বিচারকদেরও জবাবদিহিতা থাকা উচিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।রোববার (১২ অক্টোবর) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের একপর্যায়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন ট্রাইব্যুনাল।
এদিন দুপুর পৌনে ১২টা থেকে আলোচিত এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে মামলার বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের কর্মকান্ড ট্রাইব্যুনালের সামনে আনেন তিনি।
একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অব জুডিশিয়াল রয়েছে। কিন্তু জাজদের অ্যাকাউন্টেবিলিটির কোনো ব্যবস্থা নেই। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা পড়ে আছে, আমরা বিচার করতে পারছি না। জনগুরুত্বপূর্ণ মামলা রেখে সরকারের অথরিটি পালন করছেন।
বিচারকদের একটা সিস্টেমের মধ্যে আসতে হবে উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, বিচারের নামে স্বাধীনতা মানে তো আপনি যা খুশি তা করবেন এটা না, এটার নাম স্বাধীনতা না। জুডিশিয়াল কাউন্সিলেরও যদি কেউ অফেন্স (অপরাধ) করে তাদেরও জবাবদিহিতা বা বিচারের আওতায় আনার একটা সিস্টেম থাকতে হবে।
পরে সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এসব বলেছেন। বিগত সরকারের সময় বিচারের নামে বিচারকরা স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় েিয়ছেন। আমরা আজ সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের প্রতারণার কথা তুলে ধরেছি। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের সময় যে জাজমেন্ট প্রথমে ওপেন কোর্টে দেয়া হয়েছিল, পরবর্তীতে চূড়ান্ত রায়ের সময় সেই রায়ের অংশটুকু বাতিল করে দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। প্রধান বিচারপতির মতো আসনে অধিষ্ঠিত থেকে তিনি এই স্বেচ্ছাচারী কাজ করেছেন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন,এই বিচারকরা গুরুত্বপূর্ণ মামলা ফেলে রেখে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী অগুরুত্বপূর্ণ মামলাকে বিচারের জন্য নিয়ে আসতেন। কাউকে ফাঁসি দেয়ার প্রয়োজনে সেই মামলাকে আগে নিয়ে আসা, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অন্য মামলাকে পেছনে ফেলে দেয়া এই বিচারকদের স্বেচ্ছাচারিতা। এটা রোধ করতে সাংবিধানিক অথবা আইনি ব্যবস্থা থাকা উচিত বলে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান অভিমত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন- বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের কাছেও তিনি অভিমত পাঠিয়েছিলেন। আমরা যখন সাবমিশন (দাখিল) রাখছিলাম যে, বিচার ব্যবস্থাকে এইভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল এবং বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করেই বাংলাদেশের স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল, তখন তিনি এই কথাটা বলেছেন যে, এই বিচারপতিদের অথবা বিচারকদের ব্যাপারেও সুনির্দিষ্ট বিধান থাকা উচিত। যেন ভবিষ্যতে তারা আর কখনও এমন হতে না পারেন।ছবি-সংগৃহীত
আপনার মতামত লিখুন :