সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩১ ভাদ্র ১৪৩২

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই’র অপব্যবহার ঠেকাতে বয়সসীমা নির্ধারণ জরুরি, বিপর্যয় হতে পারে

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২৫, ১০:১৩ পিএম

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এআই’র অপব্যবহার ঠেকাতে বয়সসীমা নির্ধারণ জরুরি, বিপর্যয় হতে পারে

বর্তমান বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) বিপ্লব চলবে। কত দ্রæত সময়ের মধ্যে জটিল সব কাজ শেষ করা যায় চারদিকে তার প্রতিযোগিতা চলছে। আর এসব কাজে ব্যবহার হচ্ছে চ্যাট জিপিটি, ডিপসিক, জেনিমি এবং গর্ক এর মতো এআই প্রযুক্তি। 
মুহূর্তের মধ্যে গাণিতিক সব জটিল সমাধান, ছবি আঁকা, আর্টিকেল তৈরি, কনটেন্ট তৈরি করাসহ আরও একাধিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে এআই প্রযুক্তি। অনেকে মনে করছেন এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানবজীবন হুমকির মুখে পড়বে। আবার অনেকে মনে করছেন এটি মানবজীবনে সৃজনশীলতা তৈরি করবে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মানুষের কাজকর্মের গতিপথ পাল্টে দেবে এটা জোর দিয়েই বলা যায়। এক্ষেত্রে এর সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করা শিখতে হবে। 
বিশ্বের অনেক দেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির অপব্যবহার ঠেকাতে নীতিমালা গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে চীন, তাদের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের নীতিমালা আরোপ করেছে। স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সীমিতভাবে এর ব্যবহার চালু করেছে। একই ধরনের নীতিমালা রয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাজ্যে। কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা আরোপ না করলে এটি মানবজীবনের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। 
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানবজীবনে কী ধরনের হুমকি তৈরি করতে পারে তা নিয়ে গবেষণা করেছেন ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির সামাজিক মনোবিজ্ঞানী রেগান গুরুং। তিনি তার গবেষণায় বলেন, ‘এআই এমন চিন্তাভাবনাকে উসকে দিতে পারে যা সঠিক নয় বা বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমস্যা হলো এটি বৃহৎ ভাষা মডেলগুলো মানুষের ভাষার প্রতিচ্ছবি হিসেবে কাজ করে, কিন্তু একইসঙ্গে তা শক্তিশালী করে তোলে। এটি ব্যবহারকারীদের এমন কিছু দেয় যা প্রোগ্রামটি মনে করে পরবর্তী বাক্য হিসেবে উপযুক্ত হবে। আর এখানেই সমস্যার শুরু।’
এআই কীভাবে শেখা বা স্মৃতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একজন শিক্ষার্থী যদি প্রতিটি অ্যাসাইনমেন্ট লেখার জন্য এআই’র ওপর নির্ভর করে, তাহলে সে তার বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে পারবে না। যদি সে এটা নিজে করে তাহলে অনেক কিছুই শেখার সুযোগ আছে। এছাড়া দৈনন্দিন কাজকর্মে এআই ব্যবহারের ফলে মানুষ অনেক সময় বুঝতেই পারে না, সে ঠিক কী করছে। এভাবে সচেতনতা কমে যেতে পারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার তরুণ প্রজন্মের জন্য ব্যাপক হুমকি হয়ে উঠতে পারে। যদি না এর সঠিক ব্যবহার করা হয়।বিষয়টি নিয়ে কথা হয় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলম হোসাইনের সঙ্গে। 
তিনি বলেন, ফেসবুকের ব্যবহারের ফলে আমরা বিশ্বের নানা প্রান্তের খবর মুহূর্তেই পেয়ে যাচ্ছি। আবার এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভুয়া নিউজও ছড়িয়ে পড়ছে। ঠিক একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন ক্লোনের মাধ্যমে মানুষ তেরি করল, তখন এটি নিয়ে একটি বিপর্যয় তৈরি হলো। কারণ একজন মানুষের মতো আরও একাধিক মানুষ তৈরি করা যাচ্ছে। এর ফলে প্রকৃত মানুষ চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ায় যুক্তরাষ্ট্র এই প্রকল্প বন্ধ করে দেয়। একইভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) যদি আমরা যথাযথ ব্যবহার করতে পারি তাহলে অপার সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যেত পারব। এক্ষেত্রে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। 
