শনিবার, ০৪ অক্টোবর, ২০২৫, ১৮ আশ্বিন ১৪৩২

বাজারে মুরগির চেয়ে মরিচ-বেগুনের দাম বেশি

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৫, ১২:৫৯ পিএম

বাজারে মুরগির চেয়ে মরিচ-বেগুনের দাম বেশি

রাজধানীর বাজারগুলোতে মুরগির চেয়ে কাচা মরিচের দাম বেশী।এক মাসের ব্যবধানে বেশির ভাগ সবজির দর কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি উত্তাপ কাঁচামরিচে। মাস খানেকের ব্যবধানে মরিচের দর বেড়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। গোল বেগুনেও যেন লেগেছে আগুন! কেজিতে সবজিটির দাম বেড়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। তবে এক মাসের ব্যবধানে অন্য নিত্যপণ্যের দামে তেমন হেরফের দেখা যায়নি। 
সবজির খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমনিতেই বর্ষার সময় সবজির উৎপাদন ও জোগান কম থাকে। এর মধ্যে দুই-তিন দিন ভারি বৃষ্টি হয়েছে। ফলে ক্ষেতে পানি জমে আছে। এ কারণে উৎপাদন এলাকা থেকে বাজারে সবজি কম আসছে। 
আড়তদাররা জানান, তারা কমিশনে সবজির ব্যবসা করেন। ফলে দাম কম-বেশির পেছনে তাদের ভূমিকা নেই। দাম নির্ভর করে সরবরাহের ওপর। তবে বিভিন্ন উৎসব কিংবা বৃষ্টির অজুহাতে বাজারে যেভাবে দর বাড়ে, তা অযৌক্তিক। দাম স্বাভাবিক রাখতে পাহাড়ি অঞ্চলে সবজি চাষ করে সরবরাহ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন আড়তদাররা। 
ভোক্তাদের অভিযোগ,ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে দাম বাড়ান। সরকারের নজরদারি না থাকলে তারা সুযোগ পেয়ে যান। ব্যবসায়ীরা একবার জিনিসপত্রের দাম বাড়ালে আর কমাতে চান না। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।
রাজধানীর তেজকুনিপাড়া থেকে ৮০ টাকায় ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কেনার পর মামুন মোল্লা বলেন, বাজারে সবজি বলেন আর মরিচ– কোনো কিছুরই তো অভাব দেখলাম না। কিন্তু বৃষ্টির দোহাই দিয়ে ব্যবসায়ীরা যেভাবে ডাকাতি করছে, তাতে আমার মতো নিম্ন শ্রেণির লোকের বিপদ বাড়ছে। তাঁর অভিযোগ, বাজারে সরকারের দুর্বল নজরদারির কারণে জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা সত্যি ভোক্তার পকেট কাটছেন, নাকি আসলেই বাজারে সবজির সরবরাহ কম– এর প্রমাণ পাওয়া যাবে এক মাস আগের সবজির দরে চোখ রাখলে। গত ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি লম্বা বেগুন ৬০ থেকে ১০০ টাকা, গোল বেগুন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১২০, বরবটি ৮০ থেকে ১০০, করলা ৮০ থেকে ১০০, পটোল ৬০ থেকে ৭০, ধুন্দল ও ঝিঙা ৬০ থেকে ৮০, ঢ্যাঁড়শ ৬০ থেকে ৮০, কাঁকরোল ৭০ থেকে ১০০ টাকা এবং চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। এ ছাড়া কাঁচামরিচ মানভেদে ১৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি পিস লাউ ৫০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও চায়না গাজর ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।  
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাতিরপুল, মোহাম্মদপুর টাউন হল ও তেজকুনিপাড়ার খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব ধরনের সবজির দর এক মাসের তুলনায় ১০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ৭০ থেকে ৮০ টাকার নিচে তেমন কোনো সবজি নেই। 
এসব বাজারে গতকাল কাঁচামরিচের কেজি বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা দরে। একইভাবে চড়া দেখা গেছে গোলবেগুনের দামে, প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। এই দর ব্রয়লার মুরগির চেয়ে অন্তত ৪০ টাকা বেশি। খুচরা পর্যায়ে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে। বাজারে এখন লম্বা বেগুন ৮০ থেকে ১২০, করলা ১০০ থেকে ১২০, পটোল ৭০ থেকে ৮০, ঢ্যাঁড়শ ৭০ থেকে ৯০, টমেটো ১৪০ থেকে ১৫০, চায়না গাজর ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি চিচিঙ্গা, ঝিঙে ও ধুন্দলের কেজি কিনতে ক্রেতার খরচ হবে কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। 
খুচরা বাজারে সবজির দাম চড়লেও ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে পাইকারি বাজারে। রাজধানীর অন্যতম বড় আড়ত কারওয়ান বাজার। এই বাজার থেকে কিনলে সব ধরনের সবজির কেজিতে ক্রেতার ২০ থেকে ৩০ টাকা সাশ্রয় হয়।   
পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারে এত ব্যবধান কেন জানতে চাইলে হাতিরপুল কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. অপু সমকালকে বলেন, ‘পূজা ও বৃষ্টির কারণে সবজির দাম কিছুটা বেশি। আমরা কারওয়ান বাজার থেকে পাইকারি সবজি কিনে আনি। সেখানে সকালে এক দাম, বিকেলে আরেক দাম। আমরা সাধারণত সকালেই সবজি কিনে আনি।’ এই ব্যবসায়ীর ভাষ্য, বৃষ্টি হলে সব সময় কাঁচামরিচের দাম বাড়ে। এখন দেশে কাঁচামরিচের উৎপাদন খুব কম। বলতে গেলে ভারতের মরিচের ওপর পুরো বাজার নির্ভর করে। পূজার কারণে ভারত থেকে মরিচ কম আসায় বাজারে এর প্রভাব পড়ছে।
সরবরাহ বাড়াতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে সবজির ফলন খুব কম হয়। বৃষ্টি হলে জমিতে পানি জমে। এতে গাছ মরে যায়। গ্রামে মানুষ ঘরবাড়ির আঙিনায় ধুন্দল, ঝিঙেসহ কিছু সবজি গাছ লাগিয়ে নিজেদের চাহিদা মেটায়। শহরেও এখন ছাদ বা বারান্দায় অনেকে সবজি গাছ লাগিয়ে কিছুটা হলেও চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেন। 
তিনি বলেন, নিচু জমির কারণে বৃষ্টি হলে পানি জমে উৎপাদন ব্যাহত হয়। তবে বর্ষা মৌসুমে দেশের উঁচু জমি তথা পাহাড়ি এলাকায় পতিত জমিতে শাকসবজি লাগানোর ব্যবস্থা করলে সবজির সরবরাহ বাড়বে। এ ব্যাপারে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও সাবেক সচিব এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, নানা অজুহাতে প্রতি বছরই এ সময় জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। একটা চক্র সব সময় বাজার অস্থিতিশীল করে রাখে। তাদের রুখতে সরকারের নজরদারি বাড়ানো উচিত। তিনি বলেন, সবজি যেন তিন-চার হাতবদল না হতে পারে, সে জন্য সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সবজি এনে শহরে বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য ঢাকার ৩০০ ফিটে ‘কৃষকের বাজার’ হতে যাচ্ছে। সেখানে ন্যায্য দামে সবজি কেনা যাবে।সুত্র-সমকাল

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!