সোমবার, ০৫ মে, ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

চাঁদাদাবির সাথে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি,কলাবাগান থানার ওসিসহ বরখাস্ত ৩

আইন-অপরাধ ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ৫, ২০২৫, ০৭:৪১ পিএম

চাঁদাদাবির সাথে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি,কলাবাগান থানার ওসিসহ বরখাস্ত ৩

চাঁদাবাজি ও মামলায় ফাঁসানোর হুমকির অভিযোগে রাজধানীর কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুজ্জামান,উপপরিদর্শক (এসআই) বেলাল উদ্দিন ও এসআই আবু হুরায়রা জিহানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রোববার তাদের সাময়িক বরখাস্ত করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। আওয়ামী লীগ কর্মী আবদুল ওয়াদুদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
আবদুল ওয়াদুদ ২ মে ডিএমপি কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন-গত ২৯ এপ্রিল সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে রাতে সোনারগাঁ রোডে তার বাসায় কলাবাগান থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে লুটপাট ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি করেন। অভিযোগে মোক্তারুজ্জামান ও বেলালের নাম উল্লেখ করে এ ঘটনার সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন আবদুল ওয়াদুদ।
অভিযোগের বিষয়ে সোমবার কলাবাগান থানার বরখাস্ত ওসি মোক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় আবদুল ওয়াদুদ ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক ছিলেন। সম্প্রতি তিনি বাসায় আসার খবর পেয়ে ২৯ এপ্রিল রাতে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা তার বাসা ঘেরাও করেন। ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সেক্রেটারি মো. মাঈনুল সংবাদ দেয়। পরে টহল পার্টিকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধারের দিন তিনি কোনো কিছু হারিয়েছে বা ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ করেননি। তার দুইদিন পর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর অনেক পরে ৯৯৯থেকে কলাবাগান থানায় ফোন আসে। তবে অন্য কোনো থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসছে কিনা বলতে পারি না।’এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, গত ২৯ এপ্রিল কলাবাগানের একটি বাসায় ‘মবের’ ঘটনা ঘটেছিল। সেটা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
আবদুল ওয়াদুদ তার অভিযোগে বলেন, ২৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে এসআই বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ও অন্তত ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী তার বাসায় জোর করে ঢুকে পড়েন। তার ম্যানেজার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে শাহবাগ ও নিউমার্কেট থানার টহল দল দ্রæত ঘটনাস্থলে আসে। তবে কলাবাগান থানার ওসি (মোক্তারুজ্জামান) নিজে উপস্থিত থেকে অন্য থানার পুলিশের দলকে চলে যেতে বলেন। এ সময় লাল মিয়া নামে এক ভাড়াটে ও নাইটগার্ড লুৎফরকে নিজেদের গাড়িতে তুলতে নির্দেশ দেন ওসি। পুরো ঘটনার ভিডিও ও সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ রয়েছে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বাসার তৃতীয় তলার দরজা ভাঙার সময় তিনি ওসিকে ফোন করে সহায়তা চাইলে তাকে (আবদুল ওয়াদুদ) থানায় যেতে বলা হয়। তিনি দরজা খুললে পুলিশ সদস্যরা তাকে ঘরের ভেতরে টেনে নেন। তার কাছে অস্ত্র ও টাকা কোথায় আছে, তা জানতে চাওয়া হয়। একপর্যায়ে মান্নান নামে একজন তাকে বলেন, এই মুহূর্তে এক কোটি টাকা দিলে থানায় যেতে হবে না। পরে দেনদরবার করে তিনি বাধ্য হয়ে দুই লাখ টাকা দেন। ব্যাংক খুললে বাকি টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেন। রাতভর অভিযানে পুলিশ সদস্যরা তার বাসা থেকে ল্যাপটপ, সিসিটিভির হার্ডডিস্ক, কম্পিউটারসহ বেশ কিছু মালামাল নিয়ে যান। পরে ওসি একটি ল্যাপটপ ফেরত দেন। বাকি কোনো কিছুই তিনি ফেরত পাননি বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেছেন।
কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম বলেন, ওসি মোক্তারুজ্জামান রোববার সব বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেছেন। তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, একটি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডিএমপি সদরদপ্তর। এর প্রেক্ষিতে প্রথমে ওসি ও দুই এসআইকে প্রত্যাহার করে রমনা বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। পরে তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে। এ ছাড়া টাকা দাবির বিষয়ে মান্নান নামে যাকে পুলিশ সদস্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি পুলিশ সদস্য না। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!