শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি মেনে নিয়েছে সরকার, আমরাও ঘরে ফিরে যাব’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২৫, ১২:১১ এএম

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি মেনে নিয়েছে সরকার, আমরাও ঘরে ফিরে যাব’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন বলেছেন, জবি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছে অন্তর্র্বতী সরকার। এখন আর কমপ্লিট শাটডাউনের দরকার নেই, কাল থেকে আমরা আমাদের ঘরে ফিরে যাব। শুক্রবার (১৬ মে) সন্ধ্যায় সরকার দাবি মেনে নেওয়ায় আন্দোলন প্রত্যাহার করে গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন তিনি।অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সুনির্দিষ্ট দাবি নিয়ে গত দুই দিন ধরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আলোচনা হয়েছে। গতকাল রাত আড়াইটার সময় আমাদের প্রতিনিধিকে ডাকা হয়েছিল। আমি আমার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সেখানে অংশ নিয়েছি। সেখানে কিছু বিষয় আমার কাছে অস্পষ্ট ছিল। আমি প্রশ্ন করেছি, আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। সেখান থেকে চলে এসেছি। পরে আমাদের অন্ত অবস্থার কারণে সরকার আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডাকে। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তার দিকনির্দেশনার আলোকেই সংশ্লিষ্ট অর্থ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমাদের ডাকা হয়েছিল। আমরা সেখানে তিনজন গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যে দাবি ছিল সরকার সে দাবির প্রতি সহমত পোষণ করেছে। তবে আমরা অনেক দেখেছি করব, করা হবে। আমরা দাবির বাস্তবিক প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের প্রত্যেকটি দাবি পূরণ হয়েছে। যারা এই দাবি আদায়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদের নাম ইতিহাসে লেখা থাকবে।’
জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা সামনের জুনের বাজেটে সেই প্রতিফলন দেখব। আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অতি দ্রæত বাস্তবায়ন হবে। আমরা আমাদের ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা সবাই সন্তুষ্ট। আমরা ঘরে ফিরে যাব। সুস্পষ্ট বাস্তবায়ন হয়েছে, আমরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছি তবে পরবর্তীতে গড়িমসি দেখলে আবার রাস্তায় নামবে ছাত্র-শিক্ষকরা। এর ধারাবাহিকতা পরবর্তী বাজেটগুলোতে যাতে অব্যহত থাকে আমরা সে দাবি জানিয়ে এসেছি। আমাদের সেটাও আশ্বস্ত করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে এসব দাবির বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ড. মো. রইছ উদ্দিন জানান, অর্থ মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টার কার্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। আলোচনার পর জানানো হয়, বিভিন্ন দাবি মেনে নিয়েছে সরকার। আলোচনায় সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালন বাজেট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসে। বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আবাসন সংকট নিরসনে খুব দ্রæত অস্থায়ী হল নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অতি দ্রæত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলেও জানানো হয়।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১৩ মে) দুপুরে দাবি আদায়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদল ইউজিসিতে যায়। কিন্তু ইউজিসি থেকে আশানুরূপ কোনো ঘোষণা না আসায় ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘জুলাই ঐক্য’ সংগঠনের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।পরে বুধবার (১৪ মে) বেলা পৌনে ১২টায় চার দফা দাবি আদায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারের বেশি শিক্ষার্থী প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে রওনা হয়। পদযাত্রা প্রথমে গুলিস্তান মাজার গেট বাধার সম্মুখীন হয়। পরে মৎস্য ভবনে ফের পুলিশের বাধা অতিক্রম করে যমুনা অভিমুখে এগিয়ে যেতে থাকেন জবি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং মোড়ে আসতেই অতর্কিত টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, গরম পানি নিক্ষেপ করতে শুরু করে পুলিশ। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হন।
আজ টানা তৃতীয় দিন রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল থেকে কাকরাইলে গণঅনশনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যায় আন্দোলনস্থলে এসে পানি পান করিয়ে আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের গণঅনশন ভাঙেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এসএমএ ফাওয়জ।এ সময় অধ্যাপক এসএমএ ফায়েজ বলেন, সরকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছে।

 

 

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!