বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩ আশ্বিন ১৪৩২

নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে অবহেলা-অপরাধে সাজা বাড়ছে

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ০৯:১৯ পিএম

নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে অবহেলা-অপরাধে সাজা বাড়ছে

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মো. শফিকুল আলম বলেছেন,  নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ২টি অধ্যাদেশ খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হবে, কাজে গতি আসবে। আর যে সব কর্মকর্তা নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত তারা আইন ও বিধি ভঙ্গ করলে শাস্তির আওতায় আনা যাবে। 
বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক এ সিদ্ধান্ত হয়। বিকালে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব এ সব কথা বলেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ফয়েজ আহম্মদ।
প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তা সংক্রান্ত আইন (বিশেষ প্রধান আইন, ১৯৯১ সালের ১৩ নম্বর আইন) এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন (২০০৯ সনের ৫ নম্বর আইন) সংস্কারের প্রস্তাব অনুমোদ হয়েছে। অধ্যাদেশ এর  ফলে নির্বাচন কমিশনের কাজে গতি পাবে। 
নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন-১৯৯১ এর সংশোধনীতে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন বা কমিশনের দেওয়া ক্ষতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, রিটার্নিং অফিসারের কোনো আদেশ, নির্দেশ পালনে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যর্থ হলে, অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলে অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো আইনের বিধান লঙ্গন করলে বা কোনো অপরাধ করলে, কর্তব্যে অবহেলা করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। আসদাচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।
অপরাধ প্রমাণিত হলে এক বছরের কারাদন্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। কমিশনের দেওয়া শাস্তি বা দন্ড কার্যকর করা না হলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদন্ড সর্বনিম্ন এক বছরের কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। 
আসদাচরণের শাস্তি হিসেবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরি থেকে অপসারণ বা বরখাস্ত করতে পারবে। চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান করতে পারবে। এমন কি অপরাধীর পদাবনত ও দুই বছরের জন্য বেতন বৃদ্ধি স্থগিত করতে পারবে। অন্য কোনো আইনে উল্লিখিত অপরাধের শাস্তি দেওয়া হলেও এ সব অপরাধের শাস্তি এই আইনে পুনরায় প্রদান প্রতিবন্ধক হবে না। অর্থাৎ অন্য আইনে ওই সব অপরাধের বিচার করা হলেও নির্বাচন কর্মকর্তা( বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশে শাস্তি দেওয়া বিধান ব্যাহত বা বারিত করবে না। অপরাধী শাস্তি পাবেই। 
সংশোধিত অধ্যাদেশে আরও বলা হয়, অসদারচণ করলে কমিশন বা কমিশনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি কমিশনের সম্মতিক্রমে রিটার্নিং কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক শাস্তি হিসাবে দুই মাসের জন্য বরখাস্ত করতে পারবে। এই শাস্তি দন্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের দেওয়া দন্ড হিসেবে গণ্য ও কার্যকর হবে। অসদাচরণের জন্য কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলে ওই প্রস্তাব পাওয়ার ১ মাসের মধ্যে শান্তি নিশ্চিত করে তা কমিশনকে অবহিত করতে হবে।
এই শাস্তির তথ্য তার ব্যক্তিগত নথি, চাকরি বই(সার্ভিস বুক), বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনে লিপিবদ্ধ থাকবে।এ সম্পর্কে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। সরকার ও কমিশনের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রধান্য পাবে। কারো দায়িত্বপালনে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে কমিশন ওই কর্মকর্তা কর্মচারির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
এদিকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ৫ নং আইন) সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এই আইনের দুটি ধারা সংশোধন করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়-সংক্রান্ত ধারা ৩-এর উপধারা (৪) প্রতিস্থাপন করে একটি ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠন করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া উপদেষ্টা পরিষদ এনবিআরের উদ্যোগে প্রণীত অর্থসংক্রান্ত কতিপয় আইন (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। প্রেস সচিব বলেন, এই অধ্যাদেশের আওতায় মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ সংশোধন করে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষ আদেশ দ্বারা ভ্যাট অব্যাহতি প্রদানের বিধান করা হয়েছে। পাশাপাশি আয়কর আইন ২০২৩ সংশোধনের মাধ্যমে সরকারি সিকিউরিটি বা অনুমোদিত সিকিউরিটিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানি করদাতার উৎসে কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত বাস ও পরিবহণ খাতে কর সংগ্রহকে চূড়ান্ত করযোগ্য আয় হিসেবে গণনা করার বিধান সংযোজন করা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে প্রেস সচিব আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন- মন্ত্রণালয় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যে সংস্কার করেছে, সেগুলোর তালিকার প্রোফাইল তৈরি করতে বলেছেন। সংস্কার কমিশনগুলো যে সব বিষয়ে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে, তার চেয়ে বেশি সংস্কারের কাজ মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টারা করেছেন। সেগুলোর একটি প্রোফাইল প্রস্তুত করতে নির্দেশ দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা। মন্ত্রণালয় পর্যায়ে যেসব সংস্কার বিগত কয়েক মাসে হয়েছে সেগুলো বুকলেট আকারে প্রকাশ করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। 
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ৭৭টি অতি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের মধ্যে ২৪টি এরইমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে আরও ১৪টি। বাকি ৩৯টি খুবই দ্রæতগতিতে বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। 
শফিকুল আলম আরও জানান, প্রথম দফায় সর্বমোট ১২১টি সংস্কার বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয়। এরমধ্যে পর্যায়ক্রমে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৭৭টি সংস্কার চিহ্নিত করে বাস্তবায়ন চলছে।
এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাষ্ট্র সফরে চার রাজনৈতিক নেতা সফরসঙ্গী হওয়ার প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন,এবারের জাতিসংঘ অধিবেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংস্থাটির ৮০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে তারা সেখানে যাচ্ছেন।তারা আমাদের অংশীদার। প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণেই যুক্তরাষ্ট্র সফরে তারা সঙ্গী হচ্ছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এখনও সময় পুরিয়ে যায়নি। আলোচনার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান দেবে।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!