শুক্রবার, ১০ মে, ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১

তুরস্কের বন্ধু থেকে শত্রু হলো ইসরায়েল

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মে ৯, ২০২৪, ১২:৫৮ পিএম

তুরস্কের বন্ধু থেকে শত্রু হলো ইসরায়েল


ইসরায়েল ও তুরস্কের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেয়েও তুরস্কের বন্ধু থেকে শত্রু হলো ইসরায়েল। ৭ অক্টোবর থেকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোয়ান ইসরায়েলের কঠোর সমালোচকদের একজন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এমনকি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে তিনি হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তুরস্ক মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের সদস্য। তবে হামাসের সমর্থন করা দেশটি আবার একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান মিত্র ইসরায়েলের কড়া সমালোচক। কিন্তু একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও সাম্প্রতিক দশকগুলোতে ইসরায়েল ও তুরস্কের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক প্রতিনিয়ত বৃদ্ধিই পেয়েছে। 
প্রথম মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে ১৯৪৯ সালে তুরস্ক ইসরায়েলি সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয়। পরবর্তী কয়েক দশক ধরে দেশ দুটির সম্পর্ক উত্থান-পতনের মধ্যদিয়ে এগিয়েছে। মনে করা হয় তুরস্ক-ইসরায়েল সম্পর্ক ১৯৯২ সালে তাদের সোনালি সময়ে প্রবেশ করে। এসময় ইসরায়েল তুরস্কের সঙ্গে ভালো সম্পর্ককে তার আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতা ভাঙার উপায় হিসেবে দেখছিলও। ৯০ এর দশক জুরে ইসরায়েল এবং তুরস্ক পরস্পরের মাঝে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বাড়িয়েছে। এসময় তুরস্ক ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য তার আকাশ সীমা খুলে দেয়। 
একে পার্টি ২০০২ সালে সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে, ক্ষমতায় আসেন এরদোয়ান । প্রথম কয়েক বছর দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা যথারীতি পূর্বের মতই চলেছে। তবে ধীরে ধীরে ইসরায়েলের উপর ক্ষুব্ধ হতে থাকেন এরদোয়ান। ২০১১ সাল থেকে তুরস্কে হামাসের একটি অফিস স্থাপনের অনুমতি দেয়ার মাধ্যমে এরদোয়ান এই গোষ্ঠীটিকে ফিলিস্তিনের মুক্তির জন্য লড়াই করা বৈধ সংগঠন হিসেবে দেখা শুরু করেন। 
পরবর্তীতে এরদোয়ান নিজেকে একজন ফিলিস্তিনি জনগণের রক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। তবে একই সঙ্গে ২০০২ সালে এরদোয়ান ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১.৪ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২২ সালে ৮.৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেন। তুরস্ক ইসরায়েলের বৃহত্তম ইস্পাত সরবরাহকারী এবং সিমেন্টের মত অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর উল্লেখযোগ্য সরবরাহকারী হয়ে উঠে।তবে ৭ অক্টোবর সকল দৃশ্যপট পাল্টে দেয়। ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামাসের হামলার পর তুরস্ক প্রথমে বেসামরিক লোকদের হত্যার নিন্দা জানায়। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে এরদোয়ান ইসরায়েলের দিকে তার সমালোচনা তীর ছোড়েন। তিনি ইসরায়েলকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং নেতানিয়াহুকে হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেন। অভ্যন্তরীণ চাপের মধ্যে তুর্কি সরকার এপ্রিলে ঘোষণা করে তারা ইস্পাত, লোহা, সিমেন্ট, বিমান চালনা, জ্বালানি, সার এবং আরো অনেক কিছুসহ ইসরায়েলে ৫৪ শ্রেণির পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এপ্রিলের শেষের দিকে এরদোয়ান ইস্তানবুলে হামাসের নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। 
ইসরায়েলের বিষয়ে এরদোয়ানের অবস্থানের আরো একটি কারণ রয়েছে। সেটি হলো সংঘাতের মধ্যস্থতা এবং বিরোধ পরবর্তী যে কোন মীমাংসা তৈরিতে মূল ভূমিকা পালন করার ইচ্ছা। 
সম্প্রতি ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য স্থগিত করেছে তুরস্ক। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে ইসরায়েল গাজায় বাধাহীন ও যথেষ্ট পরিমাণ ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত এ পদক্ষেপ বহাল থাকবে।
 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!