শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২

লাইসেন্স বিহীন দালাল চক্রের প্রতারণায় সাধারণ মানুষ, হুমকির মুখে লেবাননের শ্রমবাজার

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫, ০৮:০৬ পিএম

লাইসেন্স বিহীন দালাল চক্রের প্রতারণায় সাধারণ মানুষ, হুমকির মুখে লেবাননের শ্রমবাজার

বিশেষ প্রতিনিধি: বিগত কয়েক বছর ধরে লেবাননে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে চলমান থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে লেবাননের শ্রমবাজারটি উন্মুক্ত হওয়ার পর থেকে রিক্রুটিং এজেন্সি লাইসেন্সবিহীন কতিপয় দালাল চক্র প্রতারণার একটি শক্ত সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয় ও লেবানন দূতাবাসের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এ সকল প্রতারক চক্র ক্ষেত্রবিশেষে বিএম ই টির ওয়ান স্টপ সার্ভিসে সরাসরি যাত্রীর মাধ্যমে অসত্যায়িত ভুয়া ভিসা ও ভুয়া জব কন্টাক্ট লেটার সাবমিট করে বি এম ই টির ছাড়পত্র নিয়ে থাকে বলে সূত্র মতে জানা যায়। এ সকল ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় যাত্রীরা চরমভাবে প্রতারিত হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। 
অন্তর মিয়া, পিতা-ফরিদ মিয়া,পাসপোর্ট নম্বর-অ১৮৭২৯৬০৩, এবং মুসা মিয়া, পিতা-মোঃ চেরাগ আলী, পাসপোর্ট নম্বর-অ১৩৯৫৫৪৪৩ বিগত ৩১/০৮/২০২৫ তারিখে ওয়ান স্টপ সার্ভিস এর মাধ্যমে বিএমইটির ছাড়পত্র নেয়। পরবর্তীতে তারা জানতে পারে তাদেরকে দেওয়া ভিসাটি অসত্যায়িত এবং জাল। এই জাল ভিসার মাধ্যমে বিএমইটির ছাড়পত্র নেওয়ার সাথে সাথে প্রতরক চক্রটি এই দুই ব্যক্তির কাছ থেকে ৯ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। ভুক্তভোগী দুইজন বিষয়টি নিয়ে লেবানন দূতাবাসে অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা জানান তাদেরকে যেভাবে বলা হয়েছে তারা সেভাবে কাজ করেছেন তারা এত কিছু জানেন না। মূলত বিএমইটির ছাড়পত্র পাওয়ার পর পরই তারা আশ্বস্ত হয়েছিলেন যে তাদের সকল কাগজপত্র ঠিক আছে। আর সে মর্মেই তারা আগে থেকেই টাকা লেনদেন করেন। কিন্তু বি এম ই টি ছাড়পত্র পাওয়ার পরও লেবানন না যেতে পারা এই দুইজন ভুক্তভোগী বুঝতে পারেন যে তারা প্রতারকের পাল্লায় পড়েছেন। 
এ বিষয়ে জানতে বিএমইটির বহির্গমন শাখার প্রধান আবদুল হাই সাহেবের সাথে দেখা করতে, একাধিক দিন তার অফিসে যেয়ে তার অফিস সহকারীর মাধ্যমে দেখা করতে চাইলে ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সাথে দেখা করেননি। বহির্গমন শাখার পরিচালক তাজিম উর রহমানের সাথে সকাল ১১ টার দিকে দেখা করতে চাইলে তিনি সিকিউরিটি গার্ডের মাধ্যমে সাংবাদিকদের ৩টা পর্যন্ত সাড়ে চার ঘন্টা অপেক্ষা করতে বলেন।
পরবর্তীতে একাধিকবার তার মুঠোফোনে ফোন দেওয়ার পরেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ বিষয়ে সহকারী পরিচালক সালেক সাহেবের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান ওয়ান স্টপ সার্ভিসে যাত্রী নিজে আসেন,এখানে সমস্ত দায়িত্ব যাত্রীর এখানে ভিসা সত্যায়িত না হলে সমস্যা নাই। 
এখন প্রশ্ন হলো যেখানে মন্ত্রণালয় ও দূতাবাসের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে সত্যায়িত ভিসা,সঠিক জব কন্টাক লেটার সহ দূতাবাসের নিকট থেকে নিশ্চিত হওয়া ছাড়া বহির্গমন ছাড়পত্র না দেওয়ার জন্য সেখানে কিভাবে এ ধরনের অসত্যায়িত ভিসা,ও জব কন্টাক্ট পেপারে যাত্রীদের বহির্গমন ছাড়পত্র দেয়া হয় তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। একই সাথে বহির্গমন ছাড়পত্র পাওয়ার পরও লেবানন না যেতে পারা সাধারণ মানুষের এভাবে প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি বিএমইটি কতটুকু দায় এড়াতে পারে সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায় এই দালাল চক্রের কোনরকম রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স না থাকায় তাদেরকে আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রেও দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় এই দালাল চক্র ক্ষেত্র বিশেষে সৌদি আরবে ওমরাহ হজ্বের ভিসা দিয়ে ওমরা করানোর পরপরই যাত্রীদেরকে সড়ক পথে লেবাননে পাচার করছে। 
