ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সস্ত্রীক দেশ ছেড়েছেন বলে জানা গেছে। ঈদের আগে আমেরিকায় গেছেন তিনি। ওই দেশেও বিভিন্ন সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। সেই সঙ্গে বিনিয়োগ করেছেন বিভিন্ন খাতে। এছাড়া সেখানে তাদের ছোট ছেলে আসিফ মাহাদীন পড়াশোনাও করেন। সুত্র জানায় আছাদুজ্জামান মিয়া ২১ জুন দেশে ফিরে আসার কথা রযেছে।
সম্প্রতি আছাদুজ্জামান মিয়া ও তার পরিবারের বিপুল পরিমাণ সম্পদের খবর প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে। এরপরই দেশজুড়ে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ঈদুল আজহার ছুটি শেষে তার সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করতে পারে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, পুলিশের সাবেক এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্ত্রীর নামে ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাট এবং মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ৬৭ শতক জমি রয়েছে। এই তিন জেলায় তার পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে আরও ১৬৬ শতক জমি।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার জহুরুল হক জানান, আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পদের তথ্য প্রকাশের খবর তার নজরে আসেনি। যদি সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের খোঁজ পাওয়া যায়, তাহলে দুদক ব্যবস্থা নেবে।
সংস্থটির আরেক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ছুটির পর তারা অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেবেন। পুলিশের উচ্চপদে আসীনদের এমন কর্মকান্ডে বাহিনীটিতে শুদ্ধি অভিযান জরুরি হয়ে পড়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এদিকে সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য দেখা যায় আছাদুজ্জামান মিয়া ও তার পরিবারের সম্পদের পাহাড়ের। অনেক সম্পদের নথিও এসেছে আমাদের হাতে। সরজমিন যার সত্যতা মিলেছে। পূর্বাচলের নিউ টাউনের ১ নম্বর সেক্টরের ৪০৬/বি রোড। এখানে ১০ কাঠা জমি রয়েছে আছাদুজ্জামানের নামে। পাশের একটি প্লটের কেয়ারটেকার হালিম বলেন, এটা এক পুলিশ কর্মকর্তার জমি বলে আমরা জানি। এখানে তিনি মাঝেমধ্যে এসে ঘুরে দেখে যান। তবে তাদের নামে কোনো সাইনবোর্ড দেয়া হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা এবং জমি কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত মো. শামীম বলেন, পূর্বাচলের এই প্লটের প্রতি কাঠা জমির মূল্য এক কোটি টাকারও বেশি। পূর্বাচলের সেক্টর ৪, রোড ১০৮-এ ৫৩ নম্বর প্লটটি আছাদুজ্জামানের স্ত্রীর নামে ছিল। ৫ কাঠার এই প্লটটি বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। জমিকেনা বেচায় যুক্ত স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, প্লটটি শুনেছি তারা বিক্রি করে দিয়েছেন। আগে এখানে তারা আসলেও এখন আসেন না।
আফতাবনগর ৩ নম্বর সেক্টরের, এইচ বøকের ৮ নম্বর রোড দিয়ে প্রবেশ করলে স্থানীয় মসজিদের সামনে বাউন্ডারি দেয়া ৩৬ নম্বর প্লটে ২১ কাঠা জমি রয়েছে। এই প্লটটিও আছাদুজ্জামান মিয়ার। এই প্লটটি ৮ নম্বর রোডের সবচেয়ে বড় প্লট। এখানে প্রতিটি প্লট সর্বোচ্চ ৫ কাঠা ও তার সামান্য কিছু বেশি। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন জানান, আছাদুজ্জামান মিয়া পরিবারসহ মাঝে মধ্যে এসে প্লট দেখে যান। বাউন্ডারি দিলেও কোনো সাইনবোর্ড দেননি।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল বøকের লেন-১ এ ১৬৬ এবং ১৬৭ নম্বরে ১০ কাঠার উপর ৬ তলাবিশিষ্ট আলিশান বাড়িটি আছাদুজ্জামানের স্ত্রীর নামে। স্কুলের কেয়ারটেকার জানান, বাড়িটি বর্তমানে ভাড়া দেয়া। যা স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাড়িটির বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। নিকুঞ্জ-১ এর ৮/এ রোডের ৬ নম্বর বাড়িটি আছাদুজ্জামানের ছোট ছেলে আসিফ মাহাদীনের নামে। ভবনের পাশের একজন বাসিন্দা নাম-পরিচয় গোপন রেখে বলেন, সম্প্রতি তারা বাসার নেমপ্লেট খুলে রেখেছেন। কেন রেখেছেন জানি না। বাড়িটির মূল্য ১০ কোটি টাকার বেশি।
সিদ্ধেশ্বরী রূপায়ন স্বপ্ন নিলয় ৫৫/১-এর বহুতল ভবনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৩ নম্বর ভবনে ৩ হাজার ৮শ’ থেকে ৪ হাজার স্কয়ার বর্গফিটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে আছাদুজ্জামানের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকার নামে। বাড়ির এক নিরাপত্তা প্রহরী বলেন, আয়েশা সিদ্দিকা বর্তমানে এই বাসায় নেই। ফ্ল্যাটটি তার নামে রয়েছে। ইস্কাটন গার্ডেন ১৩/এ প্রিয়নীড়ে আছাদুজ্জামানের স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ভবনের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা প্রহরী বলেন, ফ্ল্যাটটি বর্তমানে ফাঁকা পড়ে আছে। কেউ থাকেন না। এ সময় তিনি ভবনের সকল ফ্ল্যাট মালিকদের নামের লিস্ট বের করে দেখান। এদিকে ধানমন্ডির ১২/এ সড়কের ৬৯ নম্বর বাড়ির বি/২/৫ ভবনে যোগাযোগ করে জানা যায় ভবনটিতে এককাঠা জমিসহ আছাদুজ্জামান মিয়ার পরিবারের সদস্যদের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ বিষয়ে ভবনের দায়িত্বে থাকা সাইদ বলেন, ৬ তলাবিশিষ্ট ভবনটিতে ২০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এখানে ফ্ল্যাটের মূল্য ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত। এই ভবনটি আছাদুজ্জামান মিয়া স্যারের বলে আমরা জানি। ভবনটি খালি পড়ে আছে। বর্তমানে সংস্কার কাজ চলছে।
অন্তত দু’টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে আছাদুজ্জামান ও তার পরিবারের সদস্যদের মালিকানার। আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে ঢাকা, ফরিদপুর ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জমির সন্ধান মিলেছে। ২০১৮ সালে তিনি রাজউক থেকে একটি প্লট বিশেষ কোটায় বরাদ্দ পান। অথচ রাজউকের নীতিমালা অনুযায়ী, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের প্লট বরাদ্দ পাওয়ার সুযোগ নেই। ঢাকার গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার চাঁদখোলা মৌজায় আফরোজা জামানের নামে ৪১ শতাংশ জমি রয়েছে। যা কেনা হয়েছে ২০১৭ সালে। একই মৌজায় একই বছরের ১৬ই নভেম্বর তার নামে কেনা হয় আরও ২৬ শতাংশ জমি। একই মৌজায় তার নামে ২০১৯ সালের ৫ই ফেব্রæয়ারি কেনা হয় আরও ৩৯ শতাংশ জমি। সুত্র জানায় আছাদুজ্জামান মিয়ার দেশে-বিদেশসহ অরও কোথায় কোথায় সম্পদ আছে তা নিয়ে চলছে অনুসন্ধান।
আপনার মতামত লিখুন :