দেশের এস আলম গ্রæপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম) ও তার তিন ভাইয়ের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক সাব্বির ফয়েজ এ আদেশ দেন।২০১৭ সালে এস আলম গ্রæপ ইসলামী ব্যাংক দখলে নেয়। এরপর গ্রুপটি ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে এক লাখ কোটি টাকার বেশি অর্থ তুলে নেয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হারায় গ্রæপটি। বর্তমানে এসব ঋণ একে একে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিলামে তুলে আনা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ইসলামী ব্যাংক বড় ধরনের সংকটে পড়েছে।
চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রæপের কর্ণধার সাইফুল আলম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখলের পর গ্রুপটি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকও দখল করে। সব মিলিয়ে তারা ৮টি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এদিকে আলোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রæপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও পরিবারের নামে সিঙ্গাপুরে থাকা ৬৪টি ব্যাংক হিসাব ও ১০টি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়া এ আদেশ দেন।
অবরুদ্ধ সম্পদের মধ্যে সিঙ্গাপুরে সাইফুল আলমের ৪০টি ব্যাংক হিসাব,তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের ছয়টি ব্যাংক হিসাব এবং সিঙ্গাপুরে তাদের নামে থাকা আটটি কোম্পানির শেয়ার, ছেলে আশরাফুল আলমের সাতটি ব্যাংক হিসাব ও একটি কোম্পানির শেয়ার, ছেলে আহসানুল আলমের সাতটি ব্যাংক হিসাব ও একটি কোম্পানির শেয়ার, ছেলে আসাদুল আলম মাহির একটি ব্যাংক হিসাব, তার শ্যালক আহমেদ বেলালের দুটি ব্যাংক হিসাব ও বোন মাইমুনা খানমের একটি ব্যাংক হিসাব রয়েছে।
এর আগে গত বছরের ৭ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ তার পরিবারের ১২ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। গত ১৬ জানুয়ারি এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজার টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন একই আদালত। গত ৩ ফেব্রæয়ারি ৩৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ১৭৫ বিঘা সম্পদ জব্দের আদেশ দেন আদালত। গত ১২ ফেব্রæয়ারি ৪৩৭ কোটি ৮৫ লাখ ২ হাজার ২৭৪টি শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব শেয়ারের মূল্য ৫ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। গত ২৩ ফেব্রæয়ারি তাদের ৮ হাজার ১৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা মূল্যের শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত।
গত ১০ মার্চ এস আলমের এক হাজার ছয় বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। গত ৯ এপ্রিল তার ৯০ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে। একই দিন আদালত তার ঘনিষ্ঠজনের নামে থাকা ৩৭৪টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। গত ১৭ এপ্রিল এস আলমের ১ হাজার ৩৬০টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত। এসব হিসাবে ২ হাজার ৬১৯ কোটি ৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা রয়েছে। গত ২৩ এপ্রিল তার ৪০৭ কোটি টাকা মূল্যের ১৫৯ একর জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। গত ২৭ এপ্রিল সাইফুল আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের নামে থাকা ৫৫৯ কোটি ৪৮ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ১ হাজার ১৪ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত।
এ ছাড়া গত ১৭ জুন তাদের ১৮০ কোটি ৬১ লাখ টাকা মূল্যের ২০০ একর জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। গত ২৪ জুন জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের নামে ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে থাকা ১৮ কোম্পানির শেয়ার ও জার্সিতে থাকা ছয়টি ট্রাস্ট কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়। গত ১০ জুলাই সাইফুল আলমের নামে থাকা ৫৩টি ব্যাংক হিসাবের ১১৩ কোটি নয় লাখ ৮২ হাজার ৮৬৮ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :