশি প্রবাসী অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন।
সংসদীয় আসনে পরিবর্তন-তফসিল ঘোষণার আগে সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে ইসি। আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী এ পরিবর্তন আসছে। সীমানা নিয়ে আপিল বিভাগের রায়ে বলা হয়, রিট আবেদনে সংযুক্ত গত ৪ সেপ্টেম্বরের গেজেট নোটিফিকেশনের (ইসির প্রজ্ঞাপন) সংসদীয় আসন নম্বর ৯৫ (বাগেরহাট-১), আসন নম্বর ৯৬ (বাগেরহাট-২), আসন নম্বর ৯৭ (বাগেরহাট-৩) ও আসন নম্বর ১৯৮ (গাজীপুর-৬) গঠন-সম্পর্কিত অংশটুকু অবৈধ, আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হলো।এ বিষয়ে এর আগে হাইকোর্টের রায়ে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে ইসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই রায়ে বলা হয়, সর্বশেষ ২০২২ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে ২০২৩ সালের ১ জুলাই উল্লেখিত গেজেট অনুসারে আগের মতো সংসদীয় আসন নম্বর ৯৫ (বাগেরহাট-১), আসন নম্বর ৯৬ (বাগেরহাট-২), আসন নম্বর ৯৭ (বাগেরহাট-৩) এবং আসন নম্বর ৯৮ (বাগেরহাট-৪) পুনর্বহাল করে গেজেট প্রকাশ করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
ভোটের পথে তফসিল থেকে ভোটের দিনের ব্যবধান প্রম সংসদ নির্বাচনে ৬০ দিন, দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৪ দিন, তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৭দিন, চুতর্থ সংসদ নির্বাচনে ৬৮দিন, পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ৫২ দিন, ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে ৩৯দিন, সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ৪৭ দিন, অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ৪২ দিন, নবম সংসদ নির্বাচনে ৩৭ দিন, দশম সংসদ নির্বাচনে ৪২ দিন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪৯ দিন ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৫২ দিন সময় ছিল।
সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল হয়েছিল ২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর, আর ভোট হয় পরের বছরের ৭ জানুয়ারি, ব্যবধান ছিল ৫৩ দিন। মনোনয়নপত্র জমার সময় ছিল ১৪ দিন, বাছাই ছিল ৪ দিন, প্রত্যাহারের শেষ সময়ের জন্য ছিল ১৩ দিন (এরমধ্যে আপিল দায়ের ৫ দিন, নিষ্পত্তি ৬ দিন)। আর প্রতীক বরাদ্দ পেয়ে প্রচারণার সময় ছিল ১৯ দিন এবং প্রচার শেষের ৪৮ ঘণ্টা পর ভোট। সেই ভোটগ্রহণ হয় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।ছবি-সংগৃহীত

ডেইলি খবরের সর্বশেষ নিউজ পেতে Google News অনুসরণ করুন।
আপনার মতামত লিখুন :