বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩ আশ্বিন ১৪৩২

ট্রাইব্যুনালে নাহিদ ইসলাম:ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতেই গণহত্যা চালিয়েছিলেন শেখ হাসিনা

আইন-অপরাধ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ০৪:২৫ পিএম

ট্রাইব্যুনালে নাহিদ ইসলাম:ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতেই গণহত্যা চালিয়েছিলেন শেখ হাসিনা

যেহেতু শেখ হাসিনা তৎকালীন সরকার প্রধান ছিলেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান ছিলেন, সেহেতু তাদের নির্দেশেই জুলাই-আগস্টে হত্যাকান্ড ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। তারা ক্ষমতা পাকাপোক্ত ও নিরঙ্কুশ করতেই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি’র (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
জুলাই গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্য দিয়েছেন নাহিদ ইসলাম। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন ২ সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। বেলা ১টা ৩০ মিনিটে তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এরপর বেলা ২টা ৩০ মিনিটে তাকে আসামি পক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেনের জেরা করবেন।
জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আমাকে গুম করে জিজ্ঞাসাবাদের সময় হাতে হ্যান্ডকাফ ও চোখে কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখত। নির্যাতনে আমি কয়েকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে আমাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় পূর্বাচলে ফেলে আসে। সেখান থেকে আমার বনশ্রীর বাসায় যাই। পরবর্তীতে চিকিৎসার জন্য গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি হই। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় প্রেস ব্রিফিং করে আমাকে গুম ও নির্যাতনের কথা প্রকাশ করি। তখন আমি আরও জানতে পারি যে, অন্যান্য সমন্বয়কদেরকেও গুম করে রাখা হয়েছে। সমন্বয়ক হাসনাত, সাজিস ও হাসিবকে ডিজিএফআই জোর করে তুলে নিয়ে ৩জন মন্ত্রীর সঙ্গে বসিয়েছে। সেই ছবি মিডিয়ায় প্রচার করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘‘পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা গত বছরের ৪ আগস্ট রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান ও বিক্ষোভ করি। ওই দিনই ৬ আগস্টে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করি। তবে সেদিন কারফিউ ঘোষণা করে দেশব্যাপী ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায় সরকার। আমরা জানতে পারি, ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ব্যর্থ করার উদ্দেশ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। একইসঙ্গে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হবে। এছাড়া আমাদের হত্যা বা গুম করা হতে পারে। এজন্য আমরা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি একদিন এগিয়ে ৫ আগস্ট নির্ধারণ করি।’’
তিনি বলেন,‘‘৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি সফল করার উদ্দেশ্যে সমন্বয়কদের পক্ষে অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে লিঁয়াজো করছিলেন মাহফুজ আলম (বর্তমানে তথ্য উপদেষ্টা)। আমরা নতুন সরকার গঠনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের (বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টা) সঙ্গে আলোচনা করি। তাকে নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালনের প্রস্তাবও দেই।’’
তিনি আরও বলেন, ‘৫ আগস্ট সারাদেশের মানুষ ঢাকায় আসতে থাকে। আমরা শাহবাগে অবস্থান গ্রহণের চেষ্টা করি। শহীদ মিনার ও চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপরে পুলিশ গুলি চালায়। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী রাস্তা থেকে সরে গেলে আমরা শাহবাগে অবস্থান করি। শাহবাগ তখন জনসমুদ্রে পরিণত হয়। আমরা শুনতে পাই ঢাকার প্রবেশমুখগুলো যেমন-যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, গাজীপুর, সাভার ও আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে লাখ লাখ মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করেছে।’
তিনি বলেন,‘পরে আমরা শাহবাগ থেকে মিছিল নিয়ে গণভবনের দিকে রওনা করি। পথিমধ্যে সংবাদ পাই যে, গণ-বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে ভারতে পালিয়ে গেছেন। আমরা আরও শুনতে পাই যে, ছাত্র-জনতা গণভবনে প্রবেশ করেছে। পরে সন্ধ্যায় আমরা সংবাদ সম্মেলন করে অন্তর্র্বতীকালীন জাতীয় সরকার ও রাজবন্দীদের মুক্তির দাবি জানাই। আমরা কোনো ধরনের সেনাসমর্থিত শাসন মেনে নিবো না বলে ঘোষণা দেই।’

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!