প্রজন্ম বদলেছে। বদলেছে শখ। কিন্তু আকাশে ওড়ার শখটা মানুষের চিরন্তন। বড় হয়ে কী হতে চাও প্রশ্নের জবাবে শিশুরা অবলীলায় বলে পাইলট। পাইলটের জীবন তাদের কাছে রূপকথার মতো।
কিন্তু পাইলটদের জীবন রূপকথার মতো সুন্দর হয় কী করে! মেঘের ওপরে অসীম নীল আকাশে একাকিত্ব তাদের প্রতি মুহূর্তের সঙ্গী। ককপিটে সেকেন্ডের ভগ্নাংশে তাদের নিতে হয় জটিল জটিল সিদ্ধান্ত। ক্ষীপ্র বুদ্ধিতে রক্ষা করতে হয় শত যাত্রীর প্রাণ। অনেক সময় যাত্রীদের বুঝতেই দেন না, কত কাছাকাছি এসেও শীতল মৃত্যু ছুঁতে পারেনি তাদের। ক্ষণিকের ভুল শুধু যাত্রীদের নয়, ডেকে আনে নিজের মৃত্যুও। কিন্তু এমন মৃত্যুর হাত থেকে যাত্রীদের বাঁচিয়ে আনেন পাইলটরা।
বিমানে নানা অনিয়ম হয়। মেধাবীদের বঞ্চিত করে নিয়োগ দিতে গিয়ে জেলে যান কর্তারা। অতিরিক্ত ব্যয় দেখানোর অভিযোগ বেশিরভাগ অডিট রিপোর্টে। অত্যাধুনিক এয়ারক্রাফটগুলোর সক্ষমতা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। যত্ন আর অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা দামের একেকটা উড়োজাহাজ। পদে পদে এসব অনিয়ম হলেও বিমানের পাইলটদের দক্ষতা প্রশংসনীয়। সাহসী এই পাইলটদের নিজেদের করে নিতে চায় বিশ্বের নামিদামি এয়ারলাইনসগুলো।
অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘এটা ঠিক, বিমানে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। আশির দশকে একটা দুর্ঘটনা হয়েছিল। তারপরের দুর্ঘটনা ছোট ছোটই। পাইলটরা দক্ষতার সঙ্গে অল্পতেই পরিস্থিতি সামাল দেন। কিন্তু তাদের আরও প্রশিক্ষণ দরকার। প্রশিক্ষণ শুধু দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার জন্য নয়, ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বা নতুন প্রযুক্তি রপ্ত করার প্রশিক্ষণ দরকার। অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি যতটা বেড়েছে, সেই তুলনায় জনবল নেই। বিমানে যে ব্যক্তি যে কাজের জন্য দক্ষ, তার হাতে সেই দায়িত্ব নেই। এ কারণে বিমান এগোতে পারছে না।’
দেশের বিমান চলাচলের ইতিহাস খুব পুরনো নয়। তারপরও হামাগুড়ি দিতে দিতে তা ৫৩ বছরে পৌঁছে গেছে। এর মধ্যে বেসরকারি এয়ারলাইনসের যাত্রা আরও কম সময়ের। কিন্তু কম সময়েও তারা সবচেয়ে ভয়ংকর দুর্ঘটনার জন্ম দিয়েছে। দেশের অ্যাভিয়েশন ইতিহাসে বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস বাংলা আকাশ পথে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। দুর্ঘটনার কথা এলেই আসে এয়ার পারাবতের নাম। তাদের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের মেয়ে পাইলট ফারিয়া লারা। এর কয়েক বছর পর দুর্ঘটনায় আরেক পাইলট মুখলেছুর রহমান সাকিব নিহত হলে আর উড়তে পারেনি এয়ার পারাবত।
এদিক থেকে সরকারি মালিকানাধীন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ভয়ংকর কোনো দুর্ঘটনা ঘটায়নি। ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটলেও তাতে প্রাণহানি কম। বেসরকারি আকাশ পরিবহন সংস্থাগুলো না পারলেও সরকারি সংস্থা বিমান মোটামুটি আস্থা তৈরি করতে পেরেছে।
দেশ মানে দ্বেষ নয়। আর বিমান মানেই বদনাম নয়। যদিও বিমানের নেতিবাচক বিষয়গুলোই সবচেয়ে বেশি প্রচার হয়। এই নেতিবাচক প্রচারের আড়ালে চাপা পড়ে বিমানের পাইলটদের সাহস আর তীক্ষè বুদ্ধিমত্তা। যেখানে বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়ে অন্তর্যামীর হাতে নিজেকে সঁপে দেন সেখানে অসীম বীরত্বে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে যাত্রীদের প্রিয়জনের সান্নিধ্যে ফিরিয়ে দেন।
