লাইফস্টাইল ডেস্ক: আধ-পাকা বা পাকা পেঁপে সাধারণত মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে। এমন উজ্জ্বল কমলা রঙের পেঁপে থাকলে তা না খেয়ে থাকা মুশকিল। গ্রীষ্ম-বর্ষা বা শীত, যে মৌসুমই হোক না কেন, পাকা পেঁপের স্বাদই অন্যরকম হয়ে থাকে। কেউ কেউ আবার খাদ্যতালিকার নিয়মিত অংশ করে ফেলেন এই পেঁপেকে।
পেঁপের রকমারি উপকারিতার বিষয় সবার জানা থাকায় এটি নিয়মিত খাওয়া হয়। খেয়াল করলে দেখবেন, পেঁপে কাটার সময় এর বীজগুলো ফেলে দেয়া হয়। কিন্তু জানেন কি, এর বীজের স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এ ব্যাপারে হিন্দুস্তান টাইমস একটি প্রতিবেদনে পেঁপে বীজের স্বাস্থ্য উপকারিতা তুলে ধরেছে। সেসব তাহলে জেনে নেয়া যাক-
পেঁপে বীজ কি সত্যিই স্বাস্থ্যকর: স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বিধি চাওলা বলেন, সাধারণত পেঁপে বীজ ফেলে দেয়া হয় বা উপেক্ষা করা হয়। তবে এসব অত্যন্ত পুষ্টিকর,এতে ফাইবার,স্বাস্থ্যকর চর্বি ও প্রোটিন রয়েছে। পাশাপাশি জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনওখনিজ উপাদান রয়েছে। এসব অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, বিশেষ করে পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড, যা স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়তা করতে পারে।
১. ওজন কমাতে সহযোগী পেঁপে বীজ: আপনি যদি স্বাস্থ্য কমানোর চেষ্টা করেন,তাহলে পেঁপে বীজ খাদ্যতালিকার অংশ করতে পারেন। বীজগুলো খাদ্যতালিকার ফাইবারের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা হজমে সহায়তা করে। এসব পেট ফাঁপা রোধ করে এবং নিয়মিত মলত্যাগের গতি বৃদ্ধি করে পাচনতন্ত্রকে সুষ্ঠুভাবে সচল রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া পেঁপের বীজে থাকা ফাইবার আপনাকে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা বোধ করতে সহায়তা করতে পারে। এতে লোভনীয় খাবার প্রতিরোধ করা ও ক্যালোরি গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁপের বীজ খাওয়া হলে ফাইবারযুক্ত খাবার স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার সঙ্গে সম্পর্কিত। এ জন্য স্বাস্থ্য কমাতে পেঁপের বীজ খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা বুদ্ধিমানের কাজ।
২. অন্ত্রের স্বাস্থ্যে অবদান: অন্ত্রের স্বাস্থ্যের কথা উল্লেখ না করে স্বাস্থ্যগত উপকারিতা নিয়ে কিছু বলা যায় না। অন্ত্রে অসংখ্য অণুজীব রয়েছে, যা সামগ্রিক সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেঁপের বীজে কার্পেইন নামক সক্রিয় যৌগ থাকে, যা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ও অন্ত্রের কৃমি দূর করার ক্ষমতার জন্য পরিচিত। অন্ত্রের সামগ্রিক উন্নতি করে এবং সুষম মাইক্রোবায়োম তৈরি করে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য কমাতে ও হজমের সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে এই বীজ।
৩. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ: হৃদরোগের স্বাস্থ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাবারের সময় কী খাওয়া হলো, তা কোলেস্টেরলের মাত্রার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। এ ক্ষেত্রে পেঁপের বীজ অত্যন্ত উপকারী। এই বীজ ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমাতে সহায়তা করে এবং ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বজায় রাখতে ভূমিকা রাখে।এছাড়া ওলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ হওয়ায় বীজগুলো লিপিড প্রোফাইলকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। খাদ্যতালিকায় এক টেবিল চামচ পেঁপের বীজ অন্তর্ভুক্ত করা স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বজায় রাখার সহজ কার্যকর উপায় হতে পারে।
৪. ক্যানসার প্রতিরোধী: প্রচলিত রয়েছে একটি আপেল ডাক্তারকে দূরে রাখে। তবে ক্যানসার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে পেঁপে বীজ শক্তিশালী প্রতিদ্ব›দ্বী হতে পারে। এসবে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে, যা কোষের ক্ষতি করতে পারে। জার্নাল অব ক্যানসার মেটাস্ট্যাসিস অ্যান্ড ট্রিটমেন্টে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে,পেঁপে বীজের পলিফেনল শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার থেকে রক্ষা করতে পারে। তাদের প্রতিরক্ষামূলক বৈশিষ্টগুলো কাজে লাগানোর জন্য পাঁচ থেকে ছয়টি বীজ পিষে খাবারে বা রসে মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন।
৫. প্রাকৃতিকভাবে প্রদাহ প্রশমিত করে: দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহে ভুগলে যেমন-আর্থ্রাইটিস, জয়েন্টে ব্যথা বা বাত ব্যথা কিংবা অন্য কোনো প্রদাহজনিত রোগ থাকলে পেঁপে বীজ প্রাকৃতিক প্রতিকার হতে পারে। এই বীজ ভিটামিন সি এবং অন্যান্য প্রদাহবিরোধী যৌগ সমৃদ্ধ। পুষ্টি উপাদানগুলো প্রদাহ কমাতে এবং জয়েন্টের স্বাস্থ্য ভালো করতে কাজ করে। এ জন্য শুধু ওষুধের ওপর নির্ভর না করে খাদ্যতালিকায় পেঁপে বীজ অন্তর্ভুক্ত করলে প্রদাহ রোধে উপকার পেতে পারেন।
৬. নারীদের মাসিক চক্রের সমস্যায়: অনেক নারীদের ক্ষেত্রে মাসিক চক্রের সমস্যা অস্বস্তি ও ব্যথার কারণ হতে পারে। এ সমস্যায় পেঁপের বীজ প্রাকৃতিক সমাধান হতে পারে। পেঁপে বীজ ক্যারোটিনয়েড সমৃদ্ধ, যা ইস্ট্রোজেন উৎপাদনকে প্রভাবিত করতে পারে। ফলে বীজগুলো নারীদের মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে। তবে উপাখ্যানমূলক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব মাসিকের ব্যথা কমাতে পারে। যদিও এ ক্ষেত্রে প্রমাণভিত্তিক পরিপূরক ও বিকল্প চিকিৎসার ওপর অধিকতর বৈজ্ঞানিক গবেষণার প্রয়োজন।
পেঁপে বীজ খাওয়ার সঠিক উপায়: পেঁপে বীজের অসংখ্য উপকারিতা জানা থাকলেও হয়তো ভাবছেন, কীভাবে খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবেন। এটি বহুমুখী বলা যায়। এই বীজ শুকিয়ে পিষে সালাদে ছিটিয়ে দিতে পারেন, চাইলে স্মুদিদে মিশিয়ে দিতে পারেন বা দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। অপ্রত্যাশিত স্বাস্থ্যকর প্রভাবের জন্য সস বা ডিপের সঙ্গে মিশিয়েও খাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। তবে পরিমিত পরিমাণ খেতে হবে, দিনে এক টেবিল চামচ পরিমাণ খাওয়া ভালো। অতিরিক্ত খেলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। সংগৃহীত ছবি

ডেইলি খবরের সর্বশেষ নিউজ পেতে Google News অনুসরণ করুন।
আপনার মতামত লিখুন :