বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

চাঁদাবাজির অভিযোগে জাপার বাবলার বিরুদ্ধে দুই মামলা,সম্পদের পাহাড়

আইন-অপরাধ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২৪, ১০:৫১ এএম

চাঁদাবাজির অভিযোগে জাপার বাবলার বিরুদ্ধে দুই মামলা,সম্পদের পাহাড়

তরুণ বয়সে যা ছিল বড় হয়ে তাই-ই আছেন। জীবন চলার পথে রাজনীতিতে এসে একাধিকবার এমপি হলেও চাঁদাবাজই রয়ে গেছেন বাবলা। এবার চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকা-৪ কদমতলী-শ্যামপুর আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ তার অনুসারী কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলার বাদী শ্যামপুর থানাধীন আমীর টাওয়ারের কর্ণধার অহিদুজ্জামান বাবুল ওরফে বাবুল মিয়া ও মাসুদ পারভেজ। গত ২২ আগস্ট মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলা করেন তারা।  মামলার অন্য আসামিরা হলেন শেখ মাসুকুর রহমান, সাইদুর রহমান নান্নু, শামসুজ্জামান কাজল, মো কফিল উদ্দিন, মো সাহিদুল্লাহ, মাহবুবুর রহমান, মিসেস সালমা হোসেন ও শাকিল রহমান। মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, আসামিরা ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বাদীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায়, মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন করে নেওয়ার মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত। আদালত মামলা দুটি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
বাবলার অতীত কর্মকান্ড ও ইতিহাস ঘেটে জানা গেছে ৮০ দশকে তিনি ছিনতাই ছিসকে চাদাবাজী করতে করতে বড় হয়েছেন। এর মধ্যে এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসলে রাজনৈতিক নেতায় পরিণত হন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে জোট-মহাজোটের ব্যানারে একাধিকবার এমপি নির্বাচিত হয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেন।
৫ বছরে গুলশান-উত্তরায় চারটি ফ্ল্যাট, বাড়ির মালিক বাবলা:
পাঁচ বছরের ব্যবধানে গুলশানে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন ঢাকা-৪ আসনের সাবেক সাংসদ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ফ্ল্যাটগুলোর দাম আড়াই কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া উত্তরায় পাঁচ কাঠা জমির ওপর পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করেছেন তিনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মিত্র জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। হলফনামা অনুযায়ী, পাঁচ বছর আগে তাঁর স্থাবর সম্পদ ছিল ১ কোটি ১৩ লাখ ৭২ হাজার ২৯৮ টাকার। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৭২ হাজার ২৯৮ টাকা। এর মধ্যে গুলশানে একটি ফ্ল্যাটের দাম ১ কোটি টাকা। স্ত্রীর নামেও ১ কোটি টাকার ফ্ল্যাট আছে গুলশানে। নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে গুলশানে থাকা আরেকটি ফ্ল্যাটের দাম ৫২ লাখ টাকা।
উত্তরায় সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার পাঁচতলা ভবনের দাম ৮৯ লাখ ২২ হাজার ২৯৮ টাকা। শ্যামপুরে তাঁর অকৃষি জমি রয়েছে ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার। সেখানে ২০টি দোকানের দাম ২০ লাখ টাকা। গোপীবাগে তাঁর পৈতৃক সূত্রে যৌথ মালিকানায় পাওয়া চারতলা একটি বাড়ি রয়েছে। তবে এ বাড়িটি ২০১৪ সালের হলফনামায় তাঁর নিজের নামে দেখানো হয়েছিল। বাড়ির মূল্য দেওয়া হয়নি।
পাঁচ বছর আগে সৈয়দ আবু হোসেনর অস্থাবর সম্পদ ছিল ৩০ লাখ ৪২ হাজার ৫৬০ টাকার। এখন অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮ হাজার ৫৩১ টাকার। এর মধ্যে তাঁর হাতে নগদ রয়েছে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া স্ত্রীর কাছে নগদ রয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা। নির্ভরশীলের নামে রয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর জমা আছে ২৮ লাখ ৭৮ হাজার ৫৩১ টাকা। তাঁর স্ত্রীর কাছে জমা আছে ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৫২৬ টাকা। নির্ভরশীলের নামে জমা আছে ২ লাখ ২ হাজার ২১৬ টাকা।
৩৭ লাখ ১০ হাজার টাকা দামের তিনটি মোটরগাড়ি রয়েছে জাপার এই নেতার। তাঁর স্ত্রীর নামে রয়েছে ১৫ লাখ টাকা দামের একটি মোটরগাড়ি। পাঁচ বছর আগে আবু হোসেনের গাড়ি ছিল দুটি। আর স্ত্রীর নামে কোনো গাড়ি ছিল না। হলফনামায় দেখা যায়, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার সোনা আছে ৩০ হাজার টাকার। তাঁর স্ত্রীর কাছে আছে ৫০ ভরি। তবে দাম উল্লেখ নেই। নির্ভরশীলদের নামে রয়েছে আরও ২৫ ভরি সোনা। আবু হোসেনের কাছে ইলেকট্রনিকস সামগ্রী রয়েছে ২৫ হাজার টাকার। তাঁর স্ত্রীর রয়েছে ৭৫ হাজার টাকার। এ ছাড়া আসবাব রয়েছে ৪০ হাজার টাকার। তাঁর স্ত্রীর রয়েছে ৬০ হাজার টাকার।
বাবলার বার্ষিক আয় বেড়েছে তিন গুণের বেশি। আগে তাঁর বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকানভাড়া থেকে বার্ষিক আয় ছিল ৬ লাখ ২৪ হাজার ১৮৬ টাকা। এখন এ খাত থেকে তাঁর আয় ২০ লাখ ৩৪ হাজার ৮ টাকা। বর্তমানে তাঁর স্ত্রী এবং নির্ভরশীল ব্যক্তিদের বার্ষিক আয় ১১ লাখ ৪৬ হাজার ৮০০ টাকা। পাঁচ বছর আগে বাবলার ঋণ ছিল ৫৯ লাখ ৯৯ হাজার ২০৭ টাকা। এখন ঋণ ৩ কোটি ২৪ লাখ ৩১ হাজার ৮১ টাকা। এলাকার নানা পেশার লোকজনের সাথে আলাপ কওে জানা গেছে রাজনীতিতে নীতি-আদর্শের বালাই ছিল না তার। মাদক ব্যবসা ও চাদাবাজিই ছিল তার এমপির লাইসেন্স।

 

 


 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!