বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২

ডাকসু নির্বাচন আজ, নিরাপত্তার চাদরে উৎসবমুখর ক্যাম্পাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ১১:১৯ পিএম

ডাকসু নির্বাচন আজ, নিরাপত্তার চাদরে উৎসবমুখর ক্যাম্পাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচন আজ ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার। ক্যাম্পাস ও হলে নিজেদের নেতাদের বেছে নিতে ভোট দেবেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসাবে খ্যাত এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, যোগ্য ও ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কাজে যারা সক্রিয় তাদেরই ভোট দেবেন তারা। 
এদিকে, নির্বাচনের আগের দিন ফেসবুক পেজে সাইবার অ্যাটাকের দাবি করেছেন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। কাঙ্খিত ফলাফল না পেলে কেউ কেউ নির্বাচন ভন্ডুলের চেষ্টা করতে পারে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অপর এক ভিপি প্রার্থী। 
গতকাল সোমবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের অলি-গলি থেকে শুরু করে চায়ের দোকান, সবখানেই নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় মুখর ছিলেন শিক্ষার্থীরা। জাতীয় রাজনীতির চেয়ে ক্যাম্পাসের বিষয়গুলো মাথায় নিয়েই ভোট দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। জানিয়েছেন, ক্যাম্পাস ও হলে সক্রিয়দের বেছে নেবেন তারা। 
এবারের ডাকসু নির্বাচনের জয়-পরাজয় বড় ফ্যাক্টর হতে পারে নারী শিক্ষার্থীরা। নির্বাচনে মোট ভোটারের ৪৭ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী। নিরাপত্তা ও আবাসন সংকট নিরসন নিয়ে যাদের প্রতিশ্রæতি ভালো সেদিকেই এসব ভোট যেতে পারে বলে মনে করছেন নারী শিক্ষার্থীরা। সাইবার বুলিংয়ের জবাবও দিতে চান তারা।  
পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে বিরাজ করছে এক উৎসবমুখর পরিবেশ, যেখানে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে,নির্বিঘ্নে এবং স্বাধীনভাবে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ পাবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছে। প্রচার-প্রচারণা না থাকায় মাঠে নামেননি প্রার্থীরা। তারা এখন ব্যস্ত বিভিন্ন সমীকরণ মেলাতে। 
এরই মাঝে,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনে এসে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান অভিযোগ করেন, র্বাচনের আগের দিন সাইবার অ্যাটাকের শঙ্কা করেছিলাম। তার প্রমাণ সকালে দেখেছি, আমার আইডি ডিজেবল হয়ে গেছে।
তিনি বলেন,কোনোদিন কাউকে পেছন থেকে আঘাতের চেষ্টা করিনি। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়ে আমাদের আইডি ডিজেবল করা হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর সুস্থ রাজনীতি করতে গিয়ে অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে গিয়েছি। অন্যায়ের সঙ্গে আপস করিনি।
ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের বলতে চাই, যারা এ প্রোপাগান্ডা বেছে নিয়েছে, আপনারা ব্যালটের মধ্য দিয়ে এর জবাব দেবেন। সত্যের জয় সুনিশ্চিত। ঝড়-বৃষ্টি থাকলেও ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দিতে হবে। আপনার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে আপনার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করুন। যারা মানবাধিকার ও মত প্রকাশে বিশ্বাস করে না, তাদের ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দেবেন।
এদিকে, ক্যাম্পাসে ভোটের সমীকরণ মেলাতে কেউ কেউ আঁতাত করছেন বলে অভিযোগ করেন আরেক প্রার্থী। ছাত্র অধিকার সমর্থিত ভিপি প্রার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, যারা অতীতে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলেন, অধিকারভিত্তিক আন্দোলনে যাদের ভূমিকা ছিল এবং যারা অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থান-পরবর্তী লড়াই-সংগ্রামে ছিলেন তাদেরই শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন।
সব কিছু ছাপিয়ে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে বিরাজ করছে এক উৎসবমুখর পরিবেশ,যেখানে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নির্বিঘ্নে এবং স্বাধীনভাবে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করার সুযোগ পাবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করছে। সকাল আটটায় শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ চলবে বিকাল চারটা পর্যন্ত। গণনা সরাসরি দেখানো হবে কেন্দ্রের বাইরে এলইডি স্ক্রিনে। ভোটের সময় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। 
রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ডাকসু নির্বাচন ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সোমবার সকাল থেকে ভোটগ্রহণের দিনসহ পরের দিন বুধবার পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। টিএসসি মোড়ে তৈরি করা হয়েছে পুলিশ কন্ট্রোল রুম।
এবারের ডাকসু নির্বাচনটি শুধু একটি সাধারণ ছাত্র সংসদ নির্বাচন নয়; এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ফ্যাসিবাদের পতনের পর একটি অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের অধীনে আয়োজিত এই নির্বাচন যেন শিক্ষার্থীদের জন্য এক নতুন আস্থা ও আশার আলো নিয়ে এসেছে।
শিক্ষার্থীদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসতে বলেছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। সোমবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ে অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ ভিডিও বার্তা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য বলেন, ডাকসু নির্বাচন তোমরা চেয়েছ গভীরভাবে প্রত্যাশা করেছ; তোমাদের আগ্রহে এবং ব্যাপক চাহিদার ভিত্তিতে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করেছি। তোমাদের অনুষ্ঠান নির্ভয়ে তোমরা ভোট দিতে আসবা, আমরা তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি।
উপাচার্য বলেন,সারা দেশ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা শুভ কামনা জানাচ্ছেন। এখন একটি ভালো নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের উত্তরণেরপ্রক্রিয়াকে, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘদিন ধরে যে কাজ করছে, তাতে তোমরা তোমাদের ভূমিকা পালন করবে, সেটাই প্রত্যাশা করছি।
অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ভোটকেন্দ্রে আমাদের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া আছে। তারা নির্ভয়ে এসে ভোট দিতে পারবে। সারা দেশ তোমাদের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। সেই বিশ্বাসের প্রতিদান তোমরা দেবে।
এবারের ডাকসু নির্বাচনকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এবার অনেক কিছু আমরা করেছি, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আগে ঘটেনি। আমাদের ৮১০টি বুথ থাকবে। প্রায় ৪০ হাজার ভোটার। প্রথমবারের মতো আমরা হল থেকে বেরিয়ে এসে কেন্দ্রীয়ভাবে ৮টি কেন্দ্রে এ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছি। সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য সব রকম পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা, তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা; প্রশিক্ষিত ও নিবেদিতপ্রাণ পোলিং কর্মকর্তা।
ডাকসুতে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ভোট ১৮ হাজার ৯৫৯ ও ছাত্র ২০ হাজার ৯১৫ জন। এবার ডাকসু নির্বাচনে ২৮ পদের বিপরীতে লড়ছেন মোট ৪৭১ জন প্রার্থী। এর মধ্যে পুরুষ প্রার্থী ৪০৯ জন ও নারী প্রার্থী ৬২ জন।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!