মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২

নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা চান ১৩ দল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: জুলাই ২৪, ২০২৫, ১১:৩৪ এএম

নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা চান ১৩ দল

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশের ১৩টি রাজনৈতিক দল। শুধু তারিখ ঘোষণা নয়,নির্বাচনের আগে সরকারকে নিরপেক্ষতা প্রমাণ,সব দলের প্রতি সমান আচরণ এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবি জানান দলগুলোর নেতারা। ২৩ জুলাই বুধবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৩টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে দলগুলোর পক্ষ থেকে এসব বিষয় উত্থাপন করা হয়।এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে একই ভেন্যুতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একমত হয় দলগুলো। ওই বৈঠকে কেবল চারটি দলকে আমন্ত্রণ জানানোয় গতকালের বৈঠকে অংশ নেওয়া ১৩টি রাজনৈতিক দলের নেতারা অভিন্ন সুরে সরকারের সমালোচনা করেন। তারা বলেন, পক্ষপাতমূলক আচরণ করে সরকার রাজনৈতিক বিভেদ বাড়িয়ে দিচ্ছে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী দলগুলো নিয়মিতভাবে সর্বদলীয় সভার আয়োজনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া নিশ্চিতের ওপর গুরুত্বারোপ করে। এ ছাড়া সচিবালয়ে ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনাটিও আলোচনায় আসে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজনৈতিক নেতারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের প্রচেষ্টার ঘাটতি রয়েছে।
বৈঠকে নেতারা জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর উপলক্ষে নেওয়া ঐক্য প্রচেষ্টার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, পরাজিত শক্তি আবারও সক্রিয় হয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। প্রধান উপদেষ্টা তাদের বক্তব্য শুনে মতপার্থক্য ও প্রতিদ্ব›িদ্বতা সত্বেও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যকে আরও দৃশ্যমান করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছরে আমাদের আয়োজন ছিল সব রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে নিয়ে অতীতকে স্মরণ করা। সে জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম। এতে করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের মধ্যে ঐক্যটা দৃশ্যমান হতো। কিন্তু এক বছর যেতে না যেতেই পরাজিত শক্তির নানা ষড়যন্ত্রের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
গতকালের বৈঠকের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সব দল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও গণ-ঐক্য অটুট রাখার বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টাকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। নেতারা সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে এবং ফ্যাসিবাদ প্রতিহত করতে নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সর্বদলীয় সভা আয়োজনের অনুরোধ জানিয়েছেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে ছিলেন- গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, বাসদের বজলুর রশীদ ফিরোজ, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স,নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর,এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, ১২ দলীয় জোটের শাহাদাত হোসেন সেলিম, খেলাফত মজলিসের ড. আহমদ আবদুল কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জেএসডির তানিয়া রব, গণফোরামের ড. মিজানুর রহমান এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন। বৈঠক শেষে নেতারা সাংবাদিকদের কাছে বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তারা অভিযোগ করেন, জাতীয় নাগরিক পার্টিকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে সরকার বৈষম্য সৃষ্টি করছে, যা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করছে এবং রাজনৈতিক বিভাজনকে উসকে দিচ্ছে।১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, এনসিপি সরকারি প্রটোকলে প্রচার চালাচ্ছে, এটা দৃষ্টিকটু। আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী ৫ আগস্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়েছি।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন,এই সরকার বিপদে পড়লেই রাজনৈতিক দলগুলোকে ডাকে। এনসিপি এখনও নিবন্ধন পায়নি,অথচ ব্যাপক প্রটোকল দেওয়া হচ্ছে-এটা বৈষম্য। সরকার নিরপেক্ষতা হারালে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, দেশ দিন দিন অরাজকতার দিকে যাচ্ছে,কারণ সরকার দুর্বল, নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ। অবাধ নির্বাচনের জন্য নিয়মিত সংলাপ ও পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. রেদোয়ান আহমেদ বলেন, সরকারের বিভিন্ন আচরণে পক্ষপাত দেখা যাচ্ছে। সব রাজনৈতিক দল প্রচারণায় সমান সুযোগ পাচ্ছে না। এনসিপিকে প্রটোকল দিয়ে সরকার বাকিদের প্রতি বৈষম্য করছে।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, সরকার এনসিপির প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। সব রাজনৈতিক দল এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। পক্ষপাতিত্ব বজায় থাকলে সরকারের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। একই সুরে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন,বিচার সংস্কার ও নির্বাচনের দায়িত্ব সরকারের। অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা দরকার। তাহলে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরবে। সরকারকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের প্রতি সমান আচরণ করতে হবে। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ এবং বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের আহ্বান জানান গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকি।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু সরকারের দায়ের বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্যের কারণে ফ্যাসিবাদ সুযোগ নিচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলের বিভেদের পেছনে সরকারের দায় রয়েছে। নির্বাচনের আগে নিয়মিত সংলাপ দরকার। সংস্কার ও নির্বাচন ঠিকভাবে হবে কিনা,এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণ বন্ধ করতে হবে।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!