আস্থা সংকটে ভুগছে দেশের সাধারন বীমা। দেশের বীমা খাতের এই বেহালদশায় সাধারন বীমাও পরেছে। দুর্ঘটনা বা ক্ষয়ক্ষতির জন্য বীমা করে টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহক। এতে বড় ধরনের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে বীমাশিল্পে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
আইডিআরএর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে ৪৬টি কোম্পানির কাছে মোট দাবি দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬০৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। পরিশোধ করা হয়েছে মাত্র ৩০০ কোটি টাকা, যা মোট দাবির ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। বাকি ৯২ শতাংশ দাবিই অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে। ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিগুলোর কাছে নতুন করে ৩৯২ কোটি ৫৬ লাখ টাকার দাবি উত্থাপন করা হয়।
অন্যদিকে ২০২৫ সালের শুরুতে বা ২০২৪ সাল শেষে নন-লাইফ বীমা খাতে বকেয়া দাবির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৫৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে কোম্পানিগুলো ২৯৫ কোটি ২৯ লাখ টাকার দাবি নিষ্পত্তি করে। চলতি বছর প্রথম প্রান্তিকে নতুন করে ৩৯০ কোটি ১০ লাখ টাকার বীমা দাবি উত্থাপন করা হয়।
২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) নন-লাইফ বীমা খাতে সবচেয়ে বেশি বীমা দাবি পরিশোধ করেছে সাধারণ বীমা করপোরেশন, ৭৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স দাবি পরিশোধ করেছে ২৭ কোটি ২২ লাখ টাকা এবং ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স ১৮ কোটি ১০ লাখ টাকা।
এ ছাড়া গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স ১৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ১৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, ইসলামী কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স ১০ কোটি ৬৬ লাখ টাকার বীমা দাবি নিষ্পত্তি করেছে চলতি বছর দ্বিতীয় প্রান্তিকে।
এ সময়ে সবচেয়ে বেশি বীমা দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সে, ২৭০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। মোট বীমা দাবির ৯৪.২১ শতাংশ অনিষ্পন্ন রয়েছে। এ ছাড়া প্রগতি ইন্স্যুরেন্সে ১৬৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বা ৯২.৩৩ শতাংশ এবং রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সে ১০০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বা ৯২.৩১ শতাংশ বীমা দাবি অনিষ্পন্ন রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ব্যুরো অব বিজনেস রিসার্চের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.শহীদুল জাহীদ বলেন,কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঠিকমতো বেতন-বোনাস নিচ্ছেন।অনেক কোম্পানি সীমার বাইরে ব্যবস্থাপনা ব্যয় করছে। কিন্তু গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করছে না। এটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা, অনৈতিক চর্চা। এ ধারা চলতে থাকলে বীমাশিল্পের ক্ষতি হবে। এজন্য কোম্পানিকে নৈতিকতার ওপর জোর দেওয়ার এবং আইডিআরএর কঠোর ভূমিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তবে নানারকম অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ না হলে বীমাখাত আর সুস্থ হবে না।
আপনার মতামত লিখুন :