শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের ৬০ শতাংশ রোগীই জানেন না তাদের ডায়াবেটিস

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪, ০৯:৪৯ এএম

দেশের ৬০ শতাংশ রোগীই জানেন না তাদের ডায়াবেটিস


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: দেশের ৬০ শতাংশ রোগীই জানেন না তাদের নীরব ঘাতক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। শহর থেকে  গ্রামের প্রতিটি পরিবারে এখন অন্তত একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। দেশের প্রতি পাঁচজনের একজন রোগটি বয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ রোগী জানেন না, তাদের ডায়াবেটিস। অন্যান্য জটিলতা নিয়ে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়ে জানতে পারেন এ রোগে আক্রান্তের তথ্য। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা ও বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির (বাডাস) সেন্টার ফর গেøাবাল হেলথ রিসার্চের সমীক্ষায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে ২৮ ফেব্রæয়ারি আজ বুধবার বাডাসের ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও জাতীয় ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য‘ডায়াবেটিস প্রতিরোধের এখনই সময়’।

ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (আইডিএফ) বরাত দিয়ে বাডাস জানিয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তার মধ্যে প্রায় অর্ধেক নারী। তাদের মধ্যে আবার অর্ধেক মানুষ জানেন না তার ডায়াবেটিস। এ ছাড়া বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের প্রতি ১০০ জনের ২৬ জন নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। তাদের মধ্যে আবার ৬৫ শতাংশ নারী পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারী ও গর্ভস্থ শিশুদের পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তের আশঙ্কা বেশি। পরিকল্পিত গর্ভধারণ ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
তাদের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, শারীরিক পরিশ্রম না করলে, নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে, স্বাভাবিকের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে, অতিরিক্ত ফাস্টফুড ও চর্বিযুক্ত খাবার খেলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তি রোগটি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে পক্ষাঘাত, হৃদরোগ, পায়ে পচনশীল ক্ষত, অন্ধত্ব ও কিডনি-সংক্রান্ত জটিলতার মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। আশার দিক হলো, নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন ও চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সম্পর্কে দেশের মানুষকে জানাতে পারলে এবং সাধারণ মানুষ ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে পারলে রোগটি অনেকাংশে প্রতিরোধ সম্ভব।
বাডাসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রæত বাড়ছে। গ্রামেও এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বারডেমে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন। আমরা সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, অপর্যাপ্ত শরীরচর্চা এবং ফাস্টফুড নির্ভর খাদ্যাভ্যাসসহ অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের কারণে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মানুষের জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস এবং জিনগত কারণসহ অনেক কারণ ডায়াবেটিস রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি আমরা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করি, তাহলে ৭৫ শতাংশ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে পারি। ২৫ শতাংশ রোগী স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে আমাদের সচেতনতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন নিয়ে ভাবনা:

১) ইনসুলিন শুধু সুগার নিয়ন্ত্রণই করে না

ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে রক্তে সুগারের মাত্রা ঠিকঠাক করতে প্রয়োজন হয় ইনসুলিনের। তবে শুধু এটাই ইনসুলিনের একমাত্র কাজ নয়। একই সঙ্গে লিভার ও পেশির টিস্যুতে গ্লুকোজ জমা করা, পরে সময়ের জন্য অ্যাডিপোজ টিস্যুতে ফ্যাট সঞ্চয় এবং কোষের অ্যামিনো অ্যাসিডকে বৃদ্ধির কাজ করে ইনসুলিন।


২) ইনসুলিন প্রতিরোধী কোষ

অনেকের ক্ষেত্রেই শরীর ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্ট বা ইনসুলিন প্রতিরোধী হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত আমাদের শরীর ইনসুলিনে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। অনেকের ক্ষেত্রে জন্ম থেকে, অনেকের আবার স্থূলতা বা অস্বাস্থ্যকর খাবারের জন্যও এই অবস্থা তৈরি হতে পারে।

৩) অতিরিক্ত ইনসুলিন ভালো নয়

ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে মানুষকে শুধু ইনসুলিন নিতেই দেখেছেন তো? আদতে শুধু ইনসুলিন কম উৎপন্ন হলেই না, বরং বেশি উৎপন্ন হলেও শারীরিক অসুস্থতা তৈরি হয়।

৪) পেশি বৃদ্ধির জন্য ইনসুলিন নেন অনেকেই

মানুষ, বিশেষ করে বডিবিল্ডাররা পেশিকে ফুলে-ফেঁপে বাড়িয়ে তোলার জন্য অনেক সময় ইনসুলিন নিয়ে থাকেন। এতে করে হজম ক্ষমতাও বাড়তে থাকে। তবে পরিমাণটা মাত্রা ছাড়ালে সেটা শরীরের জন্য ক্ষতিকরও হয়ে পড়ে।

৫)ইনসুলিন ভালো থাকে মাটিতেও

সাধারণত আমরা ইনসুলিনকে ফ্রিজের ভেতরেই রেখে দিই। তবে আপনার কাছে যদি ফ্রিজ না থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে খাটের নিচে বা মাটির কলসির ভেতরেও রাখা যায়। যেসব স্থানে উষ্ণতা একটু কম সেখানেও ইনসুলিন রেখে দিতে পারেন।

৬)চামড়ার দিকে নজর রাখতে হবে

ইনসুলিনের জন্য সিরিঞ্জ বারবার ত্বকের একই জায়গায় দিলে সেখানে ফোসকা পড়তে পারে, স্থানটি পুরু বা পাতলা হয়ে যেতে পারে। এজন্য প্রতি ছয় মাস অন্তর আপনার ইনসুলিন প্রয়োগের স্থান ঠিক আছে কি না, সেটা পরীক্ষা করতে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

৭) ইনসুলিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ইনসুলিন সবসময় ভালো কিছুই বয়ে আনে না। সঙ্গে নিয়ে আসে ওজন বৃদ্ধি, ত্বকের সমস্যা, ত্বকের প্রদাহ, অ্যালার্জি ও হাইপোগøাইসোমিয়ার মতো ব্যাপারগুলো। আর যদি গøুকাজের মাত্রা অনেক বেশি কমে যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে ডোজ ঠিক করে নিন।

৮) ইনসুলিন কেন খাওয়া যায় না?
অনেকেই ভাবেন, ইনসুলিন তো পিলের মতোও খেয়ে ফেলা যেত। তাহলে ইনজেকশনেই কেন? মূলত, ইনসুলিন পাকস্থলীতে পৌঁছলে সেটা আপনার শরীর ব্যবহার করার আগেই ভেঙে যাবে পুরোপুরিভাবে। এজন্যই সেটাকে পেটে নয়, সরাসরি চর্বিতে প্রয়োগ করতে হয়।

৯)ইনসুলিনের ব্যথা

অনেকেই ইনসুলিন দেওয়ার সময় ব্যথা পান, অনেকে কম পান। ইনসুলিনের সুঁইটা ভালো কোম্পানির দেখে কিনুন। প্রয়োগে ভুল হচ্ছে কিনা সেটাও দেখুন। পেনফিল ব্যবহার করলে ১-২ বার ব্যবহারের পর সূঁচ বদলান।

১০)সবার জন্য সব ইনসুলিন নয়

ইনসুলিন কিন্তু গৎবাঁধা সবার জন্য সব রকমেরটা দেওয়া ঠিক নয়। কারণ একেকজনের শরীর একেকরকমভাবে ইনসুলিন দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেলে চিকিৎসককে জানান। চিকিৎসকও অনেক সময় ট্রায়াল করে দেখতে বলেন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সচেতনতার বিকল্প নেই। শারিরীক পরিশ্রম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!