মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী সুলতান আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ,স্কুল শিক্ষক পিতার নামেই গড়েছেন ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা

আইন-অপরাধ ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৮:১৭ পিএম

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী সুলতান আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ,স্কুল শিক্ষক পিতার নামেই গড়েছেন ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা

পাবনার আলাউদ্দিন খাঁন, পেশায় ছিলেন একজন শিক্ষক। পাবনার অজপাড়াগায়ের স্কুল থেকে অবসরের পর হঠাৎ রাজধানী ঢাকায় আলিশান অফিসে কনসট্রাকশন কোম্পানী শুরু করলেন।ছেলের বউ হলেন এমডি। চমৎকার ব্যবসা বটে, কোন আলাদিনের চেরাগের ছোয়ায় মিললো এই ব্যবসার মুলধন ? কিংবা টাকার উৎস কি ? এ প্রশ্নের মেলেনি উত্তর। যেখানে তিনি পেশায় ছিলেন একজন শিক্ষক। মাসের বেতন ছিলো ১৭৫০০ টাকা। তাহলে বর্তমান ব্যবসার প্রায় শতকোটি টাকার উৎস কি ? খোজ নিতে গিয়ে কেঁেচা খুরতে সাপ বেড়িয়ে আসছে। এটা স্বৈরাচারের বড় দোসর-দুর্নীতিবাজের আত্মকাহিনী।
সুত্র জানায় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার প্রত্যন্ত চর কুডুলিয়া গ্রামের একটি এমপিওভুক্ত স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষকের পদে থেকেই চাকরি জীবন শেষ করেন এই নতুন ব্যবসায়ি আলাউদ্দিন। তবে চাকরি জীবন শেষ করেই সোনার হরিণ হাতে পেয়ে যান সামান্য বেতনের এই শিক্ষক। রাজধানীতে গড়ে তুলেছেন কোটি টাকার রিয়েল এস্টেট ও নির্মাণ সংস্থা কোম্পানি।
আলাউদ্দিন খাঁনের প্রতিষ্ঠানের নাম এনএন সার্ভিস এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ভবন নির্মাণ ছাড়াও এই কোম্পানির রয়েছে ঠিকাদারি, মালামাল সরবরাহ ও আইটি’র ব্যবসা। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের মদদপূষ্টে ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই কোম্পানি। এর চেয়ারম্যান হন সেই স্কুল শিক্ষক আলাউদ্দিন খাঁন নিজেই। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার পুত্রবধূ ফালগুনি নুপুর। যিনি পেশায় একজন গৃহিনী।প্রশ্ন উঠেছে, একজন সামান্য বেতনের স্কুল শিক্ষক ও গৃহিনী মিলে কিভাবে এতো বড় একটি কোম্পানি গড়ে তুললেন।নেপথ্যে টাকাওয়ালা কে? অর্থেও যোগানদাতা কে? এসবের তত্য-তালাশ করে
জানা যায়, দেশের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ হলেন এই আলাউদ্দিনের চেরাগবাতি। তিনি হলেন স্কুল মাস্টারের ছেলে। তিনিই আসলে তার অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়েই স্কুল শিক্ষক বাবা ও গৃহিনী স্ত্রীর নামে শত কোটি টাকার কোম্পানি গড়ে তুলেছেন। সরকারী চাকরিজীবী হওয়ায় নিজের নামে কোম্পানি করতে না পেরে এই পথ অবলম্বন করেছেন তিনি। যেখানে তিনি রয়েছেন একজন উপদেষ্টা হিসেবে। উপদেষ্টা হলেও পুরো কোম্পানি পরিচালনা করেন সুলতান নিজেই।
কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক জাহিদুল ইসলাম জানান, কোম্পানির চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদের পিতা আলাউদ্দিন খাঁন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার স্ত্রী ফালগুনি নুপুর। আর সুলতান মাহমুদ কোম্পানির একজন বেতনভুক্ত উপদেষ্টা। যা সরকারি চাকরি বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সরকারের অনুমোদন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে এ ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকা সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এমনকি এটি দুর্নীতির প্রমাণ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক আলামত হিসেবেও ধরা যেতে পারে।