সর্বশেষ গত ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ঈদের দিন দুর্ঘটনায় পড়েছিল বিমানের ৭৩৭ মডেলের বোয়িংয়ের একটি উড়োজাহাজ। কাঠমান্ডুগামী ফ্লাইট বিজি-৩৭১ উড্ডয়নের সময় চাকা ফেটে যায়। রানওয়ের মধ্যে থাকা একটি লাইটবক্সের কারণে এ ঘটনা ঘটে বলে মনে করা হচ্ছে। উড়ালের ঠিক আগ মুহূর্তে হওয়ায় ক্যাপ্টেন উড়াল বন্ধ করতে পারেননি। এ কারণে চাকার ফেটে যাওয়া টায়ার নিয়েই উড়োজাহাজটি আকাশে উঠে যায়। বিপদ টের পেয়ে কিছুক্ষণ পরই পাইলট নেমে আসার অনুমতি চান। দুই পাইলটের দক্ষতায় বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করতে পারলেও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ওই ফ্লাইটে ছিলেন ক্যাপ্টেন তাপস আহমেদ ও ক্যাপ্টেন মাইনুল হোসেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো তদন্ত কমিটি গঠনের খবর পাওয়া যায়নি।
বিমানের ফ্লাইট অপারেশন সূত্রে জানা যায়, ক্যাপ্টেন তাপস আহমদের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে যে পাইলটের যাওয়ার কথা ছিল তিনি কাঠমান্ডু যাননি। ক্যাপ্টেন সঙ্গী করেছেন তারই ব্যাচমেট বন্ধু ক্যাপ্টেন মাইনুল হোসেনকে। যে পাইলটের যাওয়ার শিডিউল ছিল তিনি কেন যাত্রা বাতিল করেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন করেনি বিমানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। নির্দিষ্ট পাইলট স্বেচ্ছায় যাত্রা বাতিল করেছিলেন, নাকি তাকে ফ্লাই না করতে বাধ্য করা হয়েছে। এসব নিয়ে বিস্তর কানাঘুষা বিমানের পাইলটদের মধ্যে। ওই এয়ারক্রাফটের ট্যাংকভর্তি তেল পোড়াতে ঢাকার আকাশে চক্কর দিতে হয়েছে। তদন্তের আগেই বিমান দোষ চাপানোর চেষ্টা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিভিল অ্যাভিয়েশনের ওপর।
বিমানে পাইলটদের মধ্যে স্বজনপ্রীতি মারাত্মক। কর্মরত কোনো পাইলটের আত্মীয় না হলে নতুন পাইলট হিসেবে চাকরি পাওয়া যায় না। তাই প্রায় সব শিশুর স্বপ্ন পাইলট হলেও সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ নেই। বিমানের সার্ভিস রেগুলেশন অনুযায়ী ক্যাডেট পাইলট নিয়োগের বিধান রয়েছে। ক্যাডেট পাইলট হচ্ছে বিভিন্ন ফ্লাইং একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাইলট। এই প্রশিক্ষণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই সাধারণ আয়ের মানুষদের পক্ষে মেধাবী হলেও পাইলট হওয়া সম্ভব হয় না। এখানে একমাত্র ভরসা বিমানবাহিনী। তারা যাদের লং কোর্সে পাইলট নিয়োগ দেয়, তারা অত্যন্ত মেধাবী ও সাহসী। বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাদের নিয়োগ করা হয়। ওখানে ধনী-গরিব কোনো বিষয় না। বিমানবাহিনী থেকে যারা আসেন, তাদের হাত ধরেই বাণিজ্যিক সংস্থা বিমানের পাইলটদের এত সুনাম। তাদের নিয়ে টানাটানি করে বিশ্বের বড় এয়ারলাইনসগুলো।
অ্যাভিয়েশন সেফটি নেট (এএসএন) বলছে, দেশ-বিদেশে বাংলাদেশি যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা আছে অন্তত ৩৫টি। দেশে প্রথম বিমান দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৭২ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি। ঢাকায় ডগলাস ডিসি-৩ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে চারজন ক্রুর মধ্যে তিনজন নিহত হন। বিমানের উড়োজাহাজ দ্বিতীয়বার দুর্ঘটনায় পড়ে ১৯৭৯ সালের ১৮ নভেম্বর। ওইদিন বিমানের একটি ফকার এফ-২৭ উড্ডয়নের পর সাভারে দুটি ইঞ্জিনেই আগুন ধরে যায়। পরে পাইলট উড়োজাহাজটি কাছাকাছি একটি মাঠে জরুরি অবতরণ করান। এ দুর্ঘটনায় মেরামতের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল উড়োজাহাজটি।
তৃতীয় দুর্ঘটনাটি ঘটে ১৯৮০ সালের ৩ এপ্রিল। বিমানের বোয়িং-৭০৭-৩৭৩সি উড়োজাহাজটি সিঙ্গাপুরের বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর ১০০ মিটার উচ্চতায় ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে আবার রানওয়ের দিকে ফিরিয়ে আনা হয়। অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট দূরত্বে পিছলে যায়। এ দুর্ঘটনায়ও মেরামতের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল উড়োজাহাজটি।
