শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩ আশ্বিন ১৪৩২

সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন

আইন-অপরাধ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ১০:১৭ পিএম

সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন

ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ জারি আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সিনিয়র চট্টগ্রাম মহানগর স্পেশাল জজ (ভারপ্রাপ্ত) মো.আবদুর রহমানের আদালতে এ আবেদন করা হয়।  
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসাইন। তিনি বলেন,সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ জারি আবেদন দুদকের পক্ষ থেকে আজকে (বৃহস্পতিবার) করা হয়েছে। আদালত আবেদনটি ২১ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য ধার্য করেছেন।
প্রায় ১২৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং তার স্ত্রী ও ইউসিবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমিলা জামানসহ অর্ধশত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলার তদন্ত চলমান। সাইফুজ্জামান ও রুকমিলার নামে যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে-৯টিসহ অন্যান্য দেশেও বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/জমিসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ করার আদেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের আদালত। এছাড়া গত ৫ মার্চ অপর এক আদেশে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের (অবরুদ্ধ) আদেশ দেন আদালত। এসব ব্যাংক হিসাবে তাদের ৫ কোটি ২৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা জমা রয়েছে।
অপর আদেশে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাইফুজ্জামানের ১০২ কোটি টাকার শেয়ার ও ৯৫৭ বিঘা জমি জব্দেরও আদেশ দেন আদালত। আর ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন আদালত।
এদিকে কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে নামসর্বস্ব কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) ঢাকার কারওয়ান বাজার শাখা থেকে ২১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী,তার স্ত্রী ও ব্যাংকটির এমডিসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপ-সহকারী পরিচালক মো. রুবেল হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যতম শহর দুবাইয়ে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা পাচারের মাধ্যমে সেখানে ২২৬টি ফ্ল্যাট কিনেছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। পাশাপাশি সেখানকার বিভিন্ন ব্যবসায়ও তিনি বিনিয়োগ করেছেন। এ ঘটনায় তদন্ত শেষে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মানিলন্ডারিং আইনে সাইফুজ্জামান ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ৪ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি এ তথ্য জানায়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুবাইয়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ পাচারের প্রমাণ মিলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান শেষে সাইফুজ্জামান চৌধুরী (৫৬) ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামানসহ (৪৬) অজ্ঞাতনামা ৫-৭ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় সিআইডি বাদী হয়ে অর্থ পাচার আইনে মামলা করেছে।
২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এছাড়া তিনি ইউনাইটেড ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। শিল্পপ্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তিনবারের সভাপতি ছিলেন সাইফুজ্জামান। সিআইডি জানায়, ২০১৬ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল বারশা সাউথ থার্ড, বারশা সাউথ, বারশা সাউথ ফোর্থ, থানিয়া ফোর্থ, থানিয়া ফিফথ, জাদ্দাফ, হাইবা সিক্সথ, গালফ কমার্শিয়াল, খাইরান, ইয়ালায়েস ২, বুর্জ খলিফা, জাবাল আলি, ওয়ার্ল্ড আইল্যান্ড, জাবিল সেকেন্ড, মার্শা দুবাই, মে’আইসেম দ্য ফার্স্ট, নাদ আল শেবা ফার্স্ট, ওয়াদি আল সাফা-৩ সহ বিভিন্ন স্থানে ২২৬টি ফ্ল্যাট কিনেছেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। এসব ফ্ল্যাটের দাম ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ১৬৮ দিরহাম। এছাড়া স্ত্রী রুকমীলা জামানের নামে দুবাইয়ের আল বারশা সাউথ থার্ড এলাকায় এলাকায় ‘কিউ গার্ডেন্স বুটিক রেসিডেন্স-ব্লক বি’ নামে দুটি সম্পত্তির তথ্য পাওয়া যায়। এর দাম ২২ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯ দিরহাম। এ ছাড়া সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে দুবাই ইসলামী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংকের দুটি হিসাবসহ চারটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া যায়। এসব ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন অঙ্কের দিরহাম ও মার্কিন ডলারের লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। তৎকালীন সময়ের মুদ্রার বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩১১ কোটি ২৬ লাখ ৬ হাজার ৭৯৫ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় জানা যায়, বিদেশে কোম্পানি নিবন্ধন, বিনিয়োগ ও সম্পত্তি অর্জনের জন্য সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অনুকূলে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। এভাবে তিনি বিদেশে সম্পত্তি ক্রয়, কোম্পানি নিবন্ধন এবং ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা করার মাধ্যমে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাচার করেছেন; যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!