সোমবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

ভূমিকম্পের কাপুঁনিতে কাপঁছে রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্টানের সবাই

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৪, ২০২৫, ০৯:৩৬ এএম

ভূমিকম্পের কাপুঁনিতে কাপঁছে রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্টানের সবাই

দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরপর চার দফা ভূমিকম্প ও মৃদু কম্পনের প্রভাবে দেশের শিক্ষা কার্যক্রমে বড় ধরনের ‘অস্থিরতা’দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করেছে। ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে রাজধানীর একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। শেিিণ কার্যক্রম চালু থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটার আতঙ্ক আরও বেড়েছে পুরাতন ভবনগুলোর ফাটল আর আস্তর খসে পড়ে যাওয়ায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,ভূমিকম্প শুধু স্থাপনার ক্ষতি বা পাঠদান ব্যাহতই করে না, এটি শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য, উপস্থিতি, শেখার পরিবেশ এবং সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার গতিকেও দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাবিত করে।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের সাইকিয়াট্রি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভূমিকম্পের মতো অপ্রত্যাশিত দুর্যোগ শিশুদের ওপর গভীর মানসিক চাপ ফেলে। শিশুরা এমন ঘটনার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তত থাকে না। অনেক সময় তারা ঘটনার পরও সারাক্ষণ ভয় পায়, ঘুমাতে পারে না, বারবার মনে হয় মাটি দুলছে বা ভবন কাঁপছে।’
দেশে গত শুক্র ও শনিবার মোট চার দফা ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে শনিবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে মৃদু মাত্রার একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়, যেটির উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীতে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৩। ওই দিন সন্ধ্যা ৬টা ৬ মিনিটে সেকেন্ডের ব্যবধানে রাজধানীর বাড্ডা ও নরসিংদীর উৎপত্তিস্থল থেকে আরও দুটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে প্রথমটির মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৭ এবং দ্বিতীয়টির ৪ দশমিক ৩। এর আগে শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ৫.৭ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠে দেশ। ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার অদূরে নরসিংদীর মাধবদীতে।
পরপর চারবারের ভূমিকম্পে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় গত শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৫ দিনের ছুটি ঘোষণা করে আবাসিক হল দ্রæত খালি করতে নির্দেশ দেয়। গতকাল রোববার সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে দেখা যায়। এদিকে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীনসহ বিভিন্ন আবাসিক হলের পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু হয়েছে তিন সদস্যের প্রকৌশল দল।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ও চার দিনের ছুটি ঘোষণা করে। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ চারটি হল খালি করার পাশাপাশি ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ,মতিঝিল আইডিয়াল কলেজসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে গতকাল রোববারের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর আরও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর থেকে থেকে জানা যায়, রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলের শতাধিক স্কুল-কলেজের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের পর বহু ভবনে নতুন ফাটল দেখা গেছে, কিছু জায়গায় দেয়াল ও সিঁড়ির অংশ ভেঙেও পড়েছে।
জানতে চাইলে মাউশি মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক বি এম আব্দুল হান্নান বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে আমাদের মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে।’
এদিকে রাজধানীর একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভূমিকম্পের আতঙ্কের কারণে বেশির ভাগ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম। আবার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বার্ষিক পরীক্ষা বাতিল করেছে। জানা যায়, রাজধানীর এজি চার্চ ও বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ একাধিক শ্রেণির পরীক্ষা বাতিল করেছে। এর মধ্যে এজি চার্চ স্কুল লোয়ার শিশু, আপার শিশু এবং ক্লাস ওয়ানের পরীক্ষা বাতিল করেছে। আর একইভাবে বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্লে থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
রাজধানীতে যেসব স্কুল-কলেজ খোলা আছে, সেখানেও গতকাল রোববার শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল কম। জানতে চাইলে প্রভাতী উচ্চ বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক নাহিদ ইসলাম বলেন, আজ (রোববার) অন্যান্য দিনের তুলনায় শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিল কম। আতঙ্কের কারণে হয়তো অভিভাবকেরা শিশুদের স্কুলে পাঠাননি।
একই সুরে কথা বলেছেন ইস্পাহানি বালিকা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) শরমিন শম্পা। তিনি বলেন, সবার মধ্যেই একধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। স্বাভাবিক কারণেই আজ (রোববার) উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম।
এদিকে ভূমিকম্পের মতো ‘অনিশ্চিত পরিস্থিতি’তে দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। গতকাল দুপুরে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাতুলি ইউনিয়নের বাগবাড়ি চৌবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত প্লেগ্রাউন্ড উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গণশিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ভূমিকম্প যেকোনো সময় হতে পারে। তাই আতঙ্ক নয়, বরং সতর্কতা ও প্রস্তুতিই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিদ্যালয়গুলোকে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক নির্দেশনা ইতিমধ্যে পাঠানো হয়েছে।
ভূমিকম্পের আতঙ্কের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা কোনো সমাধান নয় বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক তাহমিনা আক্তার। তিনি বলেন,‘আমি মনে করি,কর্তৃপক্ষের উচিত শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জোর দেওয়া। কারণ, এতে ভীতি দূর হবে। একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো দ্রæত সংস্কার করা উচিত।’
সার্বিক বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) মো. মজিবর রহমান বলেন, শিগগির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একাধিক বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জানান ভুমিকম্পের কাঁপুনিতে যেমন নিজেরাও কাঁপছি তেমরনি ট্রমায় আছি। ছবি-সংগৃহীত

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!