১৯৮৪ সালে ঢাকায় বিমানের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটে। তাতে নিহত হন ৪৫ যাত্রী ও ক্রু। ওই ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন ছিলেন সৈয়দা কানিজ ফাতেমা রোকসানা। তিনি ছিলেন বিমানের প্রথম নারী পাইলট। ১৯৮৪ সালের ৪ আগস্ট তিনি চট্টগ্রাম থেকে ফকার এফ-২৭ উড়োজাহাজ নিয়ে ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনায় পড়েন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন একজন ব্রিটিশ নাগরিক, একজন জাপানি ও ৩৩ বাংলাদেশি, যারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে দেশে ফিরছিলেন। তুমুল বৃষ্টির মধ্যে ফ্লাইটটি দুবার অবতরণের চেষ্টা করেও রানওয়ে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়, তৃতীয়বার অবতরণের চেষ্টার সময় বিমানটি রানওয়ে থেকে ৫০০ মিটার আগেই জলাভূমিতে বিধ্বস্ত হয়।
১৯৯১ সালের ১৫ জুন বাংলাদেশ বিমানের একটি এফ-২৮ উড়োজাহাজ রাজশাহী বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ১৯৯২ সালে ঢাকায় একটি এটিপি উড়োজাহাজ, পরের বছর ডিসি-১০ ঢাকায় দুর্ঘটনায় পড়ে।
তবে এগুলোর বেশিরভাগই ছিল ছোটখাটো অসংগতি। এসবে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
২০১৬ সালে চট্টগ্রামের উদ্দেশে বিজি ১২২ ফ্লাইট নিয়ে উড্ডয়নের পরপরই ওমানের মাসকাট বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার থেকে ক্যাপ্টেন নওশাদ আবদুল কাইয়ুমকে জানানো হয়, রানওয়েতে চাকার কিছু অংশ পড়ে আছে। এ অবস্থায় ক্যাপ্টেন ফ্লাইটটি চট্টগ্রামের পরিবর্তে ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় তার অনুরোধে ঢাকায় জরুরি অবতরণের জন্য সব ধরনের সতর্ক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। ক্যাপ্টেন দক্ষতার সঙ্গে নিরাপদে ফ্লাইটটি অবতরণ করান। ১৪৯ যাত্রী এবং ৭ জন ক্রু নিরাপদে উড়োজাহাজ থেকে বের হয়ে আসেন। পাইলটদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব এয়ারলাইনস পাইলটস অ্যাসোসিয়েশন ক্যাপ্টেন নওশাদের প্রশংসা করে। এই ক্যাপ্টেনই গত ২৭ আগস্ট ওমানের মাসকাট থেকে ফ্লাইট নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে আসছিলেন। মাঝ আকাশে বুকে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেন। ফার্স্ট অফিসার ফ্লাইটটি কলকাতায় নামান। হাসপাতালে নেওয়ার পর ক্যাপ্টেন নওশাদ আবদুল কাইয়ুম মারা যান।
২০১৭ সালের ৭ জুন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের মুহূর্তে দুর্ঘটনায় পড়ে বিমানের বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ। বিমান ফ্লাইটটির ককপিটে ছিলেন ক্যাপ্টেন শোয়েব আলী।
২০১৫ সালের ২৮ মার্চ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় আসার পথে দুর্ঘটনায় পড়ে বিমানের উড়োজাহাজ। চট্টগ্রাম থেকে ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে দ্বিতীয় ইঞ্জিনে আগুনের সংকেত পান ক্যাপ্টেন। সে যাত্রায়ও ক্যাপ্টেনের দক্ষতায় নিরাপদে অবতরণ সম্ভব হয়। ওই সময় পুরো বিমানবন্দরে জারি করা হয়েছিল হাইসিকিউরিটি অ্যালার্ট।
এর আগে ওই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয় বিমানের বোয়িং-৭৭৭-২০০ ইআর উড়োজাহাজ। ২৪১ যাত্রী নিয়ে দুই ইঞ্জিনের উড়োজাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে ওইদিন রাত ১২টা ৩৩ মিনিটে দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা হয়। উড্ডয়নের মাত্র ৮ মিনিটের মাথায় হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। তাতে সব যাত্রী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম ঘোষণা দেন, একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেছে। অন্য ইঞ্জিনটি দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করে উড়োজাহাজটি নিয়ে নিরাপদে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন ক্যাপ্টেন।