প্রতিষ্ঠানের সুত্রগুলো জানায়, কম্পানির নামে বর্তমানে গাজীপুরে ১০ কাঠার উপরে ১০তলা দুটি ভবন, টঙ্গীতে ১০ কাঠা জমিতেও ১০ তলা একটি ভবন, সাভারে ৫ কাঠা জমিতে ৮তলা আরেকটি ভবনের কাজ নিজ অর্থায়নে চলমান। এছাড়া সম্প্রতি সাভারে ৫ কাঠার ওপর ৮তলা একটি ভবনের কাজ শেষ করেছে। এসব কাজ বাস্তবায়নে অন্তত শত কোটি টাকার মূলধন প্রয়োজন।
বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক এবং একজন গৃহিণী হিসেবে কোম্পানি গঠনে যত টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা তাদের ব্যক্তিগত আয় ও সম্পদের সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক জাহিদুল ইসলাম জানান, তারা জমির মালিকের সাথে অর্ধেক শেয়ারের শর্তে ভবনগুলো নির্মাণ করছেন। তার যুক্তি আগাম ফ্ল্যাট বিক্রির টাকায় তারা কাজ সম্পন্ন করেন।
তবে সংশ্লিষ্টরা জানান, এটা কোনভাবেই সম্ভব না। হয়তো ফ্ল্যাট বিক্রির টাকায় কিছু কাজ করা যায় কিন্তু সেটা দিয়ে পুরো কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।
প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ঠিকানা বনানী ১৫ নম্বর রোডের ডি বøকের ৩৭ নম্বর বাসার দ্বিতীয় তলায়। সুত্র জানায় এই বাড়িটি নির্মাণে তারা পরামর্শকের ভূমিকায় ছিলেন। আর বর্তমানে প্রায় ২২শ’ স্কয়ার ফিটের যে ফ্ল্যাটটিতে তাদের অফিস সেটি ভাড়ায় নেয়া। কিন্তু ভবনের দাড়োয়ান জানিয়েছেন, এটি সুলতান সাহেবের কেনা ফ্ল্যাট। যেটির দাম অন্তত ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা। সুলতান সাহেব সপ্তাহের অন্তত ৩-৪ দিন দুপুরের পর এখানে আসেন।
মহাব্যবস্থাপক জানান, কোম্পানির চেয়ারম্যান বয়োস্ক হওয়ায় অফিসে আসেন না। আর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসে এক বা দুইবার অফিস করেন। তবে সুলতান সাহেব প্রায়ই আসেন। তিনি কোম্পানির প্রকল্পগুলোর নকশা তৈরী করে অর্থ নেন এবং উপদেষ্টা হিসেবে সম্মানী নেন। তবে কতটাকা সম্মানী নেন তা জানাননি।
কোম্পানির গঠন এবং পরিচালনার ক্ষেত্রের যে অর্থের প্রয়োজন সেটি কোথায় পেয়েছেন তার সঠিক জবাব কোম্পানির কারোর কাছেই নাই।
এদিকে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার প্রত্যন্ত চর কুডুলিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া সুলতান মাহমুদ ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরিজীবন শুরু করেন। ২০১১ সালে মাগুরা এবং ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রæয়ারী জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক বিভাগে নির্বাহী প্রকৌশলীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারী থেকে ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি  টঙ্গীতে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তিনি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। এরপর জামালপুর,রাঙামাটি। যেখানেই দায়িত্বপালন করেছেন সেখানেই দুনীতি ও অনিয়মের রাজত্ব গড়ে তুলেছেন এই প্রকৌশলী। আর এক্ষেত্রে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদকে। তিনি নিজেও ওই সংগঠনের সদস্য ছিলেন।
গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এই কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসে। বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। বর্তমানে এই কর্মকর্তা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন।অভিযোগের বিষয়ে জানতে সুলতান মাহমুদের সাথে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এদিকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সুত্রগুলো জানায় মাত্র কয়েক বছরেই সুলতান আঙ্গুল ফুরে কলাগাছ হযেছেন। দুর্নীতির অর্থেই তিনি অবৈধ সম্পদ অর্জন করে এখন তার হিসাব মেলাতে পারছেনন্ াযা করেছেন তা পতিত আওয়ামী লীগের শাসনামলেই এটাই সত্য।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!