স্যামসাংয়ের ৪৬ ইঞ্চির টিভি দু’বার পুড়েছে ভিতরে। ঘটনাটি রাজধানীর জিগাতলায়।ভুক্তভোগীর বাসায়। টিভিটি কিনেছিলেন জিগাতলার স্যামসং ডিলারের শোরুম থেকে। শতবার চেষ্টা করেও স্যামসংয়ের মিস্ত্রি পাওয়া যায়নি। অন্য মিস্ত্রি দেখালে দেখা যায় ভেততে পেপারসহ নানারকম জিনিষ পুড়ে গেছে।এমনি আরও অনেক অভিযোগের ঘটনা স্যামসং টিভি নিয়ে গ্রাহকেরা জানায়। জানা গেছে সিইউ ৮০০০ মডেলের ৬৫ ইঞ্চির টেলিভিশন ব্যবহার করেন মিরপুরের আনিস রহমান। কয়েক মাস ব্যবহারের মধ্যেই তিনি লক্ষ্য করেন, টিভির স্ক্রিনের নিচের দিকে কালো রঙের ছোপ ছোপ দাগ দেখা দিয়েছে। বিষয়টি তিনি কাস্টমার কেয়ারের হেল্প নম্বরে ফোন করে জানান। দুই সপ্তাহ পর সার্ভিস সেন্টারের একজন কর্মী তার বাসায় গিয়ে টেলিভিশনটি পরীক্ষা করেন এবং একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে জানান, সার্ভিস সেন্টার থেকে পরবর্তীতে যোগাযোগ করা হবে।কিন্তু দিন, সপ্তাহ, এমনকি মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো যোগাযোগ হয়নি।
আনিস রহমান পুনরায় হেল্প ডেস্কে ফোন করলে বলা হয়, সময় লাগবে। এভাবে দুই মাস পার হওয়ার পর তাকে জানানো হয়, তার টিভির মডেলটি বর্তমানে স্টকে নেই, তাই তারা টিভির পরিবর্তে টাকা ফেরত দিতে চায়। আনিস রহমান এতে সম্মতি দেন, যদিও জানানো হয় এতে তিন মাস সময় লাগবে।
তিন মাস পার হওয়ার পর তিনি আবার যোগাযোগ করলে বলা হয়, ‘তিন মাস ওয়ার্কিং ডে’ গণনা করে পরে জানানো হবে। এরপর চার মাস কেটে গেলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। বারবার ফোন করার পরও শুধু জানানো হয়, কনসার্ন ডিপার্টমেন্টকে জানানো হয়েছে।শুধু আনিস রহমান নন, স্যামসাং টিভির সার্ভিস নিয়ে শত শত গ্রাহকই এমন অভিযোগ তুলেছেন।অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করে তার সত্যতাও পাওয়া গেছে।
আনিস রহমান বলেন, `স্যামসাংয়ের মতো একটি জনপ্রিয় ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির যদি এ রকম সার্ভিস হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? আমি স্যামসাংয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।`
তিনি আরও বলেন, `এত দাম দিয়ে যদি এই সার্ভিস পেতে হয়, তাহলে অন্য ব্র্যান্ডই ভালো। দামেও কম, ফিচারেও বেশি, সার্ভিসও দ্রæত এবং আন্তরিক।`
ভোক্তাদের সঙ্গে এমন আচরণের কারণে কেউ কেউ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।আনিস রহমান জানান, তিনি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও কল রেকর্ড প্রস্তত রেখেছেন এবং দুই-এক দিনের মধ্যেই অভিযোগ দাখিল করবেন।এমন অভিযোগ এসেছে রাজধানীর মাটিকাটা ও ভাটারা এলাকার গ্রাহকদের কাছ থেকেও। তারা জানান, স্যামসাং টিভির স্ক্রিনে সমস্যা দেখা দেওয়ার পর কোম্পানির আফটার সেলস সার্ভিসে কোনো সন্তোষজনক সাড়া মেলেনি।ভাটারা এলাকার শাকিলা হায়দার বলেন, `টিভি কেনার পর স্ক্রিনে দাগ দেখা দেয়। সার্ভিস সেন্টারে যোগাযোগ করলে তারা কোনো কার্যকর উত্তর দেয়নি। একজন কর্মী এসে স্ক্রিন ঘষে পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন, কিন্তু পারেননি। আসলে স্যামসাংয়ের আফটার সেলস সার্ভিস খুবই বাজে।`মাটিকাটা এলাকার সেলিনা রহমান জানান, শখ করে স্যামসাং স্মার্ট টিভি কিনেছিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই স্ক্রিনে দাগ পড়ে। ওয়ারেন্টির মধ্যে কয়েকবার পরিষ্কার করা হলেও ওয়ারেন্টি শেষ হওয়ার পর তারা স্ক্রিন বদলানোর কথা বলেন, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তিনি বলেন, `স্যামসাং আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। ওয়ারেন্টি থাকাকালে শুধু পরিষ্কার করে দিয়েছে। মেয়াদ শেষে স্ক্রিন পরিবর্তনের কথা বলছে। দামও একই রেখেছে।`
একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে খুলনার হাজী মহসিন রোডের আলমগীর রহমানের কাছ থেকেও। তার টিভির স্ক্রিনে দাগ দেখা দিলে কয়েকবার পরিষ্কারের চেষ্টা করা হয়। পরে স্ক্রিন সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেলে তিনি আর টিভি ব্যবহার করেননি।সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন পেজেও স্যামসাং টিভি নিয়ে অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া যায়। একটি গ্রুপে ডা. মওদুদ আহমেদ রুমি লিখেছেন, `আমি আমার স্যামসাং টিভি নিয়ে যে ভোগান্তিতে পড়েছিলাম, এরপর কানে ধরেছি জীবনে এদের কোনো প্রোডাক্ট নেব না। থু...।`
জিয়া হক নামে আরেকজন লিখেছেন, `কাস্টমার সার্ভিস এদেশের মানুষ এখনো শিখলো না। কী যে জঘন্য অবস্থা! ভোক্তা অধিকারের ব্যাপারে সার্বজনীন সচেতনতা জরুরি এবং এটাই একমাত্র সমাধান।`স্যামসাং সার্ভিস সেন্টারে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও এ বিষয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, `ভোক্তারা যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতারিত হন, তাহলে অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।`
আপনার মতামত লিখুন :