এছাড়া শ্রীলঙ্কা নেপাল রুট ব্যবহার করেও তারা লেবাননে মানব পাচার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আরো জানা যায় অসাধু প্রতারক দালাল চক্রের অন্যতম মাধ্যম হলো বিমানবন্দরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারী।যাদের সহযোগিতায় ভুয়া ভিসায় বাংলাদেশ থেকে লেবাননে মানব প্রচার করছে এই লাইসেন্সবিহীন দালাল চক্র। এ কারণে লাইসেন্সধারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 
এ বিষয়ে বিএম ইটির মহাপরিচালক, মন্ত্রণালয় ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি এজেন্সি মালিক বলেন আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি এই সকল দালাল চক্রের কাছে। সাধারণ মানুষের সাথে তারা প্রতারণা করছে,সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি আমরাও। অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে যাত্রীদেরকে তারা নিজেদের কাছে টেনে নেয়।পরবর্তীতে ভুয়া ভিসার মাধ্যমে বডি কন্টাক্টে লেবানন পাঠানোর চেষ্টা করে। যে সকল ক্ষেত্রে তারা সফল হয় সে সকল ক্ষেত্রে লেবাননে যাওয়ার পরে অনেক যাত্রী কোন কাজ না পেয়ে জেল খাটতে বাধ্য হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু নিয়োগকর্তাকে ম্যানেজ করে কাজ দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও নিয়োগকর্তারা বিরক্ত হন।এদিকে দালালদের এভাবে অবৈধভাবে লেবননে শ্রমিক পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে সে দেশের প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট মহল চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানা যায়।
বিষয়টি নিয়ে লেবানন দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আনোয়ার সাহেবের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান একটি প্রক্রিয়া মেইন্টেন করে ভিসাটা হয়, যিনি নিয়োগকারী তিনি দূতাবাসে আসেন এখানে এসে কর্মী ও নিয়োগ কারীর মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয় উভয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিয়ে। যেটা দূতাবাস সত্যায়িত করে ফাইলিং করে একটা চূড়ান্ত তালিকা বি এম ই টি তে পাঠায় এবং দূতাবাসের সত্যায়িত কপিগুলো আপলোড করে বিএমইটির সফটওয়্যারে পাঠানোর মাধ্যমে বিএমইটি সেগুলো দেখতে পারে এবং সেই তালিকা অনুযায়ী বিএমইটি ছাড়পত্র প্রদান করে থাকে। 
আমাদের কাছে অন্তর মিয়া এবং মুসা মিয়া নামে যে দুইজন প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ এনেছেন সেখানে দূতাবাস তাদের ভিসা সত্যায়িত করেনি, বাংলাদেশ প্রান্তে কোন না কোন ভাবে এটাকে জাল করা হয়েছে বলে তিনি জানান। দূতাবাস কর্মকর্তা আরো জানান কাতার থেকে যাত্রী দুজনকে ফোন দিয়ে লেবানন এম্বেসির থেকে ফোন দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয় বলে যাত্রীদের। তিনি আরো জানান একটি কুচক্রী মহল সুকৌশলে লেবাননের শ্রমবাজার নষ্ট হওয়ার পায়তারা করছে।রিক্রুটিং এজেন্সি লাইসেন্স ব্যতীত দালাল চক্রের সাথে কোন রকম লেনদেন না করলে সাধারণ মানুষ প্রতারিত হবে না বলে তিনি জানান। 
এই দালাল চক্রের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিরীহ মানুষের মধ্যে একটি ভীতির সঞ্চার হয়েছে যেখানে রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে সঠিক কাগজপত্র সহ ভিসা সরবরাহ করা হলেও সাধারণ মানুষ আতঙ্কে লেবানন যেতে অনীহা প্রকাশ করছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শ্রমবাজার সম্প্রসারিত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে সেখানে লেবাননের মতো একটি চলমান শ্রমবাজার কিছু অসাধু কুচক্রী দালাল প্রতারক চক্রের কারণে এভাবে হুমকির মুখে পড়লে তা দেশের রেমিটেন্স খাতের স্বাভাবিক গতিকে কিছুটা বিপর্যস্ত করে ফেলতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সকলের অভিমত। তাই এখনই লাইসেন্স বিহীন এ সকল দালাল চক্র ও তাদের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে সঠিক আইনানুগ ব্যবস্থা না নিলে লেবাননের শ্রমবাজার অচিরেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সকলের আশঙ্কা।

 

 

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!