একইভাবে ২০১৪ সালের ২৮ মার্চ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় আসার পথে দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয় বিমানের এয়ারবাসের এ-৩১০ উড়োজাহাজ। ওই ফ্লাইটে ছিলেন ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ সালেহ ও ক্যাপ্টেন ইয়ামেনী। উড্ডয়নের পর দুই পাইলট ইঞ্জিনে আগুনের সতর্কসংকেত পান। তবে এতে বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এ ছাড়া ১৯৯৭ সালের ২২ ডিসেম্বর কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার সময় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে বেলি ল্যান্ডিং বা চাকা ছাড়াই অবতরণ করে বিমানের একটি ফকার এফ-২৮ উড়োজাহাজ। এ দুর্ঘটনায়ও মেরামতের অযোগ্য হয়ে পড়ে উড়োজাহাজটি। একইভাবে ২০০৪ সালের ৮ অক্টোবর ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় ওসমানী বিমানবন্দরের রানওয়ে পার হয়ে ১৫০ ফুট দূরে ১৫ ফুট গর্তের মধ্যে ঢুকে পড়ে বিমানের একটি ফকার এফ-২৮ উড়োজাহাজ।
২০০৫ সালের ১ জুলাই দুর্ঘটনায় পড়ে বিমানের ডিসি-১০-৩০ ইআর উড়োজাহাজ। উড়োজাহাজটি ঢাকা-চট্টগ্রাম-দুবাই আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করত। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় অবতরণ করতে গিয়ে উড়োজাহাজটি ডান দিক হেলে যায় ও একটি ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন উড়োজাহাজের সব যাত্রী।
এ ছাড়া ২০০৭ সালের ১২ মার্চ দুর্ঘটনায় পড়ে বিমানের এয়ারবাস এ-৩১০-৩০০ উড়োজাহাজ। দুবাই থেকে উড্ডয়নের সময় সামনের ল্যান্ডিং গিয়ার অকেজো হয়ে যাওয়ায় উড়োজাহাজটি বিমানবন্দরের রানওয়ের শেষ প্রান্তে গিয়ে থেমে যায়।
২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ছিনতাইচেষ্টার কারণে বিমানের বিজি-১৪৭ ফ্লাইটটি চট্টগ্রামে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে টানা দুই ঘণ্টা সংকটময় মুহূর্ত অতিবাহিত করে। তবে বিমানের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজের ১৪৩ যাত্রীর সবাই নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। এ ঘটনায় ক্যাপ্টেন গোলাম শাফি ও ফার্স্ট অফিসার মোনতাসির মাহবুবকে অভিনন্দন জানায় বিশ্বব্যাপী কর্মরত পাইলটদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব এয়ারলাইনস পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনস (ইফালপা)।
হাল আমলে দেশে বিমান চলাচলকারী বেড়েছে। আগে যা ছিল ধনীর বাহন, এখন তা সবার। ধনীর চেয়ে গরিবরাই বেশি বিমানে চড়েন। বিশেষ করে প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য বিমান আর কোনো বিশেষ বাহন নয়। তাদের সুবাদে বিমানযাত্রার রোমাঞ্চকর কাহিনি এখন মুখে মুখে। ২৯ হাজার ফুট ওপরে চলা উড়োজাহাজটা হঠাৎ কীভাবে হুড়মুড়িয়ে ২৪ হাজার ফুটে নিচে নেমে আসে। আকাশসীমায় এই পাঁচ হাজার ফুটে অন্য যে কোনো বিমান থাকার সম্ভাবনা ছিল। কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ প্রচন্ড শব্দ এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে পুরো কেবিন ধোঁয়ায় ভরে যাওয়ার গল্প। ধোঁয়ার কারণে পুরো কেবিন মৃত্যুপুরী হয়ে যায়। যাত্রীরা মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। তারপর জরুরি দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং যাত্রীরা বের হয়ে আসেন। পাইলট যাত্রীদের সহায়তা চান অনেক সময়। কিন্তু যাত্রী পাইলটের ওই সহায়তা চাওয়ার মধ্যে বিপদের গন্ধ পান।
শক্ত প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে পাইলট যখন নিরাপদে ল্যান্ড করেন, তখন সে যে কী আনন্দ! আহা জীবনকে হারাতে গিয়েও ফিরে পাওয়া। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা সে কী অনুভূতি। অক্ষত ফিরেও চারদিকে কান্নার রোল পড়ে যায়। সেই আনন্দ অশ্রুর মাঝেই কোনো যাত্রী হাত তালি দিয়ে পাইলটকে জড়িয়ে ধরেন। আনন্দের আতিশয্যে কোলে তুলে নাচতে থাকেন। তাদের আনন্দে পাইলটের গলাটাও ভারী হয়ে ওঠে। তা লুকিয়ে দ্রুত তৈরি হন পরের গন্তব্যের জন্য।
আপনার মতামত লিখুন :