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রায় ২০ কোটি মানুষের দেশ। আমরা প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ মাছ এবং ফসল উৎপাদন করি। কিন্তু এসব কাজে যখন আমরা এআই ব্যবহার করব, তখন আমাদের অধিক পরিমাণ খরচ সাশ্রয়ী হবে। কারণ আমাদের দেশের অনেক কৃষক বুঝতে পারে না একটা জমিতে কী পরিমাণ সার অথবা কীটনাশক দেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মেশিন ল্যানিং বা এআইয়ের মাধ্যমে এর পরিমাণ নির্ধারণ করা সম্ভব। তেমনিভাবে আরও একাধিক ক্ষেত্র রয়েছে যেগুলোতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সহজেই কাজ করা যায়। আর এভাবেই আমরা বৈশ্বিক গেøাবালাইজেশনের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে পারি। 
তরুণ প্রজন্মের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার ঠেকাতে অধ্যাপক মো. আলম হোসাইন পরামর্শ দিয়ে বলেন, আইসিটি আইন থাকলেও অনেকে তা মানে না। সেক্ষেত্রে আইন দিয়ে অপরাধ ঠেকানো যায় না। এক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজন সচেতনতা। প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়সহ সামাজিকভাবে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ আমাদের তরুণ প্রজন্মই অপরাধ, দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং তাদের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব।
অধ্যাপক মো.আলম হোসাইন আরও বলেন,সামাজিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবেও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। যখন কোনো ভুয়া তথ্য বা ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে তখন রাষ্ট্রীয়ভাবে সেগুলো যাতে দ্রæত সরিয়ে ফেলা যায় তার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া তরুণ প্রজন্মকে সৃজনশীলতা এবং মেধার যথাযথ বিকাশে চ্যাট জিপিটি, জেনিমি কিংবা ডিপসিকের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহারের আগে তাদেরকে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে এবং শিখতে হবে। তা না হলে তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভুলগুলো ধরতে পারবে না। যেমন- যখন কোনো শিক্ষার্থী একটা বিষয়ে লেখার জন্য চ্যাট জিপিটির সহযোগিতা নেবে,তখন সে এর মধ্যে কী লেখা হয়েছে, বা অসঙ্গতির বিষয়গুলা ধরতে পারবে না। এছাড়া কোন বিষয়টি একজন শিক্ষার্থীর নিজের তৈরি করতে হবে এবং কোন বিষয়টির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহযোগিতা নিতে হবে তার পার্থক্য করার জন্য তাকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এআই ব্যবহার থেকে দূরে রাখতে হবে এবং পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকার পরই তাকে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে আসতে হবে। তবে এক্ষেত্রে পুরোপুরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বন্ধ না করে বরং শিক্ষার্থীদের শিক্ষার স্তর অনুযায়ী ব্যবহারের সুযোগ থাকতে হবে। কারণ তারা নির্দিষ্ট বয়সে উপনীত না হওয়ার আগে এর ব্যবহার করলে নিজের জ্ঞানের দক্ষতা পরিমাপ করতে পারবে না। এজন্য স্কুল পর্যায় পর্যন্ত এর ব্যবহার বন্ধ রাখা উচিত। পরবর্তীতে কলেজ পর্যায়ে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ব্যবহারের সুযোগ দেয়া উচিত। এরপর সে যখন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ করবে তখন তার জন্য এটা পুরোপুরিভাবে উন্মুক্ত করে দেয়া উচিত। সুত্র-২৪